বার্সা-মেসির রেকর্ডের দিনে মেসিদের আকর্ষণীয় গোল উৎসব

প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২১, ১৪:৩৭

সাহস ডেস্ক

এক ম্যাচে মোট গোল হয়েছে ৭টি। বার্সেলোনার ৬টি, রিয়াল সোসিয়েদাদের ১টি। ৭টি গোলই ছিল আকর্ষণীয়। বার্সার হয়ে দুটি করে গোল করেছেন আর্জেন্টাইন বার্সা অধিনায়ক লিওনেল মেসি ও ডাচ রাইটব্যাক সের্হিনিও দেস্ত। একটি করে গোল করেছেন দুই ফরাসি তারকা আতোয়ান গ্রিজম্যান ও ওসমান দেমবেলে। সোসিয়েদাদের হয়ে একমাত্র গোলটি করেছেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার আন্দের বারেনেৎসিয়া।

রবিবার (২১ মার্চ) স্প্যানিশ লা লিগায় রিয়াল সোসিয়েদাদের মাঠে তাদেরকেই ৬-১ গোলে বিদ্ধস্ত করে আবারো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদকে পেছনে ফেলে পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয়তে উঠে এসে রোনাল্ড কোম্যানের দল। এ নিয়ে লিগে টানা ১৭ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড নিয়ে মাঠে নেমেছিল বার্সেলোনা। ম্যাচ শেষে সে রেকর্ডটাই দাঁড়াল ১৮ ম্যাচে। গতকাল করিম বেনজেমার গোলে একদিনের জন্য বার্সাকে পেছনে ফেলেছিল জিনেদিন জিদানের দল।

দিন ম্যাচ শুরুর ১১ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত বার্সেলোনা। আলবার পাস ধরে গোল বরাবর বক্সের বাইরে থেকে শট করেছিলেন মেসি। কিন্তু সেটা ব্যর্থ হয়। পরে ২৪ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল স্বাগতিকদের। সুইডিশ স্ট্রাইকার আলেক্সান্দার ইসাকের শট নিলে তা আটকে দেন বার্সা গোলরক্ষক টের স্টেগেন।

ম্যাচের ৩৭ মিনিটে আলবা, মেসি, দেম্বেলে ও গ্রিজমানের যৌথ উদ্যোগে প্রথম গোল পেয়ে যায় বার্সেলোনা। মেসির কাছ থেকে বল পেয়ে বক্সে দেম্বেলের উদ্দেশ্যে পাস বাড়ান স্প্যানিশ লেফটব্যাক আলবা, দেম্বেলের শোট সোসিয়েদাদের গোলকিপার অ্যালেক্স রেমিরো আটকে দিলেও বল চলে যায় ফাঁকা দাঁড়িয়ে থাকা গ্রিজমানের পায়ে। সেখান থেকে সহজেই গোলটি করে ফেলেন ফরাসি এই ফরোয়ার্ড। এ নিয়ে লিগে ৮টি গোল করলেন গ্রিজমান।

তার দুই মিনিট পরেই আরেকটু হলেই সমতায় ফিরেছিল সোসিয়েদাদ। নিরন্তর প্রেস করার সুবিধাটা প্রায় পেয়েই যাচ্ছিল তারা। তবে ইসাকের সেই শট আবারও রক্ষা করেন টের স্টেগেন।

উল্টো বিরতিতে যাওয়ার আগে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন সার্জিও দেস্ত। অধিনায়কের বুদ্ধিদ্বীপ্ত পাস ডি-বক্সের মধ্যে ফাঁকায় পেয়ে যান তিনি। কোনাকুনি শট বল জালে জড়িয়ে লা লিগায় নিজের প্রথম গোলের দেখা পান যুক্তরাষ্ট্রের এই তরুণ। এতে ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় বার্সেলোনা।

বিরতি থেকে ফিরে এসে আবারো সের্হিনিও দেস্ত এর গোলে এগিয়ে যায় বার্সা। ম্যাচের ৫৩ মিনিটে লেফটব্যাক আলবার পাসে বল জালে জড়িয়ে বার্সার তৃতীয় গোল ও নিজের জোড়া গোল পূর্ণ করেন রাইটব্যাক দেস্ত।

তার তিন মিনিট পরই দেখ গেল পুরোনো সেই দিনের মেসি-বুসকেতসের ঝলক। ৫৬ মিনিটে বুসকেতসের দুর্দান্ত একটা লম্বা পাস ধরে নিজের প্রথম ও দলের চতুর্থ গোলটি করেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। তার ছয় মিনিট পরে বাইসাইকেল কিকে নিজের প্রথম গোলটি প্রায় করেই ফেলেছিলে দেম্বেলে। কিন্তু বল সরাসরি চলে যায় সোসিয়েদাদ গোলকিপারের হাতে। তবে ৬৬ মিনিটে একটি আকর্ষণীয় গোল করেন দেম্বেলে। কিন্তু ভিআরের বিতর্কিত অফসাইডের সিদ্ধান্তে গোলটি বাতিল হয়ে যায়।

তবে বোঝাই যাচ্ছিল দেম্বেলে গোলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল। সেটা বোঝা গেছে ৭১ মিনিটে। একক প্রচেষ্টায় মাঝমাঠ থেকে দৌড়ে এসে বাঁ পায়ের শটে দলকে এগিয়ে দিয়ে নিজের প্রথম গোলটি করেন ফরাসি ফরোয়ার্ড ওসমান দেম্বেলে। তবে ৭৬ মিনিটে কিছুটা ব্যবধান কমান সোসিয়েদাদের স্প্যানিশ মিডফিল্ডার আন্দের বারেনেৎসিয়া।

এরপর নির্ধারিত সময়ের শেষের দিকে আরেকবার এগিয়ে যায় বার্সা। ম্যাচের ৮৯ মিনিটে আলবার আরেকটা পাস ধরে গোল করে নিজের দলের ছষ্ঠ ও নিজের জোড়া গোল পূর্ণ করেন আর্জেন্টাই ফরোয়ার্ড লিওনেল মেসি।

এই ম্যাচটিতে বার্সেলোনার হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়েছেন মেসি। জাভি হার্নান্দেজের ৭৬৭ ম্যাচের রেকর্ড ছাপিয়ে ৭৬৮তম ম্যাচটি খেলেছেন মেসি। দুই গোল ও এক এসিস্টের মাধ্যমে নিজের রেকর্ডের ম্যাচটি রাঙিয়েছেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার। অধিনায়কের এমন রঙিন পারফরম্যান্সের দিনে বার্সা পেয়েছে ৬-১ গোলের বিশাল জয়।

মেসির রেকর্ডের সঙ্গে উপলক্ষ্য ছিল আরো, দলের কোচ রোনাল্ড কোম্যান, তারকা ফরোয়ার্ড আতোয়ান গ্রিজম্যান এবং ডিফেন্ডার জর্ডি আলবার জন্মদিন ছিল ম্যাচ ডে'টি। এতসব উপলক্ষ্য একত্রিত করেই হয়তো বড় জয়টি তুলে নিয়েছে বার্সেলোনা।

এই জয়ে টানা ১৮ ম্যাচ অপরাজিত রইলো বার্সেলোনা। গত ৫ ডিসেম্বরের পর আর হারেনি তারা। এই সময়ে তারা ১৫টি জয় পেয়েছে এবং ড্র তিনটি। প্রথম ১০ ম্যাচে মাত্র ১৪ পয়েন্ট পাওয়া দলটি, পরের ১৮ ম্যাচে তুলে নিয়েছে ৪৮ পয়েন্ট। যা বাঁচিয়ে রেখেছে শিরোপা সম্ভাবনা।

এই জয়ে ২৮ ম্যাচে ৬২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয়তে উঠে এসেছে বার্সেলোনা। সমান ম্যাচে ৫৯ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয়তে নেমে গেছে রিয়াল মাদ্রিদ। সমান ম্যাচে ৬৬ পয়েন্টে নিয়ে টেবিলের শীর্ষে আছে অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ। সমান ম্যাচে ৫৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থস্থানে আছে সেভিয়া।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত