রক্ত-ঘামে ভেজা বাংলাদেশি শ্রমিকদের বিশ্বকাপের জার্সি

প্রকাশ : ০২ জুন ২০১৮, ১৭:০৯

সাহস ডেস্ক

দুয়ারে কড়া নাড়ছে রাশিয়া বিশ্বকাপের মহাযজ্ঞ। প্রিয় দলের খেলা দেখার জন্য উন্মুখ ফুটবলভক্তরা। খেলা মাঠে গড়ানোর আগে ভক্তদের মাঝে কাড়াকাড়ি পড়ে যায় প্রিয় দলের জার্সি সংগ্রহের। আর এই জার্সি রক্ত-ঘামে ভেজা বাংলাদেশি শ্রমিকদের।

অংশগ্রহণকারী অনেক দলের জার্সিতে লেখা আছে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’। কিন্তু যাদের অক্লান্ত শ্রমে তৈরি হচ্ছে ফুটবলের মহাতারকাদের এই দামি জার্সি, সেই বাংলাদেশি কারিগরদের কপালে কি জুটছে?

যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফের এক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, বাংলাদেশি সেসব কারিগরদের কষ্টের কথা যাদের রক্ত ভেজা ঘামের ফসল একেকটা বিশ্বকাপের জার্সি।

টেলিগ্রাফে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড দলের গায়ে যে জার্সি দেখা যাবে তা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের সাভারের এক কারখানায়। সেই কারখানার শ্রমিকদের প্রতি ঘন্টায় পারিশ্রমিক কতো জানেন? মাত্র ২১ ব্রিটিশ পেন্স বা ২৩.৪১ টাকা!

ইংল্যান্ড দলের অফিসিয়াল জার্সি এযাব‍ৎকালের সবচেয়ে দামি। আর এই জার্সি তৈরি হয়েছে সাভারের ইপিজেড এলাকার কারখানায়, যেখানে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি মাত্র ১.৬৮ ইউরো বা ১৬৪ টাকা।

বিশ্বখ্যাত স্পোর্টস ব্যান্ড ‘নাইকি’ বাংলাদেশ থেকে তৈরি করে নেয় জার্সিগুলো, যা জাতীয় দলের প্রয়োজন মিটিয়ে বাকি সব বিশ্ব বাজারে বিক্রি করবে নাইকি। একেকটি জার্সি বিক্রি হবে ১৬০ ইউরো বা ১৫,৬২১ টাকায়।

সাভারের ওই গার্মেন্টস কারখানায় মূলত নারী শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হয়। প্রতি সপ্তাহে তাদের ৬০ ঘন্টা করে শ্রম দিতে হয়।

২০১৬ সালে ইংলিশ ফুটবল ফেডারেশনের সাথে ৪০০ মিলিয়ন ইউরোর চুক্তি করে নাইকি।

টেলিগ্রাফের এই প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ‘নাইকি নামমাত্র মূল্যে জার্সি বানিয়ে চড়া দামে বিক্রি করে বিশাল লাভ করছে। যারা এই জার্সি বানাচ্ছেন সেসব শ্রমিকদের যে পারিশ্রমিক দেয়া হয় তা দিয়ে তাদের মৌলিক চাহিদাই পূরণ করা সম্ভব না।’

ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক দল লেবার পার্টির একজন এমপি জো স্টিভেনসেন্স, যিনি আবার পার্লামেন্টের ডিজিটাল, কালচার, মিডিয়া এবং স্পোর্টস কমিটির সদস্য, এই ঘটনায় তদন্ত আহবান করে বলেছেন, 

‘বিশ্বকাপ সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় যার মধ্যে খেলার সরঞ্জাম, যা নিয়ে আমাদের দেশ হিসেবে গর্ব করার কথা, এসব বিষয়ে খেয়াল করা এফএ’র দায়িত্ব। এটা নিয়ে গর্ব করাই অসম্ভব হয়ে পড়বে যদি জানা যায় যে, এগুলো যারা তৈরি করছে তারা শোষণের শিকার হচ্ছে।’

নাইকি একাই নয়, এমন সমস্যার মূলে আছে তারাও, যারা চুক্তিতে কাজ নিচ্ছে সেসব গার্মেন্টস মালিকদেরও। বাংলাদেশের একজন গার্মেন্টস শ্রমিকের সর্বনিম্ন মজুরি মাসে ৫ হাজার টাকারও কম। এত কম মজুরি দিয়ে নিজে বাঁচাই যখন কঠিন সেখানে পুরো পরিবার নিয়ে সচ্ছলভাবে বাঁচার স্বপ্ন তো বহুদূরের কথা।

যে শ্রমিকদের রক্ত পানি করা ঘামে তৈরি হচ্ছে একেকটা নামি-দামি ফুটবল দলের জার্সি তাদের দুঃখগাঁথার শেষ কোথায়?

সাহস২৪.কম/খান/মশিউর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত