অ্যাথলেটিকোকে থামিয়ে দিলো রিয়াল, লাভটা হলো বার্সার

প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২১, ০৩:০৪

গতকাল পর্যন্ত সমান ২৫তম ম্যাচে সমান ৫৩ পয়েন্ট নিয়ে গোল ব্যবধানে এগিয়ে থেকে পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয়তে ছিল বার্সেলোনা ও তৃতীয়তে ছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ। এদিকে দুই ম্যাচ কম খেলা অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ বার্সা-রিয়ালের থেকে ৫ পয়েন্ট বেশি নিয়ে ছিল টেবিলের শীর্ষে। তবে গত রাতে ওসাসুনাকে হারিয়ে রিয়ালের থেকে পয়েন্ট ব্যবধান বাড়িয়েছে এবং অ্যাথলেটিকোর থেকে পয়েন্ট ব্যবধান কমিয়েছে কাতালানরা।

আজ অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ ও রিয়াল মাদ্রিদের ছিল গুরুত্বপূর্ণ এক ডার্বি ম্যাচ। ম্যাচটি শুধু রিয়াল অথবা অ্যাথলেটিকোর জনই গুরুত্বপূর্ণ ছিল না বরং বর্সেলোনার জন্যও ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বার্সা সমর্থকরা আগে থেকেই হয়তো অঙ্ক কষতে বসেছিল। ডার্বি এই ম্যাচটি যদি রিয়াল জেতে তাহলে অ্যাথলেটিকোর দৌড় কিছুটা হলেও থেমে যাবে। আর তাতে বার্সা-রিয়ালের জন্যই সুবিধা হবে। এতো সিহেব নিকেশ করে বার্সা সমর্থকরা হয়তো আজকের জন্য চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়ালের সমর্থনই করেছে। কিন্তু কি হয়েছে ডার্বি ম্যাচটি? তবে যা হয়েছে তা একমাত্র বার্সেলোনার জন্যই ভালো হয়েছে।

রিয়াল জয় পায়নি। তবে বার্সা–সমর্থকদের ইচ্ছা কিছুটা হলেও পূরণ করেছে। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে অ্যাথলেটিকোর মাঠ থেকে ১-১ গোলে ড্র করে ফিরেছে জিনেদিন জিদানের দল। আর এতেই লা লিগা জমে গেল দারুণভাবে।

রবিবার (৭ মার্চ) অ্যাথলেটিকোর মাঠ স্তাদিও ওয়ান্দা মেত্রোপলিতানোয় স্টেডিয়ামে ডার্বি ম্যাচটি ড্র হওয়ায় রিয়ালের থেকে দুই পয়েন্ট এগিয়ে এবং অ্যাথলেটিকোর থেকে ৩ পয়েন্ট পিছিয়ে থেকে টেবিলের দ্বিতীয়তেই আছে রোনাল্ড কোম্যানের বার্সেলোনা। যদিও দিয়েগো সিমিওনের দল এখনও এক ম্যাচ কম খেলেছে।

এদিন ডার্বি ম্যাচের প্রথমার্ধে রিয়ালকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি। মনে হয় নিজেদের রক্ষণভাগ আটকাতেই ব্যস্ত ছিল। বলই পাচ্ছিল না জিদান শিষ্যরা। বক্সে থাকা একমাত্র খেলোয়াড় করিম বেনজেমা কখনো বল পাচ্ছিলেন, কখনো পাচ্ছিলেন না। অ্যাথলেটিকোর জালে কোনো শটই ছিল না রিয়ালের!

সে তুলনায় অ্যাথলেটিকোর খেলায় ছিল দারুণ পরিকল্পনা। দুর্দান্ত গতিতে আক্রমণে উঠছিল দলটি। প্রথম ১০ মিনিটে বেশ কয়েকবারই ভয় দেখিয়েছে রিয়ালকে। তার পুরস্কারও পেয়ে যায় ধ্রুতই। ম্যাচের ১৫ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে উঠেছিল অ্যাথলেটিকো, সে আক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে ভুল করে বসেন রিয়ালের সেন্টারব্যাক নাচো ফার্নান্দেজ।

মার্কোস ইয়োরন্তের পাস থেকে বল পান এই মৌসুমে বার্সা থেকে অ্যাথলেটিকোতে যোগ দেয়া লুইস সুয়ারেজ, তাকে আটকাতে মাঝমাঠেই ট্যাকল করে বসেন নাচো। কিন্তু ট্যাকল ভুল হলো। সুয়ারেজ ছুটে বেরিয়ে যান। রিয়াল গোলকিপার থিবো কোর্তোয়াকে কোনো সুযোগ না দিয়েই জালে বল জড়ান উরুগুইয়ান এই ফরোয়ার্ড। এতে ১-০ গোলে পিছিয়ে পরে রিয়াল মাদ্রিদ।

পিছিয়ে পরেও রিয়ালের যেন ঘুম ভাঙেনি। তবে বিরতিতে যাওয়ার এক মিনিট আগে রিয়াল একটি পেনাল্টির আবেদন করেছিল। বক্সে অ্যাথলেটিকোর ডিফেন্ডার ফেলিপের হাতে বল লেগেছিল। ভিএআর রেফারিকে আমন্ত্রণও জানিয়েছিল সিদ্ধান্ত আরেকবার ভেবে দেখার। কিন্তু রেফারি হার্নান্দেজ রিয়ালের পক্ষে পেনাল্টি দেননি। পরে এই ১-০ গোলে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যায় জিদানের শিষ্যরা।

বিরতি থেকে ফিরে এসেও ম্যাচ একই ছন্দে এগোচ্ছিল। গুরুত্বপূর্ণ এই ডার্বি ম্যাচটিতে রিয়ালকে যেন খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিল না। দুই একবার বল দখলে রেখেছিল। উল্টো রিয়ালকে পরাপর দুইবার বাঁচিয়েছেন গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া। ম্যাচের ৫৩ ও ৫৪ মিনিটে ডাবল সেভ করেছেন বেলজিয়ান এই গোলকিপার।

ম্যাচের ৭০ মিনিট পর একটু খেলায় ফিরেছিল রিয়াল। মাঝমাঠ দিয়ে আক্রমণের চেষ্টা করায় ৮০ মিনিটের পর বেশ কয়েকটি গোলের সুযোগও সৃষ্টি হয়। আর এরই ফল মেলে ৮৮ মিনিটে। কাসেমিরোর সঙ্গে বল দেওয়া-নেওয়া করে বক্সে ঢুকে পড়েন বেনজেমা। ততক্ষণে মাঝমাঠ থেকে উঠে ‘দ্বিতীয় স্ট্রাইকার’ হিসেবে খেলতে থাকা কাসেমিরো দারুণ পাস পাঠান বেনজেমাকে। কয়েক গজ দূর থেকে নিখুত ভাবে অ্যাথলেটিকোর জালে বল জড়িয়ে দলকে সমতায় ফেরান ফরাসি ফরোয়ার্ড করিম বেনজেমা। পরে এই ১-১ গোলের সমতায় নিয়ে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে মাঠ ছাড়ে দুই নগড় প্রতিদ্বন্দ্বী। এই ড্রতে বেশি লাভ হয়েছে বার্সেলোনারই।

এই ড্রয়ে ২৫ ম্যাচ খেলে ৫৯ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষেই আছে অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ। এক ম্যাচ বেশি খেলে ৫৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয়তে আছে রিয়াল মাদ্রিদ। রিয়ালের সমান ম্যাচ খেলে তাদের থেকে দুই পয়েন্ট বেশি নিয়ে এবং শীর্ষে থাকা অ্যাথলেটিকোর চেয়ে তিন পয়েন্ট কম নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয়তে আছে বার্সেলোনা। এদিকে ২৫ ম্যাচে ৪৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থস্থানে আছে সেভিয়া।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত