চলে গেলেন সাকিব-মাহমুদউল্লাহদের পূর্বসুরী

প্রকাশ : ১৯ জুন ২০২০, ১৭:৪৮

সাহস ডেস্ক

চলে গেলেন বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা বাঁ হাতি স্পিনার রামচাঁদ গোয়ালা।

আজ শুক্রবার (১৯ জুন) ভোরে ময়মনসিংহে নিজ বাসভূমে ৮১ বছর বয়সে মারা যান তিনি।

গত ৯ জুন হৃদক্রিয়া জনিত সমস্যার কারণে রামচাঁদ গোয়ালাকে স্থানীয় এক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সুস্থবোধ করায় হাসপাতাল ত্যাগ করেন তিনি। কিন্তু বাড়ি আসার দু’দিন পরে চিরঘুমে শায়িত হন সাবেক এ ক্রিকেটার।

মোহাম্মদ রফিক, আবদুর রাজ্জাক এক সময় বাঁ হাতি স্পিন দিয়ে রাঙিয়েছেন দেশের ক্রিকেট, রেকর্ড বইয়ের পাতা করেছেন সমৃদ্ধ। বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের পরিচিতির অন্যতম অনুসঙ্গও এই বাঁ হাতি স্পিন। রামচাঁদ গোয়ালা ছিলেন তাঁদেরই পূর্বসুরী, পথ প্রদর্শক। বাংলাদেশের টি–টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ময়মনসিংহে নিজের ক্রিকেট জীবনের শুরুতে ছিলেন তাঁরই ছাত্র।

জাতীয় দলে বেশি খেলা হয়নি তাঁর। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছেন দীর্ঘদিন। ৫০ বছরের বেশি বয়সে ক্রিকেট মাঠে দাঁপিয়ে বেড়িয়েছেন তিনি। কেবল খেলে যাওয়াই নয়, গোয়ালা তাঁর গোটা ক্যারিয়ারেই নিজের মান কখনোই নিচে নামতে দেননি।

এক আবাহনীতেই কাটিয়েছেন একটানা ১৫টি মৌসুম। ১৯৬২ সালে ঢাকা লিগে ভিক্টোরিয়া ক্লাবের হয়ে অভিষেক তাঁর। খেলেছেন মোহামেডান, টাউন ক্লাব, শান্তিনগর ও লালমাটিয়া ক্লাবে। ময়মনসিংহ লিগ এক সময় খুব জমজমাট ছিল। সেখানে খেলেছেন পন্ডিতপাড়া ক্রিকেট ক্লাবে আশির দশকের শেষ দিকে অধুনালুপ্ত ক্লাব গ্রেটার ময়মনসিংহ ক্রিকেট ক্লাব বা জিএমসিসিও ধন্য হয়েছিল তাঁর সেবায়। ৫৩ বছর বয়সে ঢাকা লিগে খেলার সৌভাগ্য এখন কোনো ক্রিকেটারের হবে কিনা, ভাবার বিষয় সেটিও।

রামচাঁদ গোয়ালার ক্রিকেট জীবন খুব কাছ থেকেই দেখেছেন ক্রিকেট সংগঠক ও বিসিবির অন্যতম পরিচালক সাজ্জাদুল আলম। বললেন, 'গোয়ালা দা ছিলেন দারুণ একজন টিমম্যান। অনুপ্রেরণাদায়ী এক চরিত্র। দীর্ঘ তাঁর ক্যারিয়ার। ৫০ বছরেরও বেশি বয়সে তিনি খেলে গেছেন। নিজের মান কখনোই নিচে নামতে দেননি।'

জাতীয় দলে হাতে গোনা কয়েকবার খেলেছেন। ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পশ্চিমবাংলা সফরে তিনি ছিলেন। এরপর জাতীয় দলে খেলেছেন ১৯৮৫ সালে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফরে।

দেশের ক্রিকেটের সংগ্রামের দিনগুলিতে রামচাঁদ গোয়ালা ছিলেন বড় এক নাম। কিন্তু এই রমরমা সময়ে তিনি হয়ে ছিলেন অবহেলিত। সাকিব–মাহমুদউল্লাহদের পূর্বসুরীর বোধহয় এটা প্রাপ্য ছিল না।

১৯৪১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর জন্ম নেওয়া এই ক্রিকেটারের শেষ জীবনটা খুব ভালো কাটেনি। অনাদর, অবহেলায় ময়মনসিংহের ব্রাহ্মপল্লীতে আত্মীয়–স্বজনের সঙ্গে থেকেই কাটিয়েছেন জীবনের শেষ দিনগুলো। অকৃতদার এই মানুষটি ভুগেছেন নানা শারীরিক জটিলতায়। ২০১৫ সালে স্ট্রোকের পর একেবারেই ভেঙে যায় তাঁর শরীর। দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে গেলেও ক্রিকেটের প্রতি নিজের ভালোবাসা থেকেই চোখ রাখতেন টেলিভিশনের পর্দায়, দেশের ক্রিকেটে নিজের উত্তরসূরীদের খেলা দেখার জন্য। একজন সাবেক ক্রিকেটার হয়েও তাঁর আর্থিক অবস্থা কেন শোচনীয়, সেটি ভেবে নিশ্চয়ই অবাক হতেন।

সূত্র: প্রথম আলো

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত