মেসির রেকর্ডের দিনে কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনা

প্রকাশ : ২২ জুন ২০২১, ১৬:৪৫

ক্রীড়া ডেস্ক

অভিষিক্ত আলেহান্দ্রো পাপু গোমেজের একমাত্র গোলে প্যারাগুয়েকে হারিয়ে কোপা আমেরিকার কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে আর্জেন্টিনা। আজ মঙ্গলবার ব্রাসিলিয়ায় প্যারাগুয়েকে ১-০ গোলে হারিয়েছে লিওনেল স্কোলোনির শিষ্যরা।

যদিও এই ম্যাচ শুরুর কয়েক ঘন্টা আগে আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যমে গুঞ্জন ওঠেছিল যে, প্যারাগুয়ের বিপক্ষে দলের মহাতারকা লিওনেল মেসিকে বিশ্রাম দেওয়া হতে পারে, এবং তার জায়গায় খেলানো হবে আলেহান্দ্রো পাপু গোমেজকে। কিন্তু মাঠে দেখা গেছে দুজনকেই। আর দুজনকেই গড়েছেন রেকর্ড। অভিষেক ম্যাচেই গোল করে দলকে জিতিয়েছে পাপু। আর জাতীয় দলের হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়েছেন মেসি।

লিওনেল মেসি

আর্জেন্টিনার হয়ে এতদিন সর্বোচ্চ ১৪৭ ম্যাচ খেলার রেকর্ডটি একার দখলে রেখেছিলেন সাবেক ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হাভিয়ের মাচেরানো। আজকের ম্যাচটি দিয়ে মাচেরানোর রেকর্ডে ভাগ বসালেন মেসি।

পাপুর একমাত্র গোলে প্যারাগুয়েকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে আর্জেন্টিনা। তার এই গোলে আনহেল ডি মারিয়ার অবদানই বেশি ছিল। তবে মেসিরও অবদান কম নয়। ম্যাচের ১০ মিনিটে মাঝমাঠে প্যারাগুয়ের এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডান উইংয়ে ডি মারিয়াকে পাস দেন মেসি। ডান প্রান্ত থেকে পাপু গোমেজকে দারুণ এক পাস দেন ডি মারিয়া। সেখান থেকে দারুন ফিনিশিংয়ে গোলটি করেন পাপু গোমেজ।

পাপু গোমেজ

কোপা আমেরিকায় প্যারাগুয়ের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার পরিসংখ্যান রীতিমতো অবিশ্বাস্য। চলতি আসর শুরুর আগে মহাদেশীয় এই টুর্নামেন্টে প্যারাগুয়ের সঙ্গে খেলা ২২ ম্যাচের একটিতেও হারেনি আর্জেন্টাইনরা। এবার সেই রেকর্ড ২৩-এ উন্নীত করলেন লিওনেল মেসি, আনহেল ডি মারিয়ারা।

এছাড়া এ নিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে টানা ১৬ ম্যাচ অপরাজিত রইল মেসিরা। সর্বশেষ ২০১৯ সালের কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে ব্রাজিলের কাছে ২-০ গোলে হেরেছিল তারা। এরপর থেকে খেলা ১৬ ম্যাচে ৯ জয়ের পাশাপাশি ড্র হয়েছে বাকি ৭ ম্যাচ।

আজ উরুগুয়ের বিপক্ষে আগের ম্যাচের মূল একাদশের রক্ষণ, মাঝমাঠ ও আক্রমণভাগে দুটি করে মোট ছয়টি পরিবর্তন এনে এ ম্যাচে ৪-৩-৩ ছকে দল সাজিয়েছেন আর্জেন্টিনা কোচ স্কালোনি। রক্ষণে নিকোলাস ওতামেন্দি ও মার্কাস আকুনোর জায়গায় জার্মান পেজ্জেলা ও নিকোলাস ত্যাগলিয়াফিকোকে নামান তিনি। মাঝমাঠে লিয়ান্দ্রো পারেদেস ও উইংয়ে পাপু গোমেজ ডাক পান। আর্জেন্টিনার মূল একাদশে এ ম্যাচ দিয়েই অভিষেক ঘটল সেভিয়া উইঙ্গারের। আক্রমণে মেসির পাশে ডাক পান সের্হিও আগুয়েরো ও আনহেল ডি মারিয়া।

ডি মারিয়া

এদিন প্রথমার্ধে একদম শেষ মুহূর্তে প্যারাগুয়ের জালে আরও একবার বল পাঠায় আর্জেন্টিনা। ডি মারিয়ার জোরাল শট কোনোমতে রুখে দেন প্যারাগুয়ে গোলকিপার আন্তনি সিলভা। কিন্তু বাঁ প্রান্তে চলে আসা বলে আবারও জোরাল শট নিয়ে ক্রস করেন পাপু গোমেজ। বলটি প্যারাগুয়ের এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে আশ্রয় নেয় জালে। রেফারি ভিএআর প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে অফসাইডের জন্য গোলটি বাতিল করেন। যদিও মেসির এই অফসাইড হওয়া নিয়ে যথেষ্ট বিতর্কের অবকাশ থাকবে। ধারাভাষ্যকারই সে কথা বলে দেন।

বিরতির পরে বাকি সময় তেমন ভালো খেলতে পারেনি আর্জেন্টিনা। তবে একটু বেশিই শরীরনির্ভর ফুটবল খেলে প্যারাগুয়ে। প্রথমার্ধে ১৫টি ফাউল করেছে তারা। দ্বিতীয়র্ধেও ৮টি ফাউল করেছে, অর্থাৎ গোটা ম্যাচে মোট ২৩টি ফাউল করে প্যারাগুয়ে।

তবে প্যারাগুয়েও আক্রমণ করেছিল। গোলপোস্ট তাক করে নেওয়া ১০টি শটের মধ্যে তারা পোস্টে রাখতে পেরেছে মাত্র ২টি শট। কিন্তু আর্জেন্টিনা তাদের চেয়ে কম শট (৮) নিয়ে পোস্টে রাখতে পেরেছে ৪টি। প্যারাগুয়ে ৫৭ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে খেলেছে। আর্জেন্টিনা তারকাদের পাশে ৪৩ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে খেলা একটু বেমানানই। তবু অভিষিক্ত পাপু গোমেজের গোলে দীর্ঘ ছয় বছর পর প্যারাগুয়ের বিপক্ষে তুলে নিয়েছে মেসি বাহিনীরা।

এই জয়ে ৩ ম্যাচে ২ জয় ও ১ ড্রয়ে মোট ৭ পয়েন্ট নিয়ে 'এ' গ্রুপের শীর্ষস্থান ধরে রাখল লিওনেল স্কালোনির দল। দ্বিতীয়তে থাকা চিলি ৩ ম্যাচে ১ জয় ২ ড্রয়ে ৫ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয়তে আছে। প্যারাগুয়ে ২ ম্যাচে ১ জয় ও ১ হারে ৩ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয়তে আছে। উরুগুয়ে ২ ম্যাচে ১ ড্র ও ১ হারে ১ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থস্থানে আছে। বলিভিয়া ২ ম্যাচে শূন্য পয়েন্ট নিয়ে তলানিতে আছে। পাঁচ দলের গ্রুপে ৪টি করে ম্যাচ খেলবে প্রতিটি দল। দুটি গ্রুপ থেকে ৪টি করে দল নাম লেখাবে কোয়ার্টার ফাইনালে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত