বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ

বরিশালকে হারিয়ে তৃতীয়বারের মত চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা

প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২২:৫১

শেষ দুই বলে দরকার ৫ রান। ব্যাটে আছেন তৌহিদ। শেষ ওভারে শহীদুলের পঞ্চম বলটি ছক্কা মারতে গিয়ে স্কয়ার লেগে ক্যাচ তুলে দেন তৌহিদ। কিন্তু সীমানায় দাঁড়ানো তানভীর বলটা ধরেও ফেলে দিলেন। রান হলো দুই। পরে ১ বলে দরকার ৩ রান। কিন্তু শহীদুলের শেষ বলটা ৩০ গজই পার করাতে পারেননি তৌহিদ। নিতে পেরেছেন ১ রান। দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে রানআউট হন মুজিব। এতেই ১ রানে জিতে গেল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।

শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ফাইনাল ম্যাচে সাকিব আল হাসানের ফরচুন বরিশালকে মাত্র ১ রানে হারিয়ে তৃতীয়বারের মত বিপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইমরুল কায়েসের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ২০১৫, ২০১৯ সালের পর ২০২২ বিপিএল চ্যাম্পিয়ন হলো কুমিল্লা। ইমরুল কায়েসের অধীনে দ্বিতীয় শিরোপা জিতল দলটি।

এদিন কুমিল্লার দেওয়া ১৫২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামে বরিশাল। দলের হয়ে ওপেনিংয়ে নামেন মুনিম শাহরিয়ার ও ক্রিস গেইল। কুমিল্লার হয়ে বল হাতে আসেন মোস্তাফিজুর রহমান। প্রথম ওভারেই দেন চারটি ওয়াইড। প্রথম ওভারে এই ৪ রানই পায় বরিশাল।

এরপর দ্বিতীয় ওভার করতে আসেন শহীদুল ইসলাম। তার দ্বিতীয় বলে বিদায় নিলেন মুনিম শাহরিয়ার। শহীদুলের প্রথম বলে রান নিয়ে মুনিমকে স্টাইক দেন ক্রিস গেইল। দ্বিতীয় বলটি তুলে মারতে গিয়ে মিড অনে ধরা পড়েন এই ওপেনার। ৭ বলে শূন্য রান করে বিদায় নিলেন মুনিম।

পরে ক্রিস গেইলের সঙ্গী হতে নামেন সৈকত আলী। পরের ওভারে আসেন সুনীল নারাইন। এসেই সৈকতকে ফিরিয়েছিলেন। তার বলে সৈকতকে এলবিডব্লিউ দিয়েছিলেন আম্পায়ার কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে গেছেন সৈকত।এর পরের বলেই চার মারলেন তিনি।

এরপর গেইল-সৈকতের ব্যাটে পাওয়ার প্লে শেষে ১ উইকেট হারিয়ে ৫১ রান তোলে বরিশাল। তখন ২২ বলে ৪২ রান করেন সৈকত। ৭ বলে ৪ রান গেইলের।

এরপর টানা দুই চারে ফিফটি করেন সৈকত। ১০ চার ও ১ ছক্কায় ৫০ রান করে ফাইনাল মাতান সৈকত। বিপিএলে এর আগে মাত্র ২ ম্যাচ খেলেছেন সৈকত। সে দুই ম্যাচে ৫৪ রান করেছিলেন। ফাইনালে শুধু একটি পরিবর্তন আনে বরিশাল। জিয়াউর রহমানের পরিবর্তে দলে রাখে সৈকতকে। তার যোগ্য প্রমণ দিয়েছেন তিনি।

সৈকত আলী

৬৪ বলে বরিশালের দরকার ৭৩ রান। তখনই বিদায় নিলেন সৈকত। তানভীরের বাঁহাতি স্পিনেই মিলল সৈকতের উইকেট। আর এতেই গেইলের সঙ্গে ৭৪ রানের জুটিটাও ভেঙে যায়। ১০তম ওভারে তানভীরের চতুর্থ বলে লং অনে তুলে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন অধিনায়ক ইমরুল কায়েসের হাতে। ফিরে যাওয়ার আগে ৩৪ বলে ১১ চার ১ ছক্কায় ৫৮ রান করেন সৈকত আলী।

সৈকত আউট হওয়ার পর তানভীরের বলেই ছক্কা মারেন গেইল। পরের বলেই চার। তখন ২০ বলে ১৪ রান থেকে ২৮ বলে ৩৩ রানে চলে যান গেইল। এই ক্রিকেট দানবকে থামিয়ে দিলেন সুনীল নারাইন। ১৩তম ওভারের পঞ্চম বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন গেইল। ফেরার আগে ৩১ বলে ১ চার ও ২ ছক্কায় ৩৩ রান করেন ক্রিস গেইল। তখন ১২.৫ বল শেষে ৩ উইকেট হারিয়ে ১০৭ রান বরিশালের। জিততে দরকার ৪৫ রান।

ক্রিস গেইল

এরপর আর কেউই ক্রিজে দাঁড়াতে পারলেন না। উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান ১৪ রান করে ফিরলেও, মাত্র ৭ রান করে ফেরেন সাকিব আল হাসান। এরপর নাজমুল হোসাইন শান্ত করেন ১২ রান, ডোয়াইন ব্রাভো ১, তৌহিদ হৃদয় ৯ ও মুজিবুর রেহমান ৪ রানে আউট হন।

অবশেষে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৫০ রান তুলতে সক্ষম হয় বরিশাল। কুমিল্লার কাছে মাত্র ১ রানে হেরে যায় সাকিব বাহিনী।

কুমিল্লার হয়ে বল হাতে সুনীল নারাইন ও তানভীর ইসলাম ২টি করে এবং মোস্তাফিজুর রহমান ও শহীদুল ইসলাম ১টি করে উইকেট নেন।

এর আগে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুল কায়েস। ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৫১ রান সংগ্রহ করে কুমিল্লা।

ব্যাট হাতে ওপেনিংয়ে নামেন সুনীল নারাইন ও লিটন দাস। বলে আসেন মুজিব। প্রথম তিন বল ফেরান নারাইন। এরপরই শুরু করেন তার ঝড়। প্রথম ওভারে চতুর্থ বলে স্ট্রেটে ছক্কা! পরের বলে পয়েন্ট দিয়ে চার! ওভারের শেষ বলে কাভারের ওপর দিয়ে ছক্কা মেরে কুমিল্লাকে দারুণ শুরু এনে দিয়ে যথারীতি ঝড়ের ইঙ্গিত দিলেন সুনীল নারাইন। এরপর শফিকুল, সাকিব, ব্রাভোর বল দুমড়ে মুচড়ে নিজের ফিফটি তুলে নিলেন ক্যারিবিয়ান এই অলরাউন্ডার।

পঞ্চম ওভারে সাকিবের তৃতীয় ও চতুর্থ বলে মিড উইকেট দিয়ে টানা দুই চার মারেন নারাইন। ওভারের শেষ বলে ৩ রান নিয়ে অর্ধশতক তুলে নেন নারাইন। অর্ধশতক তুলতে নারাইন খেলেন ২১ বল। সেখানে ছিল ৫টি ছক্কা ও ৫টি চার। এই ২১ বলে ফিফটি করে বিপিএলের ফাইনালে সবচেয়ে কম বলে ফিফটির রেকর্ডটা নিজের করে নিলেন সুনীল নারাইন। আগের ম্যাচে অর্ধশতক তুলেছিলেন মাত্র ১৩ বলে।

সুনীল নারাইন

এর আগে ২০১৯ বিপিএলের ফাইনালে দ্রুত ফিফটির রেকর্ডটি কেরেছিলেন রনি তালুকদার। ইমরুল কায়েসের কুমিল্লার বিপক্ষে ২৬ বলে ফিফটি করেছিলেন ঢাকা ডাইনামাইটসের রনি তালুকদার। আজ তার দখল থেকে রেকর্ডটা ছিনিয়ে নিলেন সুনীল নারাইন।

তবে ক্রিজে বেশিক্ষণ থাকতে পারলেন না তিনি। ষষ্ট ওভার করতে আসেন মেহেদী হাসান রানা। তার প্রথম বল লং অন দিয়ে ছক্কা মারেন নারাইন। কিন্তু দ্বিতীয় বলেই থেমে যেতে হয় নারাইনকে। দ্বিতীয় বলটি যে মেহেদী স্লোয়ার করেছিলেন সেটি বুঝতে পারেন নি এই ক্যারিবিয়ান। বলটি তুলে মারতে গিয়ে টাইমিংয়ে করলেন গড়বড়। বলটি গিয়ে পরে লং অনে দেয়াল হয়ে থাকা নাজমুল হোসেনের হাতে। অর্ধশতক রান নিয়েই প্যাবিলিয়নে ফিরে যেতে হয় নারাইনকে। ফিরে যাওয়ার আগে ২৩ বলে ৫ চার ও ৫ ছক্কায় ৫৭ রান করেন সুনীল নারাইন।

তার আগে সাকিবের বলে ফিরে যান ওপেনার লিটন দাস
প্রথম ও দ্বিতীয় ওভারে ১৮ করে রান তুলেছে কুমিল্লা। ওপেনিং জুটির এই ঝড় থামাতে তৃতীয় ওভারে বোলিংয়ে আসেন বরিশাল অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। আর সে ওভারেই মাত্র ৪ রান দিয়ে লিটনকে তুলে নেন সাকিব। তৃতীয় ওভারের শেষ বলে সাকিবের লেংথ বল আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে বোল্ড হন লিটন। করেন ৬ বলে ৪ রান।

নারাইনের পর ফিরে যান মাহমুদুল হাসান জয়
সপ্তম ওভারে মুজিব উর রেহমানের দ্বিতীয় বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে খেলে রান নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন মাহমুদুল। কিন্তু ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বলটা ঠেকিয়ে দুর্দান্ত থ্রো করেন ব্রাভো। দ্রুতই বলটি ধরে স্ট্যাম্প ভাঙেন উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান। রানআউট হয়ে ফেরেন মাহমুদুল। ফেরার আগে ৭ বলে ১ চারে ৮ রান করেন মামুদুল হাসান জয়।

পরে ফাফ ডু প্লেসিকেও ফেরান মুজিব
নবম ওভারে মুজিবের প্রথম বলে মিড অনে খেলতে গিয়ে তার হাতেই ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ফাফ ডু প্লেসি। ফেরার আগে ৭ বলে ৪ রান করেন তিনি।

ডোয়াইন ব্রাভো

তারপরে কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুল কায়েসকে ফেরান ডোয়াইন ব্রাভো
খাটো লেংথে উঠে আসা বলে আউট হন ইমরুল। একটু খাটো লেংথে উঠে আসা বল পেলেই মারতে যান ইমরুল। ১০ম ওভারে ব্রাভোর শেষ বলটি ছিল খাটো লেংথের। পুল করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে নুরুল হাসানকে ক্যাচ দেন। একই ধরনের বল অতীতেও বহুবার পুল কিংবা হুক করতে গিয়ে আউট হয়েছেন ইমরুল কায়েস। ফিরে যাওয়ার আগে ১২ বলে ২ চারে ১২ রান করেন কুমিল্লা অধিনায়ক।

আরিফুলকেও তুলে নিলেন মুজিব
১১তম ওভারের তৃতীয় বলে আরিফুলকে স্পিনে বোকা বানিয়ে বোল্ড করেন মুজিব উর রেহমান। টানা দুটি ‘ডাক’ মারলেন আরিফুল।

এরপর ক্রিজে ছিলেন মঈন আলী ও আবু হায়দার রনি। তারা দুজনে মিলে করেছেন ৪৪ রানে ছোটো একটি জুটি। এরপরই ফিরে যান মঈন আলী। ২০তম ওভারে শফিকুলের প্রথম বলে ২ রান নিতে গিয়ে রানআউট হন মঈন আলী। ফেরার আগে ৩২ বলে ২ চার ১ ছক্কায় ৩৮ রান করেন তিনি।

তবে এই শেষ ওভারটি শেষ হয়েছে নাটকীয় ভাবে। শেষ ওভারে শফিকুলের প্রথম বলে রানআউট হন মঈন আলী। এক বল পর আবু হায়দারও শফিকুলের বলে তার হাতে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান। ২৭ বলে ১ চার ১ ছক্কায় ১৯ রান করে ফেরেন আবু হায়দার। পরের বলে শহীদুল ইসলামকেও থার্ড ম্যানে ক্যাচে পরিণত করেন শফিকুল। তবে হ্যাটট্রিকটা তিনি করতে পারেননি।

পরে শূন্য রানে অপরাজিত থেকে যান তানভির ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমান।

অবশেষে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৫১ রানে থেমে যায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।

বরিশালের হয়ে বল হাতে মুজিব উর রেহমান ও শফিকুল ইসলাম ২টি করে এবং সাকিব আল হাসান, ডোয়াইন ব্রাভো ও মেহেদী হাসান রানা ১টি করে উইকেট নেন।

ম্যাচ সেরা হয়েছেন সুনীল নারাইন এবং টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছেন সাকিব আল হাসান।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত