বাংলাদেশকে প্রায় হারিয়েই দিয়েছিল জিম্বাবুয়ে

প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২০, ২২:১০

মাশরাফিদের রীতিমতো ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল জিম্বাবুয়ের অষ্টম উইকেট জুটি ডোনাল্ড তিরিপানো ও টিনোটেন্ডা মোতুমবদজি। ৭৬ বলে ৮০ রানের দুর্ধর্ষ এক জুটি গড়ে প্রায় জিতেই গিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। তবে মোতুমবদজিকে আউট করে এই জুটি ভাঙেন আল-আমিন।

তারপরও থেমে থাকেনি তিরিপানো। শেষ ওভারে লাগবে ২০ রান। সেই ওভারের তৃতীয়-চতুর্থ বলে দুটি ছক্কা হাকালেন তিরিপানো। তখনই ভয় ঢুকে গেল মাশরাফিদের ও সমর্থকদের মনে। কিন্তু না শেষপর্যন্ত পারলনা তিরিপানো। অবশেষে শেষ হাসিটা হাসল স্বাগতিকরা।

তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে তামিমের ঝড়ো সেঞ্চুরি ও রেকর্ডের দিনে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে রোমাঞ্চকর জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতে নিল স্বাগতিক বাংলাদেশ।

আজ ৩ মার্চ (মঙ্গলবার) সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়েকে মাত্র ৪ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে ২-০তে এগিয়ে থাকল টাইগাররা। এবার শুধু হোয়াইটওয়াশের পালা।

এদিন টসে জিতে সিরিজ নিশ্চিত করার জন্য আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ড্যাশিং তারকা তামিম ইকবালের সর্বোচ্চ ১৫৮ রানে ভর করে ৩২২ রান করে বাংলাদেশ।

যদিও গত ১৯ মাস ধরে তামিমের ব্যাটে চলছিল দারুন খরা। সেই সাথে পুড়ছিলেন সেঞ্চুরির খরায়ও। এর জন্য সমালোচনার ঝড় উঠে গেছে ক্রিকেট পাড়ায়। গত বিপিএলেও ধীরলয়ের ব্যাটিংয়ের কারণে শুনতে হয়েছে অনেক সমালোচনা। সে জন্যই গতকাল অনুশিলনের সময় ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জির সঙ্গে আলাদা করে সময় কাটিয়েছিলেন তমিম। তবে ম্যাকেঞ্জির পরামর্শ নিয়েই আজ নিজেকে ছাড়িয়ে সব সামলোচকদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছেন এই বাঁ-হাতি ওপেনার।

এর আগে ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে শেষবার সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন তামিম। সে সিরিজে দুর্দান্ত তামিম পেয়েছিলেন দুই সেঞ্চুরি এরপর কেটে গেছে ১৯ মাস। এর মধ্যে গত ২৩ ইনিংসে ৫ ফিফটি পেলেও সেঞ্চুরি দূরের বিষয় হয়েই থাকছিল। উল্টো নিজেকে খোলসের ভেতর ঢুকিয়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিপক্ষে। সমালোচকেরা সোচ্চার ছিলেন তাঁর ধীরলয়ের ব্যাটিং আর পাওয়ার প্লেতে হাত খুলে না খেলা নিয়ে। প্রথম ম্যাচেও ৪৩ বল খেলে ২৩ রান করে আউট হয়েছিলেন তামিম।

আজ নিজেকে যেন প্রমাণ করতেই নেমেছিলেন তামিম। দলের হয়ে ব্যাট করতে নেমে জ্বলে উঠলেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান। ব্যাটিং কোচের কথা অনুযায়ী প্রথম পাওয়ার প্লেতে বাউন্ডারি মারলেন ১০টি। ১১ তম ওভারে ক্যারিয়ারের ৪৯তম ফিফটি পূরণ করেন। এরপর কিছুটা ধীর গতিতে ব্যাটিং করলেও খুব পিছিয়ে ছিলেন না। নব্বইয়ের ঘরে এসে ১৮ বল খেলেই সেঞ্চুরির দেখা পান তিনি। ১০৬ বলে সেঞ্চুরি পূরণ করে ১৫৮ রানে পৌঁছতে তিনি খেলেছেন মাত্র ৩০ বল। অর্থাৎ ১৩৮ বলে ২০টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১৫৮ রান করে ছয় মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ তুলে দেন তামিম ইকবাল।

এর আগে ওপেনিং জুটির সমাপ্তি ঘটে দুর্ভাগ্যজনকভাবে। তামিমের শট বোলার মুম্বার পায়ে লেগে ভেঙে দেয় ননস্ট্রাইকিং প্রান্তের স্টাম্প। লিটন দাস ছিলেন দাগের বাইরে। গত ম্যাচে সেঞ্চুরি করা লিটন ১৪ বলে ৯ রান করে ফেরেন।

এরপর উইকেটে আসা নাজমুল হোসেনও রান আউটের শিকার। এটির জন্য কিছুটা হলেও তামিমকে দায়ী করা চলে। রানটা প্রথমে নাজমুল নিতে চাননি। ওয়েসলি মাধেভেরাকে শর্ট ফাইন লেগে খেলেছিলেন নাজমুল। কিন্তু অন্য প্রান্ত থেকে রান নিতে পড়িমরি করে ছুটেছিলেন তামিম। পৌঁছে গিয়েছিলেন অন্যপ্রান্তেও হ্যাঁ-না দ্বিধায় ভুগে নাজমুল শেষ পর্যন্ত তামিমকে বাঁচাতেই নিজের উইকেট উৎসর্গ করেন তিনি।

এরপর ৫০ বলে ৬ চারে ৫৫ রান করে মাধভেরের বলে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মি. ডিপেন্ডেবল মুশফিকুর রহিম। পরে ৫৭ বলে ৩ চারে ৪১ রান করে শুমার বলে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এরপরে ১৮ বলে ৩ চার ১ ছক্কায় ৩২ রান করে অপরাজিত থাকেন মোহাম্মদ মিথুন।

জিম্বাবুয়ের হয়ে কার্ল মুম্বা ও ডোনাল তিরিপানো ২টি করে এবং চার্লটন শুমা ও ওয়েসলি মাধেভেরা ১টি করে উইকেট নেন।

টাইগারদের দেওয়া ৩২৩ রানারে জবাবে খেলতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩১৮ রন পর্যন্ত তুলেছিল জিম্বাবুয়ে। আর মাত্র চার রান হলেই টাইগারদের হারিয়ে দিয়েছিল সফরকারীরা।

শেষ ৪৮ বলে জিম্বাবুয়ের দরকার ছিল ৯৮ রান, হাতে মাত্র ৩ উইকেট। তখন পর্যন্ত তো জেতার পথেই বাংলাদেশ। কিন্তু হঠাৎ স্বাগতিকদের মনে ঢুকিয়ে দিল তিরিপানো ও মুতুমবজি। শফিউল ও আল-আমিনের উপর ভর করে জিম্বাবুয়ের লোয়ার অর্ডারের এই দুই ব্যাটসম্যান ব্যাট চালিয়ে ম্যাচ প্রায় ঘুরিয়েই দিচ্ছিলেন!

অষ্টম উইকেটে এই যুগল দশের ওপর রানরেটে খেলে দলকে জয়ের বেশ কাছে নিয়ে আসেন। শেষ দুই ওভারে দরকার ছিল ৩৪ রান। শফিউল ইসলামের করা ৪৯তম ওভারে ২ বাউন্ডারিসহ ১৪ রান তুলে নেন তিরিপানো-মুতুমবজি।

এরপর শেষ ওভারে দরকার ২০ রান, খুবই সম্ভব। বল করতে আসেন আল-আমিন হোসেন, যিনি কিনা ৯ ওভারে কোনো উইকেট না নিয়ে ৭০ রান দিয়ে বসেছেন আগেই।

শেষ ওভারে শুরুটা ভালোই ছিল আল আমিনের। প্রথম বলে দিয়েছিলেন এক রান, পরের ডেলিভারি ওয়াইড দিলেও দ্বিতীয় বলে মুতুমবজিকে (২১ বলে ৩৪) লং অনে লিটন দাসের ক্যাচ বানিয়ে স্বস্তি ফিরিয়েছিলেন এই পেসার। কিন্তু তৃতীয় বলে বড় এক ছক্কা হাঁকিয়ে দেন তিরিপানো। চতুর্থ বলে আবারও ছক্কা। শেষ দুই বলে দরকার তখন মাত্র ৬ রান। এমন মুহূর্তে পঞ্চম বলটি দারুণ বুদ্ধিমত্তায় বাউন্সার দেন আল আমিন, চলে যায় উইকেটের পেছনে।

শেষ বলে জিম্বাবুয়ের চাই ছক্কা, স্ট্রাইকে সেট ব্যাটসম্যান তিরিপানো। তখনও সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু ওই বলটি আর আকাশে তুলতে পারলেন না তিরিপানো, এক রানেই সন্তুষ্ট থাকতে হলো জিম্বাবুয়েকে। ট্রাজেডি নায়ক হয়ে রইলেন ২৮ বলে ২ চার আর ৫ ছক্কায় ৫৫ রান করা তিরিপানো।

এর আগে দলের হয়ে আজকের ম্যাচের প্রথম এবং নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রথম হাফসেঞ্চুরি করেন তিনাশি কামুনহুকাওয়ে। ৭০ বলে ৫ চার ২ ছক্কায় ৫১ রান করে তাইজুলের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন এই ওপেনার কামুনহুকাওয়ে। এরপর ৫৭ বলেন ৫ চারে ৫২ রানের একটি ফিফটি করে তাইজুলের বলে এলবি হয়ে ফেরেন ওয়েসলি মাধেভেরা।

পরে ৫৭ বলে ৫ চার ২ ছক্কায় ৬৬ রানের দুর্দান্ত ফিফটি করে মাশরাফির বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সিকান্দার রাজা। ২১ বলে ৫ চারে ৩৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে আল-আমিনের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন টিনোটেন্ডা মোতুমবদজি। এরপর ২৮ বলে ২ চার ৫ ছক্কায় ঝড়ো ফিফটি করে অপরাজিত থাকেন বাংলাদেশ দলকে ভয় পাইয়ে দেওয়া ডোনাল্ড তিরিপানো।

টাইগারদের হয়ে তাইজুল ইসলাম ৩টি এবং মাশরাফি, শফিউল, মিরাজ ও আল-আমিন ১টি করে উইকেট নেন।

ম্যাচ সেরা হয়েছেন তামিম ইকবাল।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত