বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচেই যত বিতর্ক

প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০১৯, ১৮:০৫

সাহস ডেস্ক

যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে কাল এক ভারতীয় দর্শক প্ল্যাকার্ডে লিখে এনেছেন ‘রোহিত শর্মা আউট ছিল!’ বাংলাদেশ-ভারত ফুটবল ম্যাচ দেখতে আসা এই দর্শক কী বুঝিয়েছেন বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই। রোহিতকে করা রুবেল হোসেনের ‘নো বল’ নিয়ে তুমুল হইচই হয়েছিল ২০১৫ বিশ্বকাপে।

মেলবোর্নের সেই কোয়ার্টার ফাইনালে বিতর্কিত ওই ‘নো বলে’ নতুন জীবন উপহার পেয়ে রোহিত শর্মা পরের ৪৬ করেছিলেন ২৪ বলে। আম্পায়ারের এ সিদ্ধান্তে ম্যাচের লাগাম হাতছাড়া হয়ে যায় বাংলাদেশের। রোহিত ভারতকে এগিয়ে নেন তিন শর পথে। সে ঘটনাই যেন একটু খোঁচা দিয়ে কাল মনে করিয়ে দিলেন ভারতীয় দর্শক।

ইদানীং বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ হলেই কীভাবে যেন বিতর্কের উপাদান এসে জড়ো হয়, খেলাটা ক্রিকেট কিংবা ফুটবল হোক। ২০১৮ এশিয়া কাপের ফাইনালে লিটন দাসের পা লাইনে থাকার পরও স্টাম্পড হওয়া নিয়ে তো কম বিতর্ক হয়নি? যদিও ক্রিকেটের আইন বলে ব্যাটসম্যানের ব্যাট বা পায়ের গোড়ালি দিয়ে ব্যাটিং ক্রিজ ছুঁলেও (লাইনে থাকলে) ব্যাটসম্যান আউট হবেন। আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত তাই ভুল ছিল না। কিন্তু আম্পায়ার চাইলে “বেনিফিট অব ডাউট” ব্যাটসম্যানকে দিতে পারতেন। কেন দেননি—সেটা নিয়ে কথা হলেও হতে পারত। কিন্তু সেটি রূপ নিল রীতিমতো হইচইয়ে।

কদিন আগে কলম্বোয় যুব এশিয়া কাপের ফাইনালে মুখোমুখি বাংলাদেশ ও ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দল। সেখানেও বিতর্কের ছোঁয়া। ভারতের কাছে ৫ রানে হারেন বাংলাদেশের যুবারা। হাতে ২ উইকেট রেখে জয় থেকে ৬ রান দূরে থাকতে আম্পায়ারের ভুল এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্তের খেসারতে আউট হন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান তানজীম (৩৫ বলে ১২ রান)। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় ভারতীয় বোলার আনকোলেকারের বলটি তার ব্যাটে লেগেছিল। এমনকি টিভিতেই বল ব্যাটে লাগার শব্দ শোনা গেছে। কিন্তু অবাক করে আউট দেন আম্পায়ার। মাঝে দুই বল পর শেষ উইকেট তুলে নেন আনকোলেকার। ১০১ রানে অলআউট হয়ে ম্যাচটা হেরে যায় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। দেশের ফিরে বাংলাদেশ যুবারা আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এ তো ক্রিকেট গেল, বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না বাংলাদেশ-ভারতের ফুটবল ম্যাচেও। সবশেষ উদাহরণ কাল যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। দুর্দান্ত খেলা বাংলাদেশ ৮৮ মিনিট ১-০ গোলে এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত ১-১ ড্র নিয়ে মাঠ ছেড়েছে। বাংলাদেশ যেভাবে খেলেছে, জয় তাদের পাওনাই ছিল। জয়বঞ্চিত থাকার এই ম্যাচেও বিতর্ক আছে। শুরুতেই বাংলাদেশকে একটি নিশ্চিত পেনাল্টি থেকে বঞ্চিত করেন সিরিয়ান রেফারি মাসুদ তোফায়েহেল। ১৮ মিনিটের মধ্য দুটি পেনাল্টি পেতে পারত বাংলাদেশ। ডি-বক্সে বাংলাদেশের ইব্রাহিমকে দুবার বাজেভাবে ট্যাকল করেছেন ভারতীয় ডিফেন্ডার রাহুল ভেকে। টিভি রিপ্লেতে যতবার ট্যাকল দুটি দেখানো হয়েছে বাংলাদেশের দর্শকেরা আফসোসে পুড়েছেন।

শুধু এ ম্যাচেই নয়; বাংলাদেশ-ভারতের ম্যাচে রেফারিং নিয়ে বিতর্ক হয়েছে আগেও। ২০১৪ সালের ৫ মার্চ গোয়ায় বাংলাদেশ ৮৯ মিনিট পর্যন্ত ২-১ গোলে এগিয়ে ছিল। ভারতের বিপক্ষে দীর্ঘ ১১ বছর পর ফুটবল মাঠে তাহলে জয় আসছে! সবাই দুরু দুরু মনে শেষ কয়েক মিনিট পার হওয়ার অপেক্ষায়। তখনই বজ্রাঘাত। শেষ সময়ের গোল খেয়ে বসল বাংলাদেশ। সুনীল ছেত্রী করে দিলেন ২-২। ম্যাচে যেটি তাঁর দ্বিতীয় গোল। ২-২ হওয়ার পরও বাংলাদেশের সুযোগ ছিল ম্যাচটা জেতার। মুম্বাইয়ের রেফারি বাংলাদেশের একটি গোল দেননি। বদলি ফরোয়ার্ড তকলিচ আহমেদ বক্সের বাইরে ভারত গোলরক্ষক সুব্রত পালের বাধা এড়িয়ে দারুণ শটে বল জালে জড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু রেফারি গোল না দিয়ে ফাউল দিয়েছেন বাংলাদেশের পক্ষে (যদিও ফাউল হয়েছিল কিনা সংশয় আছে), আর লালকার্ড দেখান গোলরক্ষককে। সেটি ছিল যথেষ্ট বিতর্কিত সিদ্ধান্ত।

২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ঠিক একই রকম বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কান রেফারি। ৩ সেপ্টেম্বর কাঠমান্ডুতে গ্রুপ পর্বে তিন মিনিট অতিরিক্ত সময়ের শেষ মিনিট চলছিল তখন। মিনিট বারো আগে ডিফেন্ডার আতিকুর রহমানের (মিশু) দারুণ এক গোল যখন জয়ের সুবাস ছড়িয়ে দিচ্ছিল বাংলাদেশ শিবিরে, রেফারি ডি পেরেরা তখনই বাংলাদেশের বক্সের ঠিক ওপর ঘেঁষে ভারতের পক্ষে বাজালেন ফ্রি-কিকের বাঁশি। ভারতীয় অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীর নিরীহ সেই ফ্রি-কিক বাংলাদেশকে কাঁদিয়ে এবং ক্ষোভের আগুনে পুড়িয়ে চলে গেল জালে (১-১)!

শেষ কয়েক সেকেন্ড বাংলাদেশ প্রাণপণে রক্ষণকাজে ব্যস্ত থাকার একপর্যায়ে মামুনুলের সঙ্গে ধাক্কা লাগে সুনীল ছেত্রীর। সেটি ছিল পরিষ্কার বক্সের ভেতরে। ফাউল হলে পেনাল্টিও হওয়ার কথা। পেনাল্টি তো রেফারি দিলেন না। তার মানে, ওটা ফাউল নয়! আদতে মামুনুলকেই উল্টো ধাক্কা দিয়েছিলেন সুনীল ছেত্রী। এমন বিতর্কিত রেফারিংয়ের শিকার হয়ে বাংলাদেশকে মাঠ ছাড়তে হয়ে ১-১ ড্র নিয়ে।

বলবেন বিতর্কিত আম্পায়ারিং-রেফারিং খেলারই অংশ। কিন্তু গত কয়েক বছরে এটি কেন যেন বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচেই বেশি হচ্ছে—সে হোক ক্রিকেট কিংবা ফুটবলে।

সূত্র: প্রথম আলো

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত