দুর্দান্ত মেসি, দুর্দান্ত বার্সেলোনা

প্রকাশ : ০৭ জানুয়ারি ২০২১, ১৪:৩৫

ছবি সংগৃহীত

নতুন বছরে মেসিকে চেনা যাচ্ছে পুরনো চেহারায়। বছরের শুরুতে মেসির পাসে দুর্বল প্রতিপক্ষ হুয়েসকার বিপক্ষে ১-০ গোলের জয়ের পর বুধবার দ্বিতীয় ম্যাচে মেসির জোড়া গোল ও মেসি-পেদ্রিরর যুগলবন্দীতে হুয়েসকার থেকে তুলনামূলক শক্তিশালি দল অ্যাতলেটিক বিলবাওকে হারিয়ে পয়েন্ট টেবিলের তৃতীয়স্থানে উঠে এসেছে কাতালান ক্লাব বার্সেলোনা। যদিও টানা তিন বছর পর বিলবাওয়ের মাঠে জয় পেয়েছে কাতালানরা।

বুধবার (৬ জানুয়ারি) সান ম্যামেস স্টেডিয়ামে স্প্যানিশ লা লিগায় স্বাগতিক অ্যাতলেটিক বিলবাওকে ৩-২ গোলে হারিয়েছে রোনাল্ড কোম্যানের শিষ্যরা। মেসির জোড়া গোলের পাশাপাশি একটি গোল করেছেন পেদ্রি। বিলবাওয়ের হয়ে গোলদুটি করেছেন ইনাকি উইলিয়ামস ও ইকার মুনিয়াইন।

একে তো মৌসুমের শুরু থেকে একের পর এক পয়েন্ট খোয়ানোর ধাক্কা, অন্যদিকে বিলবাওয়ের মাঠ থেকে তিন বছর জয় না পাওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা- দুইয়ে মিলে বার্সেলোনার জন্য চ্যালেঞ্জটা সহজ ছিল না। সেই চ্যালেঞ্জ জয়ে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিলেন বার্সা অধিনায়ক ও সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি।

এদিন ঘরের মাঠে ঝড়ের গতিতেই শুরুটা করেছিল বিলবাও। এই ঝড়েই ভাঙে বার্সা। ম্যাচের মাত্র তৃতীয় মিনিটে বার্সা রক্ষণকে উড়িয়ে দিয়ে দুর্দান্ত এক পাল্টা আক্রমণে স্বাগতিকদের এগিয়ে দেন ইনাকি উইলিয়ামস। মাঝমাঠ থেকে আসা বল ধরে ডিফেন্ডার ক্লেমেন্ত লংলেকে পেছনে ফেলে টের স্টেগানকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়ান উইলিয়ামস। এতে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় বিলবাও।

পিছিয়ে পড়েও লিওনেল মেসির নেতৃত্বে বার্সা খেলোয়াড়েরা শঙ্কা দূর করেন। মেসি-ইয়ং-পেদ্রির, এই ত্রিভুজের কারণে সমতায় ফিরতে বেশি সময় নেয়নি বার্সা। ম্যাচের ১৪ মিনিটে ডি-বক্সের বেশ বাইরে থেকে যে ক্রসটি নিয়েছিলেন মেসি, তা প্রায় বাইরেই চলে যাচ্ছিল। সেটিতে বাইলাইন থেকে লাফিয়ে ভলি করেন ডি ইয়ং, পেয়ে যান ডি-বক্সে ফাঁকায় থাকা তরুণ পেদ্রি, সেখান থেকে দলকে সমাতায় ফেরাতে একটুও ভুল করেননি পেদ্রি। বিলবাওয়ের জালে ঠিকানা খুঁজে নেন স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড পেদ্রি।

এরপরই শুরু হয় বিলবাওয়ের রক্ষণভাগের ওপর হামলা। প্রথমার্ধের বাকি সমটা বিলবাওয়ের রক্ষণভাগকে খুব চাপেই রাখে বার্সাবাহিনী। তবে ম্যাচের ৩৮ মিনিটে মেসির গোলে এগিয়ে যায় কাতালানরা। এবার মেসির গোলে অবদান রাখে প্রথম গোল করা পেদ্রি। মাঝমাঠ থেকে পেদ্রির উদ্দেশ্যে বল বাড়িয়ে ফাঁকায় অবস্থান নেন মেসি। অধিনায়ককে ফাঁকায় দেখে বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাকহিল করেন পেদ্রি। সেটি ধরে অসাধারণ দক্ষতায় বিলবাও গোলরক্ষককে ফাঁকি দেন বার্সা অধিনায়ক। এতে ২-১ গোলে এগিয়ে গিয়ে বিরতিতে যায় বার্সেলোনা।

প্রথমার্ধে আরও অন্তত দুইটি গোল হতে পারত বার্সার। ফরাসি স্ট্রাইকার অ্যান্তনিও গ্রিজম্যানের জোরাল শট রুখে দেন বিলবাও গোলরক্ষক সিমোন। পরমুহূর্তে ডি-বক্সের মুখ থেকে ঠিকঠাক শট নিতে পারেননি মেসি। গোলবারে লেগে ফিরে আসে বল।

দ্বিতীয়ার্ধে ফিরে এসে আরও দুর্বার হয়ে ওঠে বার্সা। ম্যাচের ৫৩ মিনিটে বিলবাওয়ের জালে বল জড়িয়ে আবারও বার্সাকে এগিয়ে দিয়েছিলেন মেসি। কিন্তু সেটি বাতিল হয়ে যায় অফসাইডের কারণে। মিনিট ছয়েক পর মেসির বাম পায়ের ট্রেডমার্ক শট বাইরে চলে যায় দূরের পোস্টে লেগে। ফলে আরও একবার হতাশায় পুড়তে হয় বার্সা অধিনায়ককে।

তবে এর মিনিট তিন মিনিট পর দলকে ফের এগিয়ে দিয়ে নিজের জোড়া গোল পূর্ণ করেন মেসি। ম্যাচের ৬৩ মিনিটে জর্দি আলবার বাড়ানো বল ধরে সেটি মেসির উদ্দেশ্যে এগিয়ে দেন গ্রিজম্যান। উঁচু করে নেয়া শটে বাকি কাজ সারেন বার্সা অধিনায়ক। লা লিগার চলতি আসরে এটি মেসির নবম গোল। যার সুবাদে তিনি যৌথভাবে বসলেন আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকার শীর্ষে। এতেই বোঝা যায় আর্জেন্টাইন তারকা ছিলেন দুর্দান্ত। খুব সম্ভবত এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত নিজের সেরা খেলাটাই খেলেছেন তিনি।

মূলত মেসির দ্বিতীয় গোলের পরেই বার্সার জয় অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গেছিল। তবু আক্রমণের ধার কমায়নি তারা। কিন্তু মেলেনি সুফল। উল্টো নির্ধারিত সময়ের একদম শেষ মিনিটে গোল করে ভয় পাইয়ে দেন মুনিয়াইন। ম্যাচের ৯০ মিনিটের গোলটি পরাজয়ের ব্যবধান কমানো ছাড়া আর কোনো কাজে আসেনি।

তবে দুর্ভাগ্য মেসির, বিলবাওকে দুটি গোল ফেরত দিলেও নিজের হ্যাটট্রিকটা করা হয়ে ওঠেনি। অবশেষে এই ৩-২ গোলের জয়ে পূর্ণ পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ে বার্সেলোনা।

ম্যাচ শেষে সংবাদমাধ্যমকে বার্সা কোচ রোনাল্ড কোম্যান জানান, ‘এভাবেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আজ (গতকাল) যে ধরনের খেলা আমার খেলোয়াড়েরা খেলল, মৌসুমের বাকি সময়টায় সে ধরনের খেলাই খেলতে হবে। গোটা ম্যাচটাই আমার খেলোয়াড়েরা নিয়ন্ত্রণ করেছে।’

মেসিকে নিয়ে নিজের মুগ্ধতা প্রকাশ করে কোম্যান জানান, ‘মেসি সর্বোচ্চটা দিয়েই প্রথম দিন থেকে খেলছে। অনেক বছর ধরে মেসি সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলছে। আমার তো মনে হয় তার কার্যকারিতা এখন অন্য মাত্রার।’

পেদ্রিকে নিয়ে আশাবাদী কোম্যান, ‘বয়সের তুলনায় সে অনেক পরিণত এক খেলোয়াড়। সবচেয়ে বড় কথা, সে মাথা ব্যবহার করে খেলে।’

এই জয়ে ১৭ ম্যাচে ৩১ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয়তে উঠে এসেছে বার্সেলোনা। সমান ম্যাচে ৩৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবেলর দ্বিতীয়তে আছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ। দুই ম্যাচ কম খেলে ৩৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে আছে অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ। ১৮ ম্যাচে ৩০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থস্থানে আছে রিয়াল সোসিয়েদাদ।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত