জোড়া রেকর্ড ভেঙে ক্যাঙ্গারু বধ করল টাইগাররা

প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২১, ০০:৫২

শেষ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার দরকার ২২ রান। মেহেদীর প্রথম বলে এক রানের পর দ্বিতীয় বলেই ওভারবাউন্ডারি। চতুর্থ বলে ফুলটসে একটা নো করলেও টাইগারদের থেকে সিরিজ বাগাতে পারল না অস্ট্রেলিয়া। অবশেষে তৃতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ১০ রানে হারিয়ে তাদের বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। ক্রিকেট দানব অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই ম্যাচ হাতে রেখে স্বল্প রানের এই জয় দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থেকে যাবে।

আজ শুক্রবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ১০ রানে হারিয়ে সিরিজ জিতল টাইগাররা। সিরিজের ৩-০তে এগিয়ে গেলো মাহমুদউল্লাহ বাহীনি।

এদিন টসে জিতে আগে ব্যাট করে ১২৭ রানের স্বল্প পুঁজি নিয়ে বোলিং করতে নামে বাংলাদেশ। বল হাতে শুরুতেই ম্যাজিক দেখান স্পিনার নাসুম আহমেদ। ১২৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ও অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েডকে মাত্র এক রানে ফেরান নাসুম। লেগসাইডের বল টেনে মারতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে শরিফুলের হাতে ধরা পড়েন ওয়েড। তখন অস্ট্রেলিয়ার ১.৩ ওভারে ৮ রান।

পরে ৬৩ রানের একটি জুটি গড়েন আরেক ওপেনার বেন ম্যাকডারমট ও বার্তমানে অজিদের উজ্জ্বল তারকা মিচেল মার্শ। তবে এই জুটি ভাঙেন সাকিব আল হাসান। সাকিবে ঘূর্ণি সামলতে পারলেন না বেন ম্যাকডারমট। বোল্ড হয়ে ফিরলেন তিনি। এতেই যেন মুক্তি মিলল শরিফুলের।

ম্যাচ বদলে দেওয়া মুহুর্তের সময় ম্যাকডারমটের দারুন এক ক্যাচ মিস করে বসলেন শরিফুল ইসলাম। মোস্তাফিজের লেগস্টাম্পের বাইরের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে শরীফুলের কাছে ক্যাচ দিয়ে ছিলেন ম্যাকডারমট। কিন্তু হতাশ করেছেন শরিফুল। ৩২ রানে জীবন পেলেন ম্যাকডারমট। তার তিন রান পরেই সাকিবের শিকার হন ম্যাকডারমট। ৪১ বলে ৬ ছক্কায় ৩৫ রান করে ফেরেন তিনি। তখন ২ উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার ৭১ রান।

এদকে চাপ সামলে নিচ্ছিলেন মিচেল মার্শ। তার সাথে জুটি বাঁধতে নামেন ময়েজেস হেনরিকেস। কিন্তু হেনরিকসকে দঁড়াতেই দিলেন না ক্যাচ মিস করা শরিফুল ইসলাম। তার বল ফ্লিক করতে গিয়ে মিড-অনে থাকা শামীম হোসেনের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে মাত্র ২ রান করে ফেরেন ময়েজেস হেনরিকেস।

এরপর অ্যালেক্স কেরিকে সাথে নিয়ে ২০ রানের একটি জুটি গড়েন মিচেল মার্শ। এর মধ্যে তিনি করে হাফসেঞ্চুরি। এটা তার ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফসেঞ্চুরি। কিন্তু আবারও শরিফুলের আঘাত। হাফসেঞ্চুরির পর তাকে আর দাঁড়াতে দেননি শরিফুল। অনুর্ধ্ব-১৯ থেকে উঠে আসা এই পেসারের বল ক্রিজ ছেড়ে বেড়িয়ে এসে তুলে মেরে মোহাম্মদ নাঈমের হাতে ধরা পরেন। ৪৭ বলে ৬ চার ১ ছক্কায় ৫১ রান করে ফেরেন মিচেল মার্শ। আর তখন হাফ ছেড়ে বাঁচল বাংলাদেশ। চাপ বাড়ল অস্ট্রেলিয়ার।

এর আগে সাকিবের বলে মার্শকে আউট দিয়েছিল আম্পায়ার। সাকিবের টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়া বলটা টেনে মারতে গিয়ে মিস করেন মার্শ। সেটা ধরে স্টাম্প ভাঙেন উইকেটকিপার নুরুল হাসান। তেমন আবেদনও করেনি বাংলাদেশ। শেষ মুহুর্তে হঠাৎ করেই আঙুল তুলে বসলেন আম্পায়ার শরফউদ্দৌলা। মার্শ সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ করলেন। পরে তিনি নট আউট হলেন।

এরপর নামেন ডেনিয়েল ক্রিস্টিয়ান। তখন শেষ দুই ওভারে অস্ট্রেলিয়ার দরকার ২৩ রান। ১৯তম ওভারে আসেন কাটার মাষ্টার মোস্তাফিজুর রহমান। এমন সময় মুগ্ধময় বল করেছেন মোস্তাফিজ। দুর্দান্ত কাটারে দিয়ে গেলেন মাত্র এক রান। আজ মোস্তাফিজ কোনো উইকেট পাননি, তাতে কি? করলেন ক্যারিয়ারের সেরা বল। ৪ ওভার করে দিলেন মাত্র ৯ রান। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে ৪ ওভার বোল করে এর চেয়ে কম রান দিয়েছেন মাত্র দুজন- পাকিস্তানের উমর গুল ও ইমাদ ওয়াসিম। দুজনই দিয়েছিলেন ৮ রান করে।

এরপর শেষ ওভারে দরকার ২২ রান। বলে আসেন মেহেদী হাসান। তার প্রথম বলে এক রানের পর দ্বিতীয় বলেই ওভারবাউন্ডারি। চতুর্থ বলে ফুলটসে একটা নো দিয়ে মোট ১২ রান দেন মেহেদী। অবশেষে ১০ রানে অস্ট্রেলিয়াকে হারায় বাংলাদেশ। আর এতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জিতল টাইগাররা। আর স্বল্প রানের পুঁজি নিয়ে টি-টোয়েন্টিতে এই প্রথম জয়ের রেকর্ডও গড়েছে লাল-সবুজের দল।

টাইগারদের হয়ে শরিফুল ইসলাম ২টি এবং নাসুম আহমেদ ও সাকিব আল হাসান ১টি করে উইকেট নেন।

এর আগে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় টাইগার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১২৭ রানের স্বল্প পুঁজি সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। দলের হয়ে টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক হিসেবে প্রথম হাফসেঞ্চুরি করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৫৩ বলে ৪ চারে ৫২ রান করে ফেরেন এই অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার। নিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ৫ম তম হাফসেঞ্চুরি তার।

মাহমুদউল্লাহকে ফেরান নাথান এলিস। ইনিংসের শেষ ওভারের চতুর্থ বলে মাহমুদউল্লাহকে বোল্ড করেন আজ অভিক্ত এই পেসার। পরের দুই বলে ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান ও স্কয়ার লেগে মেহেদী হাসান। এই তিন জনকে হারিয়ে নাথান এলিস পেয়ে গেলেন অভিষিক্ত হ্যাটট্রিক। ৪ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট।

মাহমুদউল্লাহ ছাড়াও কিছু রান তুলে দিয়ে গেছেন সাকিব আল হাসান। ১৭ বলে ৪ চারে ২৬ রান করে জাম্পার বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাকিব। পরে রান আউট হয়ে ফেরেন আফিফ হোসেন (১৯) এবং নারুল হাসান (১১)।

অজিদের হয়ে নাথান এলিস ৩টি এবং হ্যাজলউড ও এ্যাডাম জাম্পা ২টি করে উইকেট নেন।

ম্যাচ সেরা হয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত