বাফুফের ম্যানেজমেন্ট স্কিল জিরো: তরফদার রুহুল আমিন

প্রকাশ | ২৯ জানুয়ারি ২০২০, ১৯:০০ | আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২০, ১৯:১৩

অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) ম্যানেজমেন্ট কমিটির স্কিল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব এবং বাংলাদেশ ক্লাবস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তরফদার মো. রুহুল আমিন। একই সঙ্গে বাফুফের ম্যানেজমেন্ট স্কিল ‘জিরো’ বলেও মন্তব্য করেন।

আজ ২৯ জানুয়ারি (বুধবার) ক্রীড়া সাংবাদিকদের অন্যতম সংগঠন বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনে (বিএসজেএ) এসব কথা বলেন রুহুল আমিন।

১২ বছর বাফুফের মসনদে কাজী সালাউদ্দিন। বাফুফে সভাপতি হিসেবে এতদিন ক্ষমতায় থেকেও ফুটবলে উন্নতি করতে পারেননি। ফুটবলের ১৪২-১৪৩ র‌্যাংকিং থাকা অবস্থায় ক্ষমতায় বসেন সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিটি। সেই ফুটবলকে গেল ১২ বছরের শুধু নিচেই নামিয়েছেন। বর্তমান র‌্যাংকিং ১৮৭- তে।

সঠিক পরিকল্পনার অভাবেই ফুটবল ঠিকঠাক এগোয়নি, ফুটবলে একটা শক্ত কাঠামো তৈরি হয়নি, ভিত মজবুত হয়নি মন্তব্য তফরদার রুহুল আমিনের। তিনি বলেন, ‘ফুটবলের স্ট্রাকচার ঠিক করা হয়নি। বাফুফের ম্যানেজমেন্ট স্কিলটা ভালো না। স্ট্রাকচারই ঠিক নেই। এটা ঠিক করতে হলে তৃণমূল থেকে ফুটবলার তৈরি করে আনতে হবে। তৃণমূল ফুটবল বলতে স্কুল লেভেল থেকে তা চালু করতে হবে; উপজেলা লেভেল পর্যন্ত যেতে হবে।’

তরফদার আরো বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী কাপটা আবারও চালু করতে হবে। আমাদের প্রিমিয়ার লিগের দু’চার ক্লাব বাদে বেশির ভাগের অবকাঠামো ঠিক নেই। ফুটবল ফেডারেশন একটা মাদার অর্গানাইরেশন হিসেবে দায়িত্ব ছিল একাডেমি তৈরি করার। একাডেমিতে আন্তর্জাতিক মাসনদ প্লেয়ার তৈরি করার। যে প্লেয়ারগুলো বিভিন্ন ক্লাবগুলোতে খেলবে এবং সেই প্লেয়ারদের নিয়ে একটি শক্তিশালী জাতীয় দল গঠিত হবে। সেই জিনিসগুলো আমাদের এখানে নেই।’

১২ বছর ক্ষমতায় থেকে ফুটবলকে সঠিক জায়গা নিতে পারেননি বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে তো সাফল্য পাচ্ছেই না দল, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ, এশিয়ান লেভেলেও একটা জায়গা তৈরি হয়নি- প্রশ্ন তোলেন রুহুল আমিন।

তিনি বলেন, ‘একটা জায়গায় ১২ বছর বসে থাকলে ফুটবল যেখানে যাওয়া উচিত ছিল, সেখানে যায় নাই। কেন আমরা সাফে চ্যাম্পিয়ন হতে পারছি না; এশিয়ান লেভেলে কেন একটা জায়গা এখনো তৈরি করতে পারিনি। সাফের খবর নেই, এশিয়ার খবর নেই, আমরা স্বপ্ন দেখি ২০২২ বিশ্বকাপ খেলব। এই ধরনের চিন্তা ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে পরিবর্তন দরকার। সবাই আমরা এক সঙ্গে মাঠে নেমেছি।’

গেল ১২ বছরে প্রিমিয়ার লিগ মাঠে রেখেছে বাফুফে- এ কথা প্রায়শই গর্ব করে বলেন কাজী সালাউদ্দিন। কিন্তু লিগ নিয়ে প্রতিনিয়ত যে তামাশা তিনি করেন, তার কারণে ক্লাবগুলো, জাতীয় দলের যে ক্ষতি হয় সেটা আড়ালেই ঢাকা পড়ে যায়।

লিগ নিয়ে কখনই কোনো সঠিক পরিকল্পনা করতে পারেননি বাফুফের সভাপতি। কখনও শীত কালে, কখন গরমে আবার কখন বর্ষায় এটি আয়োজন করেছে। লিগের তারিখ একাধিকবার পিছিয়ে তো রীতিমতো রেকর্ডই গড়েছেন!

আসন্ন ২০১৯-২০ লিগ নিয়েও আরেকবার তামাশা করলেন। ইতোমধ্যে তিন দফা তারিখ পিছিয়েছেন। যেখানে বিদেশী খেলোয়াড় কমানোর দাবি তুলেছে জাতীয় দলের কোচ জেমি ডে, অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া সেখানে এবার ৪ জন থেকে ৫ জনে বাড়িয়েছেন।

লিগে অংশ নেয়া ক্লাবগুলোর অংশগ্রহণ ফি ঠিক মতো পরিশোধ করা হয় না এ নিয়েও অনেকবার কথা উঠেছে। ক্লাবগুলো লিগে অংশ না নেয়ার হুমকি দিয়েছে। বার বার লিগ পেছানোর ব্যাপারে রুহুল আমিন বলেন, ‘লিগ পেছালে যা হয় আমাদের চট্টগ্রাম আবাহনী কিংবা অন্য ক্লাব যারা বিদেশি খেলোয়াড় এনেছে তাদের তো বসিয়ে বসিয়ে টাকা দিতে হবে। এক মাস যদি লিগ পেছানো হয় তাহলে ১ লাখ থেকে/ ৫০ হাজার ডলার আমাদের বাড়তি গুণতে হয়। লিগ পেছানোর কারণে ক্লাবগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ক্লাব ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া মানে ফুটবল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। এই জিনিসগুলো মাথায় রেখে কাজ করা উচিত ছিল।’

রুহুল আমিন বলেন, ‘টোটালি বাফুফের ম্যানেজমেন্ট স্কিল জিরো। ম্যানেজমেন্ট স্কিল না থাকার কারণে আমরা পদে পদে বিপদে পড়ছি। যে কোনো ক্লাব যে কোনো সময় বসে যেতে পারে টাকার কারণে। সিডিউল অনুযায়ী রাখার কথা ছিল সেটা করতে পারছে না। গতবার ২০ লাখ টাকা করে দেয়ার কথা ছিল যার ৫০ ভাগ পরিশোধ করেছে, অনেকে টাকা পায় নাই। ফুটবল মাঠে রাখতে হবে এটা সবার কথা। লিগ হতে হবে, দেরিতে হলেও। বল মাঠে রাখতেই মাঠে হবে।’

তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালে আমরা যখন লিগের স্পন্সর ছিলাম তখন দেশের সাতটি ভেন্যুতে খেলা হয়েছিল। প্রথমবারের মতো এই ঘটনা লিগে ঘটেছে। আমরা সাইফ পাওয়ারটেক থেকে সেটা করেছিলাম। জাঁকজমকভাবে আমরা সেটা আয়োজন করেছি। বিভিন্ন কারণে লিগের ভেন্যু সংকুচিত হয়ে এসেছে। যে কমিটমেন্ট ছিল লিগে অংশগ্রহণে মানি এখনও অনেক ক্লাবকে দেয়া হয়নি।’

রুহুল আমিন আরো বলেন, ‘অনেকে আমাকে ফোন করেছেন। ক্লাবগুলো আমাকে বলেছে আমাদের তো টাকা দিচ্ছে না। টাকা না দিলে আমরা বিভিন্ন লিগে কেমন করে খেলব? আমি বলেছি আপনারা লিগ কমিটিতে আলাপ-আলোচনা করেন, দেখেন তারা কি বলে। সিদ্ধান্ত তো ওনাদের হাতে। আমরা যখন লিগের স্পন্সর ছিলাম; তখন ক্লাবগুলোকে ৪০ লাখ টাকা করে দিয়েছিলাম। ওই রেফারেন্সই সবাই দেয় কেন এবার তা দেয়া হবে না। এটা তো ফুটবল ফেডারেশনের ইস্যু। তারা না করলে কি করার!’

বিএসজেএসর আমন্ত্রণে সংগঠনটি পরিদর্শনে আসেন তরফদার মো. রুহুল আমিন। এ সময় বিএসজেএর সভাপতি মোতাহের হোসেন মাসুম, সাধারণ সম্পাদক রায়হান আল মুঘনী, সিনিয়র সাংবাদিক মঞ্জুরুল হক, বিএসজেএ সাবেক সাধারণ সম্পাদক জনকণ্ঠের ক্রীড়া সম্পাদক মুজিবুর রহমান, হাসান উল্লাহ খান রানাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।