পঞ্চম ও শেষ টি-টোয়েন্টি

নড়বড়ে ব্যাটিংয়ে হারল বাংলাদেশ

প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২০:২৯

ছবি: শামসুল হক

নিজেদের চেনা আঙিনায় মুখ থুবড়ে পড়েছিল বাংলাদেশের টপ অর্ডার। একমাত্র আফিফ হোসেনের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে কিছুটা আশা জাগালেও বাকিদের ব্যর্থতায় হেরে গেলো বাংলাদেশ। কিন্তু সিরিজে প্রথমবারের মতো ব্যাটিং উইকেট পেয়ে ভালোভাবেই কাজে লাগালো সফরকারি নিউজিল্যান্ড। প্রথম ম্যাচের পর আর সব ম্যাচেই দারুণ লড়াই উপহার দিয়েছে কিউইরা। শেষ পর্যন্ত সিরিজ তারা জিততে না পারলেও অনভিজ্ঞ দল নিয়ে ৩-২ ব্যবধানের হারে মাথা উঁচু রাখতেই পারে তারা।

পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজে আজ শুক্রবার পঞ্চম ও শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে ২৭ রানে হেরেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে ম্যাচটি। এর আগের চার ম্যাচের তিনটি জিতে সিরিজ নিশ্চিত করে রেখেছিল টাইগাররা। ব্যাটিং ব্যর্থতায় শেষ ম্যাচটি হেরে ৩-২তে সিরিজ শেষ করল স্বাগতিকরা।

এদিন টসে জিতে আগে ব্যাটিংয়ে যায় কিউইরা। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট ১৬১ রানে ইনিংস শেষ করে তারা। ১৬২ রানের বড় লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৩৪ রান তুলতে সক্ষম হয় স্বাগতিকরা।

সিরিজে প্রথমবারের মতো ব্যাটিং উইকেট পেয়েও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা করেছেন হতাশ। প্রথম ওভারে ৮ রান তুললেও ধীরে ধীরে কমে আসে রানের গতি। প্রথম চার ওভারে সতর্কভাবে ব্যাটিং করেছে ওপেনাররা। কিন্তু পঞ্চম ওভারেই প্রথম উইকেটের পতন।

বাঁহাতি স্পিনার এজাজের ঝুলিয়ে দেওয়া বল জায়গা বানিয়ে ইনসাইড আউট শট খেলার চেষ্টা করতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে। সেখানে দাঁড়ানো ফিল্ডার কুগেলাইন ঝাঁপিয়ে বাঁহাতেই নেন অসাধারণ এক ক্যাচ। তাই এজাজের চেয়ে কৃতিত্বটা বেশি কুগেলাইনের। ১২ বলে ১ চারে ১০ রান করেন লিটন দাস।

এরপই শুরু হয় উইকেট পতনের স্রোত। ৯.৫ ওভারে মাত্র ৪৬ রানের মাথায় ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এর মধ্যে সৌম্য সরকার ৪ রান, মোহাম্মদ নাঈম ২১ বলে ৩ চারে ২৩ রান, ও মুশফিকুর রহিম মাত্র ৩ রানে ফেরন। টি-টোয়েন্টিতে একাধিক ম্যাচের সিরিজে নিজের সর্বনিম্ন স্ট্রাইকরেটের রেকর্ড গড়েছেন মুশফিক।

এরপর শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশের সামনে দাঁড়ালো ১১৪ রানের পাহাড় সমান লক্ষ্য। ক্রিজে আফিফ হোসেন ও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এসময় একটু সাহস দেখিয়েছিলেন দুজনে। করেছেন ১১ থেকে ১৫ ওভারে ৫৮ রান। বাকি সময়টা এই গতিতে রান তুলতে পারলে জিততে পারতো টাইগাররা। কিন্তু ম্যাচ বদলে যায় পরের ওভারেই। দুর্দান্ত মাহমুদউল্লাহকে থামিয়ে দেন স্কট কুগালাইন। ১৬তম ওভারের শেষ বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে করেন কুগালাইন। এক্সট্রা কাভার দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সরাসরি কাভার ফিল্ডার ফিন অ্যালেনের হাতে ধরা পরেন। এতে জয়ের আশায় আরেকবার ঝটকা লাগল বাংলাদেশের। ফিরে যাওয়ার আগে ২১ বলে ১ চার ১ ছক্কায় ২৩ রান করেন টাইগার অধিনায়ক।

মাহমুদউল্লাহ আউট হওয়ার পর ভালো কিছু করতে পারলেন না বাকি ব্যাটসম্যানরা। যাওয়া আশার মধ্যেই শেষ করলেন তারা। শেষে মাত্র ২৫ রানে হারালো আরো ৩টি উইকেট। কিন্তু একপাশ থেকে বটগাছ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন আফিফ হোসেন। নির্ধারিত ওভার শেষ হওয়ায় মাত্র এক রানের জন্য হাফসেঞ্চুরিটি করতে পারলেন না তিনি। ৩৩ বলে ২ চার ৩ ছক্কায় ৪৯ রান করে অপরাজিত থাকলেন আফিফ এবং ৩ রান নিয়ে নাসুম আহমেদ। অবশেষে ২৭ রানে হেরে গেলো বাংলাদেশ।

কিউইদের হয়ে বল হাতে এজাজ প্যাটেল ও স্কট কুগালাইন ২টি করে এবং জ্যাকব ডাফি, কোল ম্যাককনচি, বেন সিয়ার্স ও কোল ম্যাককনচি ১টি করে উইকেট নিয়েছেন।

এর আগে টসে হেরে বোলিং পায় বাংলাদেশ। আজ পেস দিয়ে বোলিং আক্রমণ শুরু করে টাইগাররা। ১০ ম্যাচের মধ্যে এই প্রথমবার শুরুতে পেস টানলেন টাইগার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। নতুন বলে প্রথম ওভার করেন তাসকিন আহমেদ। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫ ম্যাচ ও নিউজিল্যান্ড সিরিজের প্রথম ৪ ম্যাচে নতুন বলে ছিলেন স্পিনাররা।

তবে তাসকিনের শুরুটা দারুণ ছিলো। গতি ছিল দুর্দান্ত, একটি ডেলিভারিতে ছাড়িয়ে যায় ১৪৬ কিলোমিটার। বেশ সুইংও আদায় করে নেন তিনি। শুরুর ওভারে দিলেন মাত্র ২ রান। ফিন অ্যালেন ও রাচিন রবীন্দ্র নিয়েছেন একটি করে সিঙ্গেল।

এরপর বলে আসেন স্পিনার নাসুম আহমেদ। তার শর্টলেংথের বল টেনে মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন রাচিন রবীন্দ্র, কিন্তু ক্যাচটা মিস করলেন গতকাল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জায়গা পাওয়া শামীম হোসেন। অথচ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবির্ভাবের পূর্বেই দারুণ ফিল্ডার হিসেবে শামীমের পরিচিতি। ফিন অ্যালেন অবশ্য ঠিক পরের বলেই মেরেছেন চার, এরপরের বলে ছয়। দুবারই নাসুমকে টেনে শট খেলেছেন তিনি। দ্বিতীয় ওভারে নিউজিল্যান্ড তুলেছে ১২ রান।

এরপরই শুরু হয় কিউই দুই ওপেনার ফিন অ্যালেন ও রচিন রবীন্দ্রর ঝড়ো ব্যাটিং। নাসুমের পর বলে আসেন শরীফুল ইসলাম। শরীফুলের সিরিজের প্রথম ওভারে উঠেছে ১৯ রান, তখন ৪ ওভার শেষে বিনা উইকেটে নিউজিল্যান্ডের স্কোর ৩৮ রান।

পরে ৫৮ রানের জুটি গড়েন দুই ওপেনার। বিপজ্জনক এ উদ্বোধনী জুটিতে প্রথম আঘাত হানেন শরীফুল ইসলাম। আগের বলেই অন দ্য আপে চার মেরেছিলেন রাচিন রবীন্দ্র, পরে শর্ট লেংথে গেলেন শরীফুল। সেটাতেও মিড-অপে তুলে মারতে গিয়ে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন রবীন্দ্র। ফেরার আগে ১২ বলে ১৭ রান করেন এই ওপেনার।

আবারো শরিফুলের আঘাত। এবার বিদায় নিলেন ঝড়ো ব্যাট চালানো আরেক ওপেনার অ্যালেন। রিভিউ নিয়ে টিকে যাওয়ার পরের বলেই বোল্ড হন তিনি। শরিফুলের দুর্দান্ত বলটি শাফ করতে গেলে বল তার প্যাড ছুঁয়ে ছোবল দেয় স্টাম্পে। ফেরার আগে ২৪ বলে ৪ চার ৩ ছক্কায় ৪১ রান করেন ফিন অ্যালেন। বিপজ্জনক দুই ওপেনারকেই ফেরালেন শরীফুল। তখন কিউইদের ৬ ওভারে ২ উইকেটে ৫৮ রান।

এরপর অধিনায়ক টম লাথাম একপাশ থেকে লেগে থাকেন। ফিন অ্যালেন ফিরে যাওয়ার পর দ্রুত আরো দুটি উইকেট হারায় কিউইরা। এদিকে সিরিজে প্রথমবার বল হাতে নিয়েই সাফল্যের স্বাদ পেলেন আফিফ হোসেন। নিজের প্রথম ওভারেই ফিরিয়ে দিলেন উইল ইয়াংকে।

ডানহাতি ইয়াংয়ের জন্য রাউন্ড দা উইকেটে গিয়ে অনেক বাইরে বল দেন আফিফ। পিচ করে বল স্কিড করে বেরিয়ে যায়। ইয়াং জায়গায় দাঁড়িয়ে ব্যাট চালান। বল তার ব্যাটের কানায় লেগে কিপার নুরুল হাসানের গ্লাভসে আশ্রয় নেয়। ব্যাটে না লাগলে বলটি হতে পারত ওয়াইড। ৮ বলে ৬ করে ফেরেন উইল ইয়াং।

এরপরে নাসুমের আঘাত। ডি গ্রান্ডহোমকে ফেরান তিনি। নিজের প্রথম দুই ওভারে রান খরচ করার পর তৃতীয় ওভারের চতুর্থ বলটি ঝুলিয়ে দেন নাসুম। মিডল স্টাম্পে পিচ করা ফুল লেংথ বলটি ছক্কা মারতে গিয়ে শামীম হোসেনের হাতে ধরা পরেন। ফেরার আগে ৮ বলে ৯ রান করেন গ্রান্ডহোম।

এরপর নামেন হেনরি নিকোলাস। টম লাথামের সঙ্গে জুটি বাঁধার চেষ্টা করেন। কিন্তু এই জুটি টিকতে দিলোনা দুর্দান্ত সোহান। নিজের তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে করেন তাসকিন আহমেদ। ব্যাট চালান নিকোলাস। ব্যাটের কানায় লেগে গুলির বেগে চলে যায় পেছনে। 

চোখের পলকে বাদিকেঁ ঝাঁপিয়ে অসাধারণ রিফ্লেক্স ক্যাচটি ধরে ফেলেন উইকেটকিপার নুরুল হাসান সোহান। ফেরার আগে ২১ বলে ২ চারে ২০ রান করেন হেনরি নিকোলাস। ভাঙল ৩৫ বলে ৩৫ রানে জুটি।

এরপর নামেন কোল ম্যাককনচি। এদিকে ল্যাথামের ব্যাটেই কিউইদের চ্যালেঞ্জিং স্কোর দাঁড়ায়। পাওয়ার প্লেতে ঝড়ের পর মাঝে কিছুটা কমে আসে রানের গতি। শেষটা আবার তারা করে দুর্দান্ত। ১৯তম ওভারে তাসকিনের দুটি স্লোয়ারে দুটি ছক্কা মারেন টম ল্যাথাম। ওই ওভার থেকে আসে ১৮ রান। শেষ ৬ ওভারে নিউজিল্যান্ড তোলে ৬৫ রান।

শুরুতে ফিন অ্যালেনের আগ্রাসী শুরু পর দলের ইনিংস এগিয়ে নেন টম ল্যাথাম। করেন হাফসেঞ্চুরি। কিউই অধিনায়ক শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন। করেন ৩৭ বলে ২ চার ২ ছক্কায় ৫০ রান। এই সিরিজে ও আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এটা তার দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি। তার সাথে অপরাজিত থাকেন কোল ম্যাককনচি। করেন ১০ বলে ৩ চারে ১৭ রান।

বল হাতে শরীফুল ইসলাম ২টি, তাসকিন আহমেদ, নাসুম আহমেদ ও আফিফ হোসেন ১টি করে উইকেট নেন।

ম্যাচ সেরা টম লাথাম এবং সিরিজ সেরা যৌথভাবে টম লাথাম ও নাসুম আহমেদ।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত