গোলাপী বলের প্রথম টেস্ট; নতুন করে আসবে কী পুরাতন কেউ?

প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০১৯, ১৯:০৭

ক্রিকেটের মক্কা খ্যাত কলকাতার ইডেন গার্ডেনে আয়োজিত হচ্ছে উপমহাদেশের অন্যতম দুই পরাশক্তি ভারত-বাংলাদেশের দিবারাত্রির প্রথম টেস্ট। গোলাপি বলের খেলার এই ম্যাচকে ঘিরে দারুন সব আয়োজনই করছেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড প্রধান 'প্রিন্স অফ কলকাতা' খ্যাত সৌরভ গাঙ্গুলী। ইতোমধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে সেই টেস্টের ১ম তিনদিনের সকল টিকেট।

সৌরভের আমন্ত্রণে এই টেস্টের উদ্বোধনী তে উপস্থিত থাকবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। উপস্থিত থাকবেন ভারত বাংলাদেশ টেস্টে অংশ নেওয়া দুদলের সকল খেলোয়াড়। জানা যায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসেবে থাকবেন সপরিবারে বাংলাদেশ ওয়ানডে ক্রিকেট দলের সফলতম অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা।

এদিকে ইন্দোরে প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ নাস্তানবুদ হয়েছে স্বাগতিক ভারতের কাছে, পেতে হয়েছে ইনিংস পরাজয়ের লজ্জাও। নিরাপদ অবস্থানে থাকার জন্য এই টেস্টের একাদশে চারজন বোলার নিয়ে নামে বাংলাদেশ দল, কিন্তু ঠেকানো যায় নি ইনিংস পরাজয়ের লজ্জা। ভারতীয় পেসার ত্রয়ীর সামনে বাংলাদেশের ব্যাটাররা ছিলো রীতিমতো অসহায়। বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণে সবচেয়ে অভাব ছিল একজন কার্যকর পেসারের, যিনি টানা লাইন লেংথ ঠিক রেখে এক জায়গায় বল করে যাবেন। 

কলকাতা টেস্টের জন্য ভারত বাংলাদেশ স্কোয়াডে থাকা তরুণ উদীয়মান ওপেনার সাইফ হাসান ইঞ্জুরির কারণে খেলতে পারবেন না। তার বদলে একজন ব্যাটসম্যান এর কথাই মাথায় আসবে হয়তো টিম ম্যানেজম্যান্ট এর।

কিন্ত বাংলাদেশ দলে একজন ব্যাটসম্যান এর চেয়ে একজন বোলারের অভাব বড্ড বেশী প্রকট, বিশেষত একজন পেসারের। প্রথম টেস্টের সেরা বোলার আবু যায়েদ রাহীর সঙ্গী এবাদত হোসেন দারুণ বল করলেও অভাব ছিলো অভিজ্ঞতার। এই দুজন দলে থাকলেও কলকাতা টেস্টে বোলিং আক্রমণে আরেকজন পেসারের বড্ড বেশী অভাব। স্কোয়াডে থাকা মোস্তাফিজুর রহমান শুরুতেই প্রতিভার ঝলকে সবাইকে বিমোহিত করলেও তার পড়তি ফর্ম এবং একাগ্রতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ক্রিকেট ভক্তরা। স্কোয়াডে থাকা আরেক পেসার আল আমিন হোসেন দীর্ঘদিন পর দলে ফিরলেও ঠিক কতটা কার্যকর হবেন তা ভাবনার বিষয়।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাতীয় লীগে রুবেল, খালেদরাও আহামরি কোন পারফর্ম করেন নি। গোলাপি বলের প্রথম ম্যাচ দু দলের জন্যই প্রথম। তাই এখানে তরুণ প্রতিভার থেকেও বেশী কার্যকর হবে অভিজ্ঞতার ঝুলি। দেশের সেরা প্লেয়ার সাকিব আল হাসান নিষিদ্ধ ক্রিকেট থেকেই, দলে অভিজ্ঞ মুশফিক মাহমুদুল্লাহ, মমিনুল  রা থাকলেও তা যেন যথেষ্ট নয়।

ঠিক এই ক্রান্তিকালেই ১৮ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ৩৬ বছর বয়সী তথাকথিত এক বুড়োকে কী বাজির তাস বানাতে পারে না নির্বাচকরা?

ভারত সফরে যাওয়ার আগ থেকেই বলা হচ্ছিল এই সফরের টেস্টে বাংলাদেশের হারানোর নেই কিছুই, ঝুঁকি নেওয়ার এর থেকে ভালো সুযোগ কী আর আছে?

২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দেশকে প্রথম টেস্টে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পেলেও সেই টেস্ট পুরোটাও খেলতে পারেননি ইঞ্জুরিতে পড়ে। এরপর আর টেস্ট খেলা হয় নি মাশরাফি বিন মর্তুজা তথা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পেস ইউনিটের এযাবৎকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বোলারের। কিন্ত ক্রিকেটের অভিজাত এই সংস্করণকে এখনো আনুষ্ঠানিক ভাবে বিদায় জানানি দেশসেরা এই পেসার।

পরিসংখ্যান দিয়ে মাশরাফিকে বিচার করা যাবে না কখোনই। তবুও ২০০১-০৯ সালের মাঝে ৩৬ টেস্টে মাশরাফির উইকেট সংখ্যা ৭৮ টি, ৯৯৮ ওভার বল করে ২০২ টি মেডেন আদায় করা মাশরাফির বোলিং এভারেজ ৪১.৫৩। এর পাশাপাশি ৬৭ ইনিংসে ব্যাট হাতে নেমে ৭৯৭ রান করা মাশরাফির ঝুলিতে অর্ধশতক আছে ৩ টি।

দেশের হয়ে অন্তত একটা টেস্ট খেলে অবসর নেওয়ার স্বপ্নে বিভোর থাকা মাশরাফি সম্প্রতি ওজন কমিয়েছেন ৭ কেজি, গত কয়েকবছরে বড় কোন ইঞ্জুরিতে না পড়া বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই রাজপুত্র কী একটি সম্মানজনক বিদায় প্রাপ্য নন?

বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো খেলছে গোলাপি বলের ক্রিকেট, খেলাও উপমহাদেশে, গ্যালারি ভর্তি দর্শকের পাশাপাশি মাঠে থাকবেন দুদেশের সরকার প্রধান। অধিনায়কের হাতে গোলাপি বল দিতে হেলিকপ্টার থেকে বল নিয়ে নামবেন প্যারা ট্রুপাররা, আরও নানা রকম বর্নাঢ্য আয়োজন তো করছেই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড।

ঠিক এমন একটা মাইলফলকের সামনে, দেশের ক্রিকেটেরই অন্যতম সেরা মূহুর্তে, একজন ভালো মানের পেসারের অভাবে ভুগতে থাকা বাংলাদেশ টেস্ট দলে প্রথমবারের মতো যদি গোলাপি বল হাতে কলার উচিয়ে দোড়াতে দেখা যায় ক্রিকেট প্রেমী বাঙ্গালীর নয়নমণি, নড়াইল বাসীর প্রিয় পাগলা 'মাশরাফি বিন মর্তুজা'কে তবে কী রোমাঞ্চিত হবে না দুদেশের দর্শকেরা?

তার দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন নেই কারও, ৩৬ বছর বয়সে এসেও ৭ কেজি ওজন কমিয়ে ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন তোলাদের মুখেও ছুড়েছেন চুনকালি।

দলে নেওয়া যায় কী যায় না? তা নিয়ে যুক্তিতর্ক হতে পারে, খেলার মতো অবস্থায় আছেন কিনা তা নির্বাচকরাই ভালো বুঝবেন।

তবে ক্রিকেট প্রেমীরা তো স্বপ্ন দেখতেই পারেন, স্বপ্ন দেখতে তো আর সমীকরণ লাগে না।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত