আর মাত্র একটি ম্যাচ, ইতিহাস গড়বে বসুন্ধরা

প্রকাশ : ১৯ জুলাই ২০১৯, ১৫:৩৫

আর মাত্র ৩ পয়েন্ট, ম্যাচ বাকি ৪টি। তার মানে ৪ মাচে লাগবে শুধু একটি জয়। তাহলে অভিষেক আসরেই দুই শিরোপা জয়ের ইতিহাস গড়া হবে বসুন্ধরা কিংসের। এর আগে বাংলাদেশের পেশাদার ফুটবলের ইতিহাসে কোনো ক্লাবই নিজেদের অভিষেক আসরেই দুই শিরোপা জিততে পারেনি। আর মাত্র ৩ পয়েন্ট অথবা একটি জয় পেলেই বাংলার বুকে ইতিহাস গড়বে বসুন্ধরা।

আগামীকাল ২০ জুলাই (শনিবার) সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের মুখোমুখি হবে নবাগত বসুন্ধরা কিংস।

প্রথমে (২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর) স্বাধীনতা কাপ জয়, আর এবার প্রিমিয়ার লিগের শিরোপার হাতছানি। এক মৌসুমেই জোড়া শিরোপার হাতছানি বসুন্ধরার সামনে। মূলত ঢাকা আবাহনী তাদের সর্বশেষ ম্যাচে মোহামেডানের কাছে হেরে যাওয়ায় আগেভাগেই লিগ শিরোপার সুবাস পেতে শুরু করে বসুন্ধরা।

শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের বিপক্ষে ম্যাচটি জিতলেই প্রিমিয়ার লিগের এবারের শিরোপা যাবে প্রথম আসরেই সবাইকে চমকে দেওয়া দলটির ঘরে। তবে না জিতলেও হাতে থাকবে আরও ৩ ম্যাচ। কিন্তু দেনিয়েল কলিনদ্রেসরা যে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন, তাতে আত্মপ্রকাশের মৌসুমটা শিরোপার রঙে রাঙানো এখন শুধুই সময়ের ব্যাপার।

অভিষেক মৌসুমেই এমন অসাধারণ সাফল্যে দারুণ খুশি বসুন্ধরা কিংসের প্রেসিডেন্ট ইমরুল হাসান। সিলেটে শিরোপা মিশন শুরুর আগে বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এটা (প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের শিরোপা জয়) আমাদের জন্য অনেক গৌরবের বিষয়। অভিষেক আসরেই দুই শিরোপা জেতা, এমনটা বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে আগে কখনো ঘটেনি।’

বসুন্ধরার প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আসলে আমাদের সব প্রত্যাশাই পূর্ণ হয়েছে। এর চেয়ে বেশি আর কিছু পাওয়া সম্ভব ছিল কি না আমার জানা নেই। ২০ ম্যাচের মধ্যে ১৯টিতে জয়, ১টি ড্র। অনেক বড় পাওয়া এটা। যাই হোক, আমরা এখনও চ্যাম্পিয়ন হইনি। হলে আমাদের সব প্রত্যাশা সম্পূর্ণরূপে পূরণ হবে। বাকী ৪টা ম্যাচেই আমরা জিততে চাই। অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে শিরোপা উৎসব করতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘অসাধারণ মৌসুমের কৃতিত্ব আসলে ক্লাবের সবার। কোচ অস্কার ব্রুজোন, দলের খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ এবং ক্লাবের সব কর্মকর্তাদের নিরলস পরিশ্রম ও নিবেদনের কারণেই এ সাফল্য এসেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলতে। দেশের ফুটবলকে ওই পর্যায়ে শক্তিশালী হিসেবে তুলে ধরতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ফুটবল এখনও মানের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। সেই মান এবং জনপ্রিয়তাকে ফিরিয়ে আনা এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। আর যেসব দর্শক মাঠ বিমুখ হয়েছেন, তাদের ফিরিয়ে আনা। এই দু’টো উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বসুন্ধরা গ্রুপ ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এবার কিন্তু মাঠে দর্শকও বেড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আর মানের দিক থেকে বললে, আপনারা দেখেছেন আগের কয়েকবছরের তুলনায় এখনকার জাতীয় দল অনেকটা গোছানো। হয়তো আমরা সামনে আরও ভালো কিছু দেখতে পাবো। এ মানের উন্নতিতে কিন্তু বসুন্ধরা কিংস ও অন্যান্য ক্লাবের অবদান আছে।’

তিনি বলেন, ‘এখন কিন্তু খেলোয়াড়দের স্টেমিনা বেড়েছে। এ জায়গাটায় ক্লাবের অবদানের কথা অনেক। কারণ, ক্লাবগুলো এখন আধুনিক জিমের ব্যবস্থা করছে। বিদেশি ট্রেনারের ব্যবস্থা করছে। ফলে খেলোয়াড়দের ফিটনেস আগের চেয়ে বেড়েছে। এর ফলটাই আমরা জাতীয় দলে পাচ্ছি। আমাদের জাতীয় দলের জন্য এটা একটা বেঞ্চ মার্ক। ফিটনেসকে গুরুত্ব দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছরে ক্লাবগুলোতে উন্নতমানের বিদেশি খেলোয়াড় এসেছে। স্থানীয়রা তাদের কাছ থেকে শিখছে। এটাও আমাদের জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের খেলায় প্রভাব ফেলছে। আমরা যখন দেনিয়েল কলিনদ্রেসকে (কোস্টারিকান তারকা) আনি, আমাদের চিন্তা ছিল দর্শকদের কি করে মাঠে আনা যায়। সে এমন একজন বিদেশি খেলোয়াড় যার খেলা দেখার জন্য দর্শক মাঠে আসবে।’

বসুন্ধরা কিংসের প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, ‘কলিনদ্রেস বিশ্বকাপে খেলা তারকা। ওর খেলা দেখার জন্য মাঠে দর্শক এসেছে। আমি মনে করি প্রত্যেক দলেই এমন খেলোয়াড় আনা উচিত যাতে তাদের নৈপুণ্য দেখার জন্য হলেও দর্শক মাঠে আসে। আগে সাব্বির, কায়সারদের খেলা দেখতে মানুষ মাঠে আসত, এখন কিন্তু তেমন বড় কোনো তারকা নেই। এজন্যই উন্নতমানের বিদেশি খেলোয়াড় আনলে দর্শক সংখ্যা বাড়বে।’

এরইমধ্যে ২০ ম্যাচ ১৯ জয় আর ১ ড্রয়ে ৫৮ পয়েন্ট নিয়ে সবার শীর্ষে আছে বসুন্ধরা কিংস। পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে থাকা আবাহনী লিমিটেড ২১ ম্যাচ খেলে ৭ পয়েন্ট পিছিয়ে রয়েছে। এ ব্যবধান কমিয়ে আনা বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আবাহনীর পক্ষে সম্ভব হলেও শিরোপা জয়ের স্বপ্ন আপাতত মুলতবি রাখতে হবে বলেই মনে হচ্ছে। অন্যদিকে ঘরোয়া ফুটবলের নতুন ‘কিং’ হওয়ার অপেক্ষায় বসুন্ধরা কিংস।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত