টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে সুপার টুয়েলভ শুরু বাংলাদেশের

প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২১, ২০:৩১

সাহস ডেস্ক

১৯তম ওভারে নাসুমের পঞ্চম বলে চার মেরে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন চারিত আসালাঙ্কা। অপরাজিত থেকে করেছেন ৮০ রান। আসালাঙ্কার দুর্দান্ত ইনিংস এবং ভানুকা রাজাপক্ষে হাফসেঞ্চুরিতে মলিন হয়ে গেল মোহাম্মদ নাঈম ও মুশফিকুর রহিমের হাফসেঞ্চুরি। কোনো নাটকীয়তা ছাড়াই শ্রীলঙ্কা হেসে খেলে ৫ উইকেটের জয় নিশ্চিত করেছে ৭ বল বাকি থাকতেই। এতে হার দিয়ে সুপার টুয়েলভ শুরু করল বাংলাদেশ।

রবিবার (২৪ অক্টোবর) শারজা স্টেডিয়ামে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫ উইকেটে হেরে গেছে মাহমুদউল্লাহ বাহিনী।

এদিন টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৭২ রানের টার্গেট দেয় বাংলাদেশ। টাইগারদেও দেওয়া লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৭ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটের জয় পায় শ্রীলঙ্কা।

তবে লঙ্কান ওপেনারদের উপর শুরুতেই আঘাত হানে নাসুম আহমেদ। ডানহাতি পাথুম নিসাঙ্কার সঙ্গে ওপেনিংয়ে কুশাল পেরেরা। বাঁহাতি স্পিনার নাসুমকে দিয়ে বোলিং শুরু করালেন টাইগার অধিনায়ক। একাদশে ফেরা নাসুম আঘাত করতে নিলেন ৪ বল। সুইপ করতে গিয়ে লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন পেরেরা। বাংলাদেশকে দারুণ শুরু এনে দিয়েছেন নাসুম। শ্রীলঙ্কা ৪/১, ১ ওভার।

এরপরে সাকিবের জোড়া আঘাত। ওপেনার কুশাল পেরেরার নামেন চারিত আসালাঙ্কা। আরেক ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কাকে সঙ্গে নিয়ে ৬৯ রানের একটি জুটি গড়েন আসালাঙ্কা। দুজনের এ জুটিটি চোখ রাঙাচ্ছিল বাংলাদেশকে। তখন এলেন সাকিব, ভাঙলেন সে জুটি। বোল্ড করলেন নিসাঙ্কাকে। ফিরে যাওয়ার আগে ২১ বলে ১ চার ১ ছক্কায় ২৪ রা করেন নিসাঙ্কা। সেখানেই থামেননি সাকিব। একই ওভারে নিসাঙ্কার পর বোল্ড করলেন আভিস্কা ফার্নান্ডোকেও। সাকিবের ফ্লাইট বুঝতেই পারেননি ফার্নান্ডো। শূন্য রানে ফিরলেন তিনি।

সাকিব আল হাসান

তবে এই জুটি ভেঙে আফ্রিদিকে ছাড়িয়ে গেলেন সাকিব। আগের ম্যাচেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেটের তালিকায় শহীদ আফ্রিদিকে ছুঁয়েছিলেন সাকিব। আজ ছাড়িয়ে গেলেন। 

এরপর সাইফউদ্দিনের আঘাত। অফস্টাম্পে স্লোয়ার বল, তুলে মেরেছেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। বাউন্ডারি থেকে ছুটে এসে ক্যাচটা নিতে খুব একটা ঝামেলায় পড়তে হয়নি নাঈমকে। ৭৯ রানে চতুর্থ উইকেট হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। এরপর ভানুকা রাজাপক্ষেকে নিয়ে দুজনেই হাফসেঞ্চুরি করে বড় একটি জুটি বেধে দলকে জয় নিশ্চিত করেছেন আসালাঙ্কা।

তার আগে সাকিবকেই ভাবা হয়েছিল যে শেষের আগের ওভারটি তিনি করবেন। কিন্তু সাকিব নয় নাসুমকে বল দিয়েছেন দলনেতা। নাসুমের ৫ম বলটি জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হলেন রাজাপক্ষে। এতে ভেঙেছে ৮৬ রানের জুটি। ফেরার আগে ৩১ বলে ৩ চার ৩ ছক্কায় ৫৩ রান করেন ভানুকা রাজাপক্ষে। আর কোনো উইকেট হারাতে হয়নি শ্রীলঙ্কাকে। অবশেষে ৫ উইকেটের জয় নিয়ে ফিরেছে লঙ্কানরা।

চারিত আসালাঙ্কা

এর আগে রাজাপক্ষেকে জীবন দিয়েছেন লিটন। আফিফ হোসেনকে ছয় মারার পরের বলে মারতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ উঠিয়ে দেন। কিন্তু মোটামুটি সহজ ক্যাচ ফেলে দিয়েছেন লিটন। শুধু সেটাই না, সে বলে হয়েছে চারও। এরপরে আবারও জীবন দিয়েছেন আসালাঙ্কাকে। মোস্তাফিজের অফস্টাম্পের বাইরের বলটা তুলে মেরেছিলেন, কাভারে লিটন একটু ছুটে এসে বেশ ভালো পজিশনেই আনতে পেরেছিলেন নিজেকে। তবে ম্যাচে দ্বিতীয় মিস আটকাতে পারেননি। অপরাজিত চারিত আসালাঙ্কা করেছেন ৪৯ বলে ৫ চার ৫ ছক্কায় ৮০ রান।

টাইগারদের হয়ে সাকিব আল হাসান ও নাসুম আহমেদ ২টি করে এবং মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ১টি উইকেট নিয়েছেন।

এর আগে টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৭১ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। দলের হয়ে দুই ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম ও লিটন দাস করেন ৪০ রানের জুটি। এরপরই বিদায় নেন লিটন দাস। ৫.৫ ওভারে লাহিরু কুমারার বলে বেশ খানিকটা জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে মিড-অফে ধরা পড়লেন লিটন দাস। পাওয়ার প্লের ১ বল বাকি থাকতে বাংলাদেশ হারালো প্রথম উইকেট, লিটন ফিরেছেন ১৬ বলে ২ চারে ১৬ রান করেই।

অবশ্য উইকেট পাওয়ার পর কুমারাকে এগিয়ে গিয়ে কিছু একটা বলতে দেখা গেছে লিটনকে। লিটন সেটির জবাব দিয়েছেন। এতে বাক বিতণ্ডায় জড়ান দুজনে। পরে শ্রীলঙ্কার অন্য খেলোয়াড়, নাঈম ও আম্পায়াররা এসে শান্ত করেছেন দুজনকে। নিশ্চিতভাবেই ম্যাচ রেফারির খাতায় উঠেছে দুজনের নাম। এরপর নামেন সাকিব। পাওয়ার প্লেতে ১ উইকেটে ৪১ রান তুলেছে বাংলাদেশ।

সাকিব নামায় ক্রিজে তখন দুজনেই বাঁহাতি। লঙ্কান অধিনায়ক তাই আক্রমণে এনেছেন অফস্পিনার চরিত আসালাঙ্কাকে। তবে এই ওভারে জয়ী সাকিব ও নাঈম। প্রথম বলেই এক্সট্রা কাভার দিয়ে ইনসাইড-আউটে চার মেরেছেন সাকিব, পরে এক সিঙ্গেল। এরপর কাট করে আরেকটা চার মেরেছেন নাঈম। শেষ বলে গিয়ে কাভার দিয়ে আরেকটা চার মেরেছেন সাকিব। আসালাঙ্কার এ ওভারে উঠেছে ১৪ রান। তখন বাংলাদেশ ৫৫/১, ৭ ওভার।

এরপরে ফেরেন সাকিব। সিমের ওপর হালকা আঙুল ঘুরিয়ে করা ডেলিভারিটা পড়েছিল ব্যাক অফ আ লেংথে। সাকিব সময় নিয়ে ঘুরিয়ে খেলতে গিয়ে হারিয়েছেন লেগ স্টাম্প। বাংলাদেশ ইনিংসের সবচেয়ে বড় উইকেটটাই পেলেন চামিকা করুনারত্নে। ৭ বলে ২ চারে ১০ রান করে ফিরলেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ দ্বিতীয় উইকেট হারাল ৫৬ রানে।

এরপর নামেন মুশফিকুর। তাকে নিয়ে দারুণ একটি জুটি বাধেন ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম। কুমারার ওভারে পয়েন্টে খেলে প্রথমে রান নেওয়ার ইচ্ছা দেখালেও পরে নাঈমকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন মুশফিক। তখন নাঈম ক্রিজের অনেক বাইরে। কুমারার থ্রো-টা সরাসরি আঘাত করতে পারেনি স্টাম্পে, ব্যাক-আপেও ছিলেন না কেউ। বেঁচে গেলে নাঈম। এই ওভারেই ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে স্ট্রেইট ড্রাইভে চার মেরে হাফসেঞ্চুরি করেন নাঈম। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ ওপেনারের এটি দ্বিতীয় ফিফটি।

মোহাম্মদ নাঈম

এরপর বিদায় নেন তিনি। ১৭ ওভারে বিনুরা ফার্নান্ডোর প্রথম বলেই ক্যাচ তুলে দিয়েছেন নাঈম। ফার্নান্ডোর স্লো বাউন্সারে টাইমিংটা ঠিকঠাক হয়নি নাঈমের, দিয়েছেন ফিরতি ক্যাচ। ফেরার আগে ৫২ বলে ৬ চারে ৬২ রান করেন মোহাম্মদ নাঈম।

এরপর নামে আফিফ। নেমেই ফার্নান্ডোর লো-ফুলটসে ফাইন লেগ দিয়ে একটা চার মারেন আফিফ হোসেন। আফিফকে সাথে নিয়ে হাফসেঞ্চুরি করেন মুশফিকুর রহিম। ১৯তম ওভারে কুমারার প্রথম বলে একটি সিঙ্গেল নিয়ে করেন ফিফটি। ৩২ বলে ৪ চার ২ ছক্কায় ৫০ রান করেন মুশফিক।

মুশফিকুর রহিম

এরপরে রান আউট হয়ে বিদায় নেন আফিফ। একই ওভারের তৃতীয় বলে ক্রিজে বল ফেলে সিঙ্গেল নিতে চেয়েছিলেন আফিফ। বেশখানিকটা বেড় হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তবে মুশফিকের সারা না পাওয়ায় ফিরে যাওয়ার সময় কুমারার হাতে রান আউট হয়ে ফেরন তিনি। ফেরার আগে ৬ বলে ১ চারে ৭ রান করেন আফিফ হোসেন।

এরপর নামে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মুশফিক-রিয়াদ মিলে ম্যাচের বাকি ওভার খেলে এসেছেন অপরাজিত থেকে। শেষ পর্যন্ত মুশফিক করেছেন ৩৭ বলে ৫ চার ২ ছক্কায় ৫৭ রান এবং ৫ বলে ২ চারে ১০ রান করেন টাইগার অধিনায়ক।

লঙ্কানদের হয়ে চামিকা করুনারত্নে, বিনুরা ফার্নান্ডো ও লাহিরু কুমারা ১টি করে উইকেট নিয়েছেন।

ম্যাচ সেরা হয়েছেন চারিত আসালাঙ্কা।

সাহস২৪.কম/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত