৫ বছর পর নেপালকে হারাল বাংলাদেশ

প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২০, ১২:২৩

সাহস ডেস্ক

মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন পর দেশের মাঠে ফিরল ফুটবল। প্রায় ১০ মাস পর ফুটবলে ফিরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে হওয়া দুটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচের ফুটবল সিরিজের প্রথম ম্যাচে জীবন ও মাহবুবুর রহমানের গোলে নেপালকে হারিয়ে দারুন জয় পেয়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। এই জয়ে টানা ৫ বছর পর নেপালকে হারাল জামাল ভূঁইয়ারা। নেপালের বিপক্ষে বাংলাদেশের শেষ জয়টি ছিল ২০১৫ সালে।

শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে নেপালকে ২-০ গোলে হারিয়েছে জেমি ডের শিষ্যরা। আর এতেই ২ ম্যাচের টুর্নামেন্টে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল টাইগাররা।

নেপালের বিপক্ষে ৪-২-৩-১ ফরমেশনে খেলিয়েছেন কোচ জেমি ডে। স্ট্রাইকার সুমন রেজা ও গোলরক্ষক আনিসুর রহমানের অভিষেক হয়েছে আজ। প্রথমার্ধের পুরোটা সময় মাঠে ছিলেন আরেক অভিষিক্ত সুমন। স্ট্রাইকার হিসেবে নেপাল গোলরক্ষকের পরীক্ষা নিতে না পারলেও প্রেসিং করে কিছুটা আতঙ্ক ছড়িয়ে ছিলেন। সে সুযোগেই তাঁর পেছনে থেকে নম্বর টেন পজিশনে অনেকটা সহজে খেলার সুযোগ পেয়ে যান নাবীব। যতক্ষণ মাঠে ছিলেন, দারুণ খেলেছেন এই ফরোয়ার্ড।

এদিন ম্যাচের শুরু থেকেই নেপালের বিপক্ষে আধিপত্য বিস্তার করে খেলা শুরু করে বাংলাদেশ। ম্যাচের ৮ম মিনিটে বিশ্বজিৎ ঘোষের লম্বা থ্রো-ইন থেকে গোলের সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় স্বাগতিকরা।

তার দুই মিনিট পর অর্থাৎ ম্যাচের ১০ মিনিটে নাবীব নেওয়াজ জীবনের দুর্দান্ত এক গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। ডান প্রান্ত থেকে সাদ উদ্দিনের দারুণ স্কিলের ফল পেয়েছে দল। ডান প্রান্তে প্রতিপক্ষের রক্ষণকে বোকা বানিয়ে ক্রস দিয়েছিলেন, খুব বেশি জায়গা পাননি, তবু সে অবস্থাতেই দারুণ এক ভলিতে গোল করেছেন নাবীব। গত বছর সেপ্টেম্বরে ভুটানের বিপক্ষে সর্বশেষ গোল করেছিলেন তিনি। সেদিনের মতো আজও নাবীবকে নম্বর টেন পজিশনে খেলিয়ে বাজিমাত করেছেন জেমি।

করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই ম্যাচ দিয়ে দেশের ফুটবল ম্যাচে দেখা গেল দর্শকের উপস্থিতি। এই দর্শকদের আনন্দের উপলক্ষ এনে দেন নাবীব। যদিও খেলা শুরু হতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা ভুলেই গেলেন দর্শকরা।

এরপর বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য সবচেয়ে আফসোসের মুহূর্ত ছিল ২৬ মিনিটে। মিডফিল্ডার মানিকের দূরপাল্লার শট গোলরক্ষকের হাত ছুঁয়ে ক্রসবারে লেগে বাইরে চলে যায়। গোলটি না পেলেও জামালের সঙ্গে ‘ডাবল পিভট’ হোল্ডিং মিডফিল্ডার হিসেবে দারুণ খেলেছেন মানিক। পরে এই ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় জামাল ভূঁইয়া বাহিনী।

প্রস্তুতি ম্যাচে অন্য খেলোয়াড়দের ম্যাচের সুযোগ করে দেওয়ায় এই জুটিকে তুলে আতিকুর রহমান ও সোহেল রানা জুটিকে মাঠে পাঠান জেমি। আতিকুর ও সোহেল ছাড়া বদলি হিসেবে নামানো হয় মাহবুবুর রহমান সুফিল, ইয়াসিন খান ও বিপলু আহমেদকে।

বিরতি থেকে ফিরে এসে শুরুতেই সুমনের বদলি হিসেবে মাঠে পাঠানো হয় মাহবুবুরকে। ম্যাচের ৮১ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন বদলি নামা এই মাহাবুবুর। 

মাঝমাঠে থেকে সোহেলের বাড়ানো বল ধরে ট্রেডমার্ক গতি ও বলের নিয়ন্ত্রণে ডি-বক্সে দিকে ছুটে যান বদলি হিসেবে খেলতে নামা স্ট্রাইকার মাহবুবুর রহমান সুফিল। সেখানে এগিয়ে আসা গোলরক্ষকের পাশ দিয়ে ডান পায়ের দারুণ বাঁকানো শটে দূরের পোস্টে বল জড়িয়ে দেন তিনি। এতে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় টাইগাররা।

যদিও নেপাল ম্যাচে ফেরার জন্য প্ল্যান ‘বি’তে গিয়েছিল। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে চায়নিজ তাইপের বিপক্ষে একমাত্র জয় পেয়েছে নেপাল। সে ম্যাচে জোড়া গোল করেছিলেন অন্যজন বিসটা। দ্বিতীয়ার্ধে লেফট উইং থেকে তাকে সরিয়ে এনে নম্বর টেন পজিশনে নিয়ে এসেছিলেন নেপাল কোচ। কিন্তু তপু-রিয়াদুল জুটির সামনে খুঁজেই পাওয়া যায়নি তাকে। অবশেষে এই ২-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।

নেপালের বিপক্ষে এই জয়টা বাংলাদেশ দলের জন্য দারুণ স্বস্তির। কারণ করোনার কারণে দীর্ঘদিন মাঠে ফুটবল অনুপস্থিত। এর আগে ২০১৩ ও ২০১৮ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নেপালের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। এরপর গত এসএ গেমসে অনূর্ধ্ব-২৩ নেপাল দলের বিপক্ষেও হেরেছিল জামাল ভূঁইয়ারা। এবার সেই পরাজয়ের বৃত্ত থেকে বের হলো জেমি ডের দল।

আগামী মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) সিরিজে দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে নেপালের মোকাবিলা করবে বাংলাদেশ।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত