বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া টি-টোয়েন্ট সিরিজ

জয় দিয়েই শুরু করল টাইগাররা

প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২১, ২২:৪৫

শেষ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার দরকার ২৮ রান। হাতে শেষ উইকেট। শেষ ওভারটি করতে আসলেন মোস্তাফিজ। ওভারে একটা ওয়াইডের সঙ্গে দিয়েছেন তিনটা সিঙ্গেল। আর কোনো রান নিতে দেননি তিনি। বরং শেষ বলেই কাঁপিয়ে দিলেন মিচেল স্টার্কের স্ট্যাম্প। তাতেই ২৩ রানে জিতে গেল স্বাগিতক বাংলাদেশ। আর জয় দিয়ে সিরিজ শুরু করল টাইগাররা।

মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ২৩ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ।

এর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪টি টি-টোয়েন্টি খেলে সবকটিতেই হেরেছিল বাংলাদেশ। ম্যাচ ৪টি খেলেছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। এই ধারা ভাঙার সুযোগ এসেছে আজ। কিন্তু আগে ব্যাটিং করে ১৩১ রানে থেমে সে ধারা ভাঙার কাজটা নিজেরাই কঠিন করে তুলেছিল মাহমুদউল্লাহ বাহিনীরা। তবে ম্যাচটি জিতে ইতিহাসই গড়ল টাইগাররা। এর আগে কোনো টি-টোয়েন্টিতে এত কম রানের সম্বল নিয়ে জেতা হয়নি।

এদিন টসে জিতে আগে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানায় অস্ট্রেলিয়া। নির্ধারিত ওভারে অস্ট্রেলিয়াকে ১৩২ রানের লক্ষ্য দেয় মাহমুদউল্লাহ বাহিনীরা। ১৩২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ১০৮ রানে থেমে যায় সফরকারিরা।

অস্ট্রেলিয়ার প্রথম বাঁধা হয়ে দাঁড়ান মেহেদী হাসান। প্রথম বলেই আঘাত করেন মেহেদী। বলটি ব্রেক থ্রু করেন, রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে করা বল লাগে স্ট্যাম্পে। অ্যালেক্স ক্যারি শূন্য রানে বোল্ড হয়ে ফেরেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে এই প্রথম অস্ট্রেলিয়ার কোনো ব্যাটসম্যান ইনিংসের প্রথম বলে আউট হলেন। বাংলাদেশের শুরুটা ভালোই হলো।

প্রথম বলেই মেহেদী হাসানের আঘাত

এরপর নাসুমের আঘাত। নাসুমের ফ্লাইট ও টার্ন করা বল খেলতে গিয়ে স্টাম্পিং হয়ে ফেরেন জশ ফিলিপ। স্টাম্পিংয়ের ক্ষেত্রে টিভি আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষাই করেননি তিনি। এক ছক্কার সাহায্যে ৯ রান করে ফেরেন ফিলিপ। ১০ বলের মাঝেই নেই অস্ট্রেলিয়ার ২ উইকেট!

এরপর সাকিবের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন ময়জেস হেনরিকেস। করেছেন মাত্র ১ রান। তখন অস্ট্রেলিয়ার ১১ রানে ৩ উইকেট হারিয়েছে। টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়া এর চেয়ে কম রানে প্রথম ৩ উইকেট হারিয়েছে শুধু একবার। ২০১০ সালে ব্রিজটাউনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচটি ৭ উইকেটে হেরেছিল অস্ট্রেলীয়রা।

পাওয়ার প্লে-তে ২৮ রান তুলেছে অস্ট্রেলিয়া, হারিয়েছে ৩ উইকেট। বাংলাদেশ তুলেছিল ৩৪ রান। পরে নাসুমের বলে ফিরলেন ম্যাথু ওয়েড।

নাসুমের লেগস্টাম্পের বেশ বাইরের বলটা ম্যাথু ওয়েড ছেড়ে দিলে হতে পারতো, কিন্তু সেটা না করে শট খেলতে গিয়ে ফাইন লেগে মোস্তাফিজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন অস্ট্রোলিয়ার অধিনায়ক ওয়েড। তবে মোস্তাফিজ ক্যাচটি ভালোই নিয়েছেন। ১০ম ওভারে চতুর্থ উইকেট হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ভেঙেছে মার্শের সঙ্গে ওয়েডের ৪৫ বলে ৩৮ রানের জুটি।

এরপর নাসুমের নীচু হওয়া বলটা ঘুরে খেলতে গিয়ে হিট আউট হয়েছেন অ্যাস্ট আগার। বাঁধা হয়ে দাঁড়ালেন মিচেল মার্শ। এর আগে ওয়েন্ডিজের বিপক্ষে ৪-১ ম্যাচের সিরিজ হেরেছিল অস্ট্রেলিয়া। ওই সিরিজে উজ্জ্বল ছিলেন মার্শ। তিনি ১৫২.০৮ স্ট্রাইক রেটে ৪৩.৮০ গড়ে ২১৯ রান করেছিলেন। মার্শের বাঁধা কাটালেন নাসুম আহমেদ। নিজের শেষ ওভারের শেষ বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে টপ-এজড করলেন মার্শ। স্কয়ার লেগ থেকে বেশ খানিকটা ছুটে এসে দারুণ ক্যাচ নিয়েছেন শরীফুল। ৪৫ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৪৫ করে ফেরেন মিচেল মার্শ। এ নিয়ে ৪ ওভার বল করে ৪টি উইকেট নিলেন নাসুম, দিয়েছেন ১৯ রান।

চার উইকেট নিয়েছেন নাসুম আহমেদ

৪ উইকেট নিয়ে একটি রেকর্ডও করেছেন নাসুম। এর আগে টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের সেরা বোলিং ছিলেন সাকিব। ২০১৬ সালে বেঙ্গালুরুতে ২৭ রানে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। আজ সে রেকর্ড ভাঙলেন নাসুম। ১৯ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন এই বাঁহাতি স্পিনার। সব মিলিয়ে দুই দলের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ডটি অবশ্য থেকে গেল অস্ট্রেলিয়ান পেসার ডার্ক ন্যানেসেরই। ১৮ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি, ২০১০ সালে ব্রিজটাউনে।

এরপর অ্যাস্টোন টার্নারকে ফেরালেন মোস্তাফিজ। ৮ রান করে ফেরেন টার্নার। তারপরেই শরীফুলের জোড়া আঘাত। ১৯তম ওভারে এসে প্রথমে অ্যান্ড্রু টাই, এরপর অ্যাডাম জাম্পাকে ফেরালেন শরীফুল। ১০৪ রানে ৯ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। এরপর শেষ উইকেট মিচেল স্টার্ককে ফেরান মোস্তাফিজ। অস্ট্রেলিয়া থেমে যায় ১০৮ রানে। পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে প্রথম সিরিজটি ২৩ রানে জিতেছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের হয়ে নাসুম আহমেদ ৪টি, মোস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল ইসলাম ২টি করে এবং মেহেদী হাসান ও সাকিব আল হাসান ১টি করে উইকেট নিয়েছেন।

এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৩১ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। এদিন আগেভাগেই ফিরে যান সৌম্য সরকার। দলিয় ১৫ রানের মাথায় লেগস্টাম্পের বাইরে সরে গিয়ে জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়েছি ব্যাটে লেগে খুঁজে নেয় স্টাম্প। মাত্র ২ রান করে ফেরেন এই বাঁহাতি ওপেনার।

মোহাম্মদ নাঈম

এরপর ফেরেন মোহাম্মদ নাঈম। শুরুটা ভালো করেছিলেন তিনি, তবে টিকতে পারলেন না বেশিক্ষণ। অ্যাডাম জাম্পার ফুললেংথের বল রিভার্স সুইপ বোল্ড হয়ে ফেরেন নাঈম। ২৯ বলে ২ ছক্কা ও ২ চারে ৩০ রান করেন।

নাঈমের পর ফিরলেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সামনে এসে তুলে মারতে গিয়ে মিড-অফ থেকে এক্সট্রা কাভারে পেছন দিকে ছুটে আশা ময়জেস হেনরিকসের হাতে ধরা পরলেন। ২০ বলে ১ ছক্কায় ২০ রান করেন টাইগার অধিনায়ক।

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ

অধিনায়কের পর ফিরলেন নুরুল হাসান। নুরুল পেছনে গেলেন, প্রায় স্টাম্প লাইন বরাবর। সঙ্গে গেলেন অফস্টাম্পের দিকে প্রায় ওয়াইডের সংকেতের দাগের ওপরও। তবে এতকিছু করেও শুধু টাইমিংটাই করতে পারলেন না অ্যান্ড্রু টাইয়ের বলে। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে শেষ পর্যন্ত ক্যাচ দিয়েছেন তিনি, ৪ বলে ৩ রান করেই।

এরপর ফেরেন সাকিব আল হাসান। জশ হ্যাজলউডের বলটা টাইমিং মেলাতে পারেনি সাকিব। ব্যাট চালালে বল ব্যাটে লেগে স্টাম্পে ঢুকে যায়। ৩৩ বলে ৩ চারে ৩৬ রান করেছেন সাকিব।

এরপরই স্টার্কের ‘ট্রেডমার্ক’ ডেলিভারির শিকার হন শামীম হোসেন। মাত্র ৪ রান করে স্টার্কের ইয়র্কার বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। এরপর নাটকের পরেও দাঁড়াতে পারলেন না আফিফ হোসেন। স্টার্কের ফুলটস বল খেলতে গিয়ে ব্যাটে বল লেগে বোল্ট হন আফিফ, কিন্তু অন-ফিল্ডের দুই আম্পায়ার টিভি আম্পায়ারের সঙ্গে পরামর্শ করে নো বল দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর টিকে থাকতে পারলেন না। অবশেষে ওই স্টার্কের বলেই বোল্ড হয়ে ফিরলেন তিনি। ১৭ বলে ৩ চারে ২৩ রান করেন তিনি। পরে মেহেদি হাসান ৭ রান করে অপরাজিত থাকেন।

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে হ্যাজলউড ৩টি, স্টার্ক ২টি এবং জাম্পা ও এন্ড্রু টয় ১টি করে উইকেট নিয়েছেন।

ম্যাচ সেরা হয়েছেন নাসুম আহমেদ।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত