টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

রেকর্ড জয়ে বিশ্বকাপের মূল পর্বে বাংলাদেশ

প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২১, ২০:৩৮

সাহস ডেস্ক

পাপুয়া নিউগিনিকে মোটামুটি একটা ব্যবধানে হারালেই প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাবে সুপার টুয়েলভ। এমন সমীকরণে সাকিব ও মাহমুদউল্লাহর আগ্রাসী পারফর্মেন্সে রেকর্ড ব্যবধানে পিএনজিকে হারিয়ে ‘বি’ গ্রুপ থেকে সবার আগেই সুপার টুয়েলভ নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ।

বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) ওমানের আল আমিরাত স্টেডিয়ামে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে পিএনজিকে ৮৪ রানে হারিয়েছে টাইগাররা।

এদিন ‘বি’ গ্রুপে নিজেদের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে টসে জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় টাইগার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ এবং শেষের ওভারে সাইফউদ্দিনের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে পিএনজিকে ১৮১ রানের নির্ভরযোগ্য স্কোর গড়ে বাংলাদেশ।

মাহমুদউল্লাহ-সাকিবদের দেওয়া ১৮২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ১৯.৩ বলে সব উইকেট হারিয়ে ৯৭ রান তুলতে সক্ষম হয় পাপুয়া নিউগিনি। দলের হয়ে শুরুতেই ভেঙে পরে পিএনজির ব্যাটিং লাইনআপ। শুরুতেই আঘাত হানে সাইফউদ্দিন। তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলে সাইফউদ্দিনের ফুললেংথের বলটা ফ্লিক করতে গিয়ে মিস করেন ওপেনার লেগা সিয়াকা। সাইফদের আবেদনে এলবিডব্লুর সাড়া দেন আম্পায়ার। আজাগ আঙুল। তবে রিভিউ নেনি সিয়াকা। নিলে অবশ্য লাভও হতো না। বল ট্র্যাকিংয়ে উইকেটে ছিল আম্পায়ারস কল। ফিরে যাওয়ার আগে মাত্র ৫ রান করেন ওপেনার। আজ দুই প্রান্ত থেকেই পেসারদের এনেছেন মাহমুদউল্লাহ। তৃতীয় ওভারে সফল হলেন সাইফউদ্দিন।

এরপর তাসকিনের আঘাত ও দুর্দান্ত নুরুল। তাসকিনের লেগসাইডের বলে ব্যাট চালান অধিনায়ক আসাদ ভালা। ব্যাটের কোনায় লেগে বল পেছনে গেলে নিজের ডানদিকে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ তুলে নেন নুরুল হাসান। ওমানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচে দুই দলের ফিল্ডিং-ই ছিল পিচ্ছিল। তবে আজ ফিল্ডিংয়ে পাপুয়া নিউগিনি ছিল দুর্দান্ত। বাংলাদেশও শুরুটা করেছিল দারুণ।

সাকিব আল হাসান

এরপরই সাকিব ঝড়। টানা তিনটি উইকেট নেন তিনি। এক ওভারেই নেন দুই উইকেট, চার্লস আমিনি (১) ও সিমন আতাই (০)। এরপর ৯ম তম ওভারের ৫ম বলে সিসি বাউকে (৭) ফেরান সাকিব। ১০তম ওভারের দ্বিতীয় বলে নরম্যান ভানুয়াকে (০) ফেরান মেহেদী হাসান। তারপরে আবারো সাকিবের আঘাত। ৮ রান করা হিরি হিরিকে নুরুলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরান বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার।

তবে মিডল অডারে নেমে কিছুটা হাল ধরেছিলেন উইকেটরক্ষক কিপলিন দরিগা। অপরাজিত থেকে করেন ৪৬ রান। খেলেন ৩৪ বলে ২ চার ২ ছক্কা। এছাড়া ১ ছক্কায় ১১ রান করে সাইফউদ্দিনের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন চাদ সোপার। কাবুয়া মোরেয়াকে (৩) রান আউট করে নুরুল এবং শেষ উইকেট ডেমিন রাভুকে (৫) নুরুলের গ্লোভস বন্দি করেন তাসকিন আহমেদ। এতে ৩ বল হাতে থাকতে ৮৪ রানের জয় নিয়ে বিশ্বকাপের মূল পর্বে চলে গেছে বাংলাদেশ।

সে ক্ষেত্রে পরের ম্যাচে ওমানের বিপক্ষে স্কটল্যান্ড জিতলে পরের রাউন্ডে বাংলাদেশ যাবে রানার্স-আপ হয়ে। আর ওমান জিতলে বাংলাদেশের সুযোগ থাকবে গ্রুপ-চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাওয়ার।

টাইগার দলের হয়ে সাকিব আল হসান ৪ ওভারে মাত্র ৯ রান দিয়ে নেন ৪টি উইকেট। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও তাসকিন আহমেদ নেন ২টি করে এবং মেহেদী হাসান ১টি উইকেট নেন।

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ

এদিন আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৮১ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে বাংলাদেশ। দলের হয়ে ওমানের বিপক্ষে হাফসেঞ্চুরিয়ান ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম আজ ব্যার্থ হন। খেলার শুরুতেই কাবুয়া মরেয়ার শিকার হয়ে শূন্য রানে প্যাভিলিয়নে ফেরেন বাহাতি এই ব্যাটার। তবে নাঈম ফিরে গেলেও পাওয়ার প্লেতে হাল ধরেন লিটন দাস ও সাকিব আল হাসান। পাওয়ার প্লেতে আর কোনো উইকেট না হারিয়ে ৪৫ রান তোলে বাংলাদেশ।

আজ ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি লিটন। ৮তম ওভারের প্রথম বলে আসাদ ভালার আক্রমণ সামলাতে পারেননি ডানহাতি এই ব্যাটার। ভালার প্রথম বলটি স্লগ সুইপ করতে গিয়ে সরাসরি সিসি বাউয়ের হাতে তুলে সাজঘরে ফেরেন এই ওপেনার। ফেরার আগে ১ চার ১ ছ্চায় ২৯ রান করেন লিটন। এতে ভাঙে লিটন-সাকিবের ৫০ রানের জুটি।

এরপর নামেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু তার দুঃসময়ের অবসান আজও ঘটেনি। দাঁড়াতে পারেননি ক্রিজে। ১১তম ওভারে সিমন আতাইর বলটি ব্যাটে-বলে দারুণ সংযোগ হলেও সরাসরি ডিপ স্কয়ারে ক্যাচ দিয়ে মাত্র ৫ রানেই ফেরেন মুশফিক। এরপর পাঁচে নেমে শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের চেষ্টা করেন মাহমুদউল্লাহ।

সাকিব আল হাসান

এরপর ১৪তম ওভারের চতুর্থ বলে ভালাকে এক হাতেই ছয় মারার এক বল পরেই সাকিব আবারও তুলে মারেন। লং অনে চার্লস আমিনি দুর্দান্ত ক্যাচ ধরে সাকিবকে বিদায় করেন। ফিরে যাওয়ার আগে ৩৭ বলে ৩ ছক্কায় ৪৬ রান করেন সেরা এই অলরাউন্ডার। এরপর মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে জুটি বাধতে নামেন আফিফ হোসেন।

আফিফকে নিয়ে ৪৩ রানের একটি জুটি গড়ে বিদায় নেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ফেরার আগে একটি আক্রমণাত্মক হাফসেঞ্চুরি করেন মাহমুদউল্লাহ। চ্যাড সোপারের করা ১৮তম ওভারে পরাপর ওভারবাউন্ডারি ও বাউন্ডারি মেরে চলতি বিশ্বাকাপে ২৭ বলে প্রথম হাফসেঞ্চুরি করেন টাইগার অধিনায়ক। যা টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত দ্রুততম হাফসেঞ্চুরি। ঐ ওভারেই আফিফ হোসেনের সাথে জুটি বেঁধে দুই ছয় ও এক চারে করেন ১৯ রান। তার পরের বলেই ফিরে যান তিনি। ফেরার আগে ২৮ বলে ৩ চার ৩ ছক্কায় ৫০ রান করে সাজঘরে ফেরেন টানহাতি এই ব্যাটার।

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ

এরপর নামেন নুরুল হাসান। ওই ওভারের শেষ বলেই রানের খাতা খোলার আগেই ফিরে যান উইকেটরক্ষক নুরুল। পরের ওভারে চার মারার পরে শেষ বলে মরেয়ার আঘাতে ১৪ বলে ৩ চারে ২১ রান করে থামেন আফিফ। এরপর শেষ ওভারে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন টানা দুই ছয় এক চারে শেষ করলে বাংলাদেশ গিয়ে থামে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ১৮১ রানে। এর আগে এই দলটির বিপক্ষে কখনোই আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা হয়নি বাংলাদেশের। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পাপুয়া নিউগিনি বাংলাদেশের ২১তম প্রতিপক্ষ।

পিএনজির হয়ে কাবুয়া মোরেয়া, ডেমিন রাভু ও আসাদ ভিলা ২টি করে এবং সিমন আতাই ১টি উইকেট নেন।

ম্যাচ সেরা হয়েছে সাকিব আল হাসান।

সাহস২৪.কম/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত