উইম্বলডন চ্যাম্পিয়নশিপ: টেনিস জগতের সবচেয়ে ধ্রুপদী আসর

প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০১৯, ১৩:১১

যদি প্রশ্ন করা হয় বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন টেনিস প্রতিযোগিতা কোনটি? অথবা, যদি জানতে চাওয়া হয় টেনিসে কোন প্রতিযোগিতার মর্যাদা সবচেয়ে বেশি? নিঃসন্দেহে যারা টেনিস উপভোগ করেন কিংবা মোটামুটি জানা শোনা আছে তিনিও এক কথায় বলে দেবেন 'উইম্বলডন চ্যাম্পিয়নশিপ'। যার জন্য সারা বছর প্রস্তুতিতে থাকেন উপরের সারির টেনিস প্লেয়াররা। 

অনেকে বলেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, ফ্রেঞ্চ ওপেন এবং ইউএস ওপেনের চেয়েও বেশি মর্যাদা আর উত্তেজনার টেনিস ইভেন্ট এই উইম্বলডন। টেনিস জগতের সবচেয়ে ধ্রুপদী, মর্যাদাসম্পন্ন আর গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিযোগিতাটি বিশ্বের চার গ্র্যান্ড স্লামের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ১৮৭৭ সাল থেকে এটি যুক্তরাজ্যের লন্ডনের উইম্বলডন এলাকায় সাংবাৎসরিকভাবে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এই টেনিস আয়োজন।

১৮৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত অল ইংল্যান্ড লন টেনিস এন্ড ক্রোকুয়েট ক্লাব একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন ক্লাবরূপে গড়ে উঠে যা অল ইংল্যান্ড ক্রোকুয়েট ক্লাব নামে পরিচিত। ক্লাবটির প্রথম মাঠ ছিল উইম্বলডনের ওরপল রোডে। ১৮৭৭ সালের এটি চালু হয়েছিল পুরুষদের একক দিয়ে। তারপর ৭ বছর পর চালু হয় মহিলাদের একক। একই বছর ১৮৮৪ সালেই পুরুষদের দ্বৈত খেলা অক্সফোর্ড থেকে স্থানান্তর করা হয়। এরপর প্রায় ২৯ বছর পর ১৯১৩ সালে মিশ্র দ্বৈত এবং প্রমিলা দ্বৈতের প্রচলন ঘটে। মোটাদাগে এই হল এই প্রতিযোগিতার বিভিন্ন ইভেন্টের ইতিহাস।

বিশে যতগুলো গ্র্যান্ডস্লাম অনুষ্ঠিত হয় তার মধ্যে একমাত্র উইম্বলডনেই কোর্টে ব্যবহার করা হয় প্রাকৃতিক ঘাস, যা এখন পর্যন্ত চলমান। আর খেলার প্রকৃত অবস্থার প্রেক্ষিতে এটির নামকরণ 'লন টেনিস' করা হয়েছে। ১৮৭৬ সালে মেজর ওয়াল্টার ক্লপটন উইংফিল্ড কর্তৃক আবিস্কৃত লন টেনিস খেলা যা তিনি স্টিকি বা স্ফেইরিস্টিক নামে বলতেন, তা ক্লাবের কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়। ১৮৭৭ সালের বসন্তে দলটির নাম পুণঃরায় পরিবর্তিত হয়ে দি অল ইংল্যান্ড ক্রোকুয়েট এন্ড লন টেনিস নাম ধারণ করে। নাম পরিবর্তন করে এটি প্রথমবারের মতো লন টেনিস প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়। মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের পরিচালনায় অণুসৃত নিয়মাবলী পরিবর্তিত করে এ খেলার উপযোগী আইন-কানুন তৈরী করা হয়। বর্তমানে প্রচলিত আইন-কানুনের মধ্যে তৎকালীন নেট বা জালের উচ্চতা ও খুঁটি এবং নেট থেকে সার্ভিস লাইনের দূরত্ব বহাল রয়েছে।

এই বৈশ্বিক আয়োজন সাধারণত গ্রীষ্মে আয়োজন করা হয়। ফ্রেঞ্চ ওপেন প্রতিযোগিতার পর কিন্তু ইউএস ওপেনের পূর্বে এটি অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৬৮ সালে থেকে প্রতিযোগিতায় পেশাদার ও সৌখিন সকলের জন্যই উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

দুই সপ্তাহব্যাপী এ টেনিস প্রতিযোগিতা জুনের শেষ দিক শুরু হয়ে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। উইম্বলডনে প্রাচীনধারায় বহমান রয়েছে খেলোয়াড়দের পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যবহার। আম্পায়ার বা রেফারী এবং লাইন্সম্যান-সকলেই বিশেষ ধরনের গাঢ় সবুজ ও ফিকে লাল রঙের পোশাক পরিধান করেন। খেলোয়াড়গণ সাদা পোশাক পরিধান করেন। দর্শকদের জন্য স্ট্রবেরী এবং ক্রিম খাওয়াসহ রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা তো থাকেই। আরও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে কোর্টে কোনরূপ বিজ্ঞাপনচিত্র নেই। ২০০৯ সালে খেলা চলাকালীন সময়ে বৃষ্টিবিঘ্নতা থেকে রক্ষা পাবার জন্যে উইম্বলডনের সেন্টার কোর্টে ছাদের আচ্ছাদন দেয়া হয়েছে।

প্রতিটি টেনিস প্রতিযোগিতার শুরুতে খেলোয়াড়গণ তাদের অবস্থান নির্ধারণের জন্য ড্র বা টসের মুখোমুখি হন। উইম্বলডনে খেলোয়াড়গণের র‌্যাংকিং যা-ই থাকুক না কেন এ সুযোগ পান। কিন্তু অন্যান্য টেনিস প্রতিযোগিতায় মাঠের অবস্থানের জন্য র‌্যাংকিংকে প্রাধান্য দেয়া হয়।

এত বড় টুর্নামেন্টে প্রাইজমানিটাও নিশ্চয়ই আকাশচুম্বীই হবে। ১৯৬৮ সালে পুরো টুর্নামেন্টে প্রাইজমানি ছিল মাত্র ২৬ হাজার পাউন্ড। ৫০ বছর পরে উইম্বলডনের এক আসরে মোট প্রাইজমানি দেয়া হয় ৩ কোটি ১৬ লাখ পাউন্ড। একক চ্যাম্পিয়নের প্রাইজমানি ২২ লাখ পাউন্ড এবং রানার-আপ ১১ লাখ পাউন্ড। ২০১৮ সালে ১৩২ তম আসরে এই প্রাইজমানি আরো বাড়িয়ে ৩ কোটি ৪০ লাখ পাউন্ড করা হয়েছে। আর এটিই একমাত্র টেনিস ইভেন্ট যেখানে নারী-পুরুষ প্রত্যেকেই একই প্রাইজমানি পেয়ে থাকেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত