করোনাভাইরাস: আপনার ঘরের ক্যাপ্টেন এখন আপনি নিজেই

প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২০, ১৪:৪৮

সাহস ডেস্ক

বাংলাদেশ জাতীয় ওয়ানডে দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ‘আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই ভাল আছেন। যদিও ‘ভাল আছেন’ কথাটা এই মুহূর্তে ঠিক বলা ঠিক কিনা, কারণ সবাই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তারপরও কথা বলতে হবে। করোনাভাইরাস, আমরা সবাই জানি। অনেকেই কথা বলছি, সোশ্যাল মিডিয়ায়। যেখানেই যাবেন দেখবেন, করোনা ভাইরাস নিয়ে সবাই আতঙ্কিত। এবং আতঙ্কিত না হওয়ারও কোনো কারণ নাই। পৃথিবীর সমস্ত বড় বড় দেশগুলো এখন শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবেও বিপর্যস্ত। তারা কোনোভাবেই ট্যাকল দিতে পারছে না।’

ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা করোনা ভাইরাসে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। তার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। এরইমধ্যে দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন ৩৩ জন আর মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে গতকাল ২৩ মার্চ (সোমবার) নিজের অফিসিয়াল ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় দেশের মানুষকে করোনা নিয়ে সতর্কবার্তা দিলেন ৩৬ বছর বয়সী এই সফল সাবেক অধিনায়ক।

মাশরাফি বলেন, ‘এখন আমাদের কি করণীয়। আজকে যত বড় বড় দেশগুলো দেখছি, যেভাবে ভেঙে পড়ছে, আমাদের দেশটা তো এমনিতে ছোট, মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। আমাদের যদি এরকম সংকট আসে, আল্লাহ না করুক, কি হতে পারে আমরা সবাই বুঝতে পারছি।’

তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে করণীয় অনেক কিছু আছে, যেগুলো আমি মনে করি সবারই করা উচিৎ। এক হচ্ছে, ঘরে বসে আল্লাহকে ডাকা, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া। আল্লাহর কাছে ডাকা যে, আল্লাহ আমাদের রহমত করুন। এই ধরনের দুর্যোগ থেকে আমাদের সহযোগিতা করুন যেন করোনা না হয় এবং সবাই যেন সুস্থ থাকে।’

পরের করণীয় হিসেবে ম্যাশ বলেন, ‘অবশ্যই অবশ্যই প্রবাসী ভাই-বোনেরা যারা বিদেশে থাকেন, আসছেন দেশে বা যারা বেড়াতে গিয়েছিলেন আর দেশে আসছেন, তাদের কিন্তু অনেক কিছু করার আছে। প্রথম হচ্ছে নিয়ম-কানুনগুলো অবশ্যই মেনে চলা। কোয়ারেন্টাইন এই শব্দটা ব্যবহার করে আমি বলব, গৃহবন্দী থাকা। সেটা পরিবার নিয়ে না, আপনি আলাদা ১৪ দিন থাকা। ১৪ দিন পার হওয়ার পরে যদি আপনি অসুস্থ না হোন তখন আপনার পরিবারকে নিয়ে ঘরে থাকা। যতক্ষণ না পযর্ন্ত চিকিৎসক বা সমাজের উচ্চ-পদস্থরা ঘোষণা না করছেন যে, আমরা নিরাপদ, ততক্ষণ ঘরে থাকা।’

তিনি বলেন, ‘এরপরে অবশ্যই আমাদের অনেক করণীয় আছে। যেটা হচ্ছে, নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধোয়া। ১৫-২০ মিনিট অন্তর অন্তর নিয়মিত পানি পান করা এবং আপনার ঘর, আপনার চারপাশটা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। আমাদের এসব নিয়ম-কানুনগুলো মেনে চলতে হবে। এর থেকে কঠিন পরিস্থিতে যাওয়ার পরে আমরা কিন্তু আর সুযোগ পাবো না। তাই আমাদের উচিৎ এখন থেকেই এই জিনিসটাকে শক্ত হাতে প্রতিহত করা। কারণ এটা একটা রাষ্ট্রীয় সংকট হয়ে যেতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা কেউ জানিনা আশাপাশে কারা আছে। আমরা যে বের হচ্ছি, কার হাত ধরছি, কি করছি, কেউ জানি না আসলে এ ভাইরাসটা কি নিয়ে পথ চলছে। কারণ এ ভাইরাসটা ১৪ দিন সময় নেবে আপনার বুঝার জন্য। তাই আমার কাছে মনে হয় যে, এটা গভীরভাবে চিন্তা করার ব্যাপার।’

ম্যাশ সবাইকে ঘরে থাকার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমরা যেটা গুরুত্ব দিচ্ছি না সেটা যদি আকস্মিকভাবে আমাকে, আপনাকে, আপনার পরিবারকে, পরিবারের কাউকে বা সামাজিকভাবে আঘাত করে সেটা কিন্তু সামাল দেওয়া খুব কঠিন হবে। আমি আগেও বলেছি, ইতালির মতো দেশ, ইংল্যান্ড-স্পেন-চীন বলেন, সবাই কিন্তু হিমশিম খাচ্ছে। সেখানে আমরা কতটুকু পারবো তা ভাবার সময় এসেছে। কারণ দেশটা অনেক ছোট, মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। আমাদের যে করণীয় জিনিসগুলো আছে, আমরা করি।’

মাশরাফি আরও বলেন, ‘আপনার ঘরের ক্যাপ্টেন কিন্তু এখন আপনি নিজে। আপনি যদি আপনার ঘরের ক্যাপ্টেন্সি ঠিকভাবে করতে পারেন, আমি নিশ্চিত, আমরা কিছুটা হলেও আক্রান্তের সংখ্যা কমাতে পারবো। অন্যথা দুর্যোগ হওয়ার সুযোগ বেশি। তাই আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ আপনার ঘরে থাকুন। প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ…’

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত