অবশেষে নতুন চ্যাম্পিয়ন পাচ্ছে ক্রিকেট বিশ্ব

প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০১৯, ১২:২৫

প্রথম দুই বিশ্বকাপে ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের একচেটিয়া রাজত্য। এরপর ১৯৮৩ তে এসে ভারত, ১৯৮৭ তে অস্ট্রেলিয়া, ১৯৯২ তে পাকিস্তান ও ১৯৯৬ এ শ্রীলংকা। এরপর থেকে বিশ্বকাপ টাকে নিজেদের এক রকম একক সম্পত্তি বানিয়ে ফেলে অস্ট্রেলিয়া। ফাইনালে ঘুরে ফিরে পুরানো চ্যাম্পিয়নরাই।

২০১৫ এর বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ড ফাইনালে উঠে সম্ভাবনা জাগিয়েছিল বটে তবে অজি আধিপত্যে তা ধূলিসাৎ হয়ে যায়। ২০১৯ বিশ্বকাপে শুরু হওয়ার পূর্বেই স্বাগতিক ইংল্যান্ড এর নতুন রূপ হয়ে উঠে অপ্রতিরোধ্য। ইংল্যান্ড সমর্থক ও ক্রিকেট প্রেমীরা ভাবতে শুরু করে তাহলে এবারই হচ্ছে।

রাউন্ড রবিন লীগ পর্বে মাঝে কিছুটা আশংকার কালো মেঘ তৈরি হলেও ঘুরে দাঁড়িয়ে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ রাখে ইংলিশরা। বিশ্বকাপ আসলেই অসাধারণ ক্রিকেট খেলতে থাকা অজিদের সেমিফাইনালে যেন আছড়ে ফেলল ইংলিশ ক্রিকেটের রুপকথা লিখার পথে থাকা রুট-মর্গান-আর্চার-বেয়ারস্টো-ওকসদের নতুন ইংল্যান্ড ক্রিকেট টিম।

ওয়ানডে ক্রিকেটে নিয়মিত ৪০০ রানের আশেপাশে স্কোর করা ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল বিশ্বকাপের কিছুদিন আগেও প্রায় পাঁচশত(৪৮১) রান করে ফেলে ৫০ ওভারে তাও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। তাই অনুমেয় ছিল যে স্বাগতিক দল ইংল্যান্ড নিজেদের মাটিতে ফাইনাল খেলবে। তবে বিশ্বকাপের মাঝপথে পাকিস্তান ও ধুকতে থাকা শ্রীলংকার সাথে হেরে বসে এই বিশ্বকাপের অঘটনেরই জন্মদেয় ইংল্যান্ড। তাই পয়েন্ট তালিকায় তিন নম্বরে থেকে শেষ করা ইংল্যান্ড এর সেমিফাইনাল খেলা নিয়ে জেগেছিল শঙ্কা।

অপরদিকে পয়েন্ট তালিকার ২য় স্থানে থাকা অজিরা ছিল এক রকম অপ্রতিরোধ্য পুরো বিশ্বকাপ জুড়েই। তাই বিশকাপের আগে থেকেই স্বপ্ন দেখতে থাকা ইংলিশ সমর্থকরা অস্ট্রেলিয়াকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়ে কিছুটা শঙ্কাতেই ছিল। তবে ম্যাচ শুরু হওয়ার পর আর্চার-ওকস এর তোপ দাগানো পেস আক্রমণের সামনে হুড়মুড়িয়ে ভেঙ্গে পরে মাইটি অজি টপ অর্ডার। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ ব্যাট করা অজি অধিনায়ক ফিঞ্চ ও তার সঙ্গী ওয়ার্নার শুরুতেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরলে পতন শুরু হয় অস্ট্রেলিয়ার। সাবেক অজি অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ ৮৫ রান করে একা লড়াই চালিয়ে গেলেও বাকিদের ব্যর্থতায় স্কোরবোর্ডে ২২৩ এর বেশী রান জড়ো করতে পারে না অস্ট্রেলিয়া।

এই বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালও লো স্কোরিং হওয়ায় এবং এই বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী বোলার দলে থাকায় কিছুটা আশা ছিল অজি সমর্থকদের। তবে অজি বোলিং এটাকের মূল অস্ত্র মিচেল স্টার্কের প্রথম ৩ ওভারে ২৩ রান তুলে ইংলিশ ওপেনাররা বুঝিয়ে দিলেন আজকে দিনটা শুধুই ইংল্যান্ডের। আদতে হলোও তাই মাত্র ৩২.১ ওভারেই ৮ উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয় ইংল্যান্ড।

অপর সেমিফাইনালে এই বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট ভারতের মুখোমুখি হয় এই বিশ্বকাপের সম্ভবত সবচেয়ে ভাগ্যবান দল নিউজিল্যান্ড। শক্তিশালী ভারতীয় ব্যাটিং ডিপার্টমেন্ট পুরো বিশ্বকাপ জুড়েই ছিল দারুণ ছন্দে। এই বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান শিকারী রোহিত শর্মার হাত ধরে শুরু হওয়া ব্যাটিং অর্ডার এর শেষে রয়েছেন সর্বাকালের অন্যতম সেরা ফিনিশার ধোনি। বোলিং ইউনিট এর নেতৃত্বে আছেন ওয়ানডে ক্রিকেটের ১ নাম্বার বোলার জাসপ্রিত বুমরাহ। তাদের প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড এই বিশ্বকাপে বেশীরভাগ ম্যাচ জিতেছে একরম ধুকতে ধুকতে। ব্যাটি হাতে অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ও অভিজ্ঞ রস টেলর ছাড়া কেউই ছিল না ছন্দে। বোল্ট-ফার্গুসন-হেনরী-স্যান্টনার কে নিয়ে তুলনামূলক ভালো বোলিং ইউনিট হলেও ভারতীয় ব্যাটিং যে তাদের সামনে ধসে পড়বে তা কেউই কল্পনা করতে পারেন নি। 

আগে ব্যাট করা নিউজিল্যান্ড উইলিয়ামসন আর টেলরে ভর করে ২৩৯ রানের সাদামটা স্কোর করে। জবাব দিতে নেমে বোল্ট-হেনরি জুটির বোলিং তোপে ভেঙে পড়ে ভারতীয় টপ অর্ডার। ৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে যাওয়া ভারত সাবেক অধিনায়ক ধোনি ও একাদশে অনিয়মিত জাদেজার ব্যাটিং প্রতিরোধেও ম্যাচে ফিরতে ব্যর্থ হয়।


পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলা নিউজিল্যান্ড ফাইনালে মুখোমুখি হবে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলা ইংল্যান্ডের। এর আগে ফাইনাল খেললেও একবারও ট্রফি ছোয়া হয়নি দুইদলের কারোই। তাই নিউজিল্যান্ড বা ইংল্যান্ড যেই জিতুক নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পাচ্ছে ক্রিকেট বিশ্ব।

সাহস২৪.কম/জুবায়ের/জয়

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত