ডিজিটাল সিস্টেম হ্যাক করে অর্থ আত্মসাৎ, গ্রেপ্তার ৩

প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২১, ১৭:৩২

সাহস ডেস্ক

ডিজিটাল সিস্টেম হ্যাক করে দেশের প্রথমসারির এয়ারলাইন্স, সুপারশপ স্বপ্ন, ফ্রিল্যান্সারডটকমসহ দেশি-বিদেশি একাধিক ওয়েবসাইট থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশি একটি হ্যাকার চক্র। এরমধ্যে শুধুমাত্র স্বপ্ন’র ডিজিটাল সিস্টেম হ্যাক করে চক্রটি হাতিয়ে নিয়েছে ১৮ লাখ টাকা। সম্প্রতি এই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারপরেই বের হয়ে আসে এসব তথ্য।

ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত আজ রবিবার (৮ আগস্ট) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম সিটিটিসি প্রধান ডিআইজি আসাদুজ্জামান।

তিনি জানান, স্বপ্ন’র ১৮ লাখ টাকা মূল্যের ডিজিটাল ভাউচার তৈরি ও জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে হ্যাকার গ্রুপের এ চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের একটি চৌকশ টিম। গতকাল শনিবার রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে গ্রেপ্তার করা হয় ওই চক্রের তিনজনকে। এ সময় তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় হ্যাকিংয়ের কাজে ব্যবহৃত ৬টি মোবাইল সেট, ২টি ল্যাপটপ ও ১টি সিপিইউ, ক্রিপ্টোকারেন্সি, নগদ টাকা, ইলেকট্রনিক কার্ড ও ‘স্বপ্ন’ ই-ভাউচারের মাধ্যমে ক্রয়কৃত বিপুল পরিমাণ পণ্য সামগ্রী।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-চক্রের মূলহোতা মো. নাসিমুল ইসলাম, রেহানুর হাসান রাশেদ ও রাইসুল ইসলাম।

গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সিটিটিসি প্রধান জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা স্বপ্নের ডিজিটাল সিস্টেম হ্যাক করে ১৮ লাখ টাকা মূল্যের ডিজিটাল ভাউচার ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে ২৫ শতাংশ ছাড়ে কয়েকটি ই-কমার্স ব্যবহারকারীদের কাছে বিক্রি করে। এভাবে তারা জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিভিন্ন ক্রিপ্টোকারেন্সি অ্যাকাউন্টে জমা করে।

তিনি জানান, তাদের কাছ থেকে জব্দ করা ডিজিটাল ডিভাইস থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকা সমমূল্যের ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়। এ ছাড়াও এই হ্যাকার গ্রুপটি প্রথম সারির বাংলাদেশি এয়ারলাইন্স, দেশের প্রসিদ্ধ বাস কোম্পানি, ইলেকট্রনিক গেজেট চেইন আউটলেটসহ স্বনামধন্য অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করে।

সিটিটিসি প্রধান ডিআইজি আসাদুজ্জামান বলেন, সুপারশপ স্বপ্ন তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সারাদেশের ১৮৬টি আউটলেটের সেলস মনিটরিং, ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট, কর্মী ব্যবস্থাপনা, আর্থিক লেনদেনের হিসাব, ডিজিটাল ভাউচার ম্যানেজমেন্টসহ সকল ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। স্বপ্নের ডিজিটাল সিস্টেমটি তাই অ্যাডভান্স সাইবার সিকিউরিটি প্রটোকল অনুযায়ী অত্যন্ত সুরক্ষিত করে তৈরি করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, গত ২৬ জুন থেকে ৯ জুলাইয়ের মধ্যে স্বপ্নের শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ব্রিচ করে বিপুল অংকের অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক ডিজিটাল ভাউচার জেনারেট করে বিক্রি করা হয়। বিষয়টি স্বপ্ন কর্তৃপক্ষের নজরে আসলে তারা ডিএমপির সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের কাছে অভিযোগ জানায়। এ বিষয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের একটি চৌকস টিম।

আরও বলেন, তারা স্বপ্ন সুপারশপের ডিজিটাল সিস্টেমের ফরেনসিক বিশ্লেষণ ও রিভার্স অ্যানালাইসিসসহ উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে হ্যাকার চক্রটির ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট শনাক্ত করে।

আসাদুজ্জামান বলেন, এমনকি চক্রটি সুচতুর এই হ্যাকারদের কাছে সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের সিস্টেমের একসেস রয়েছে। তারা বিভিন্ন ডার্ক ওয়েব মার্কেট থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সির বিনিময়ে লগইন ক্রিডেনশিয়াল ক্রয় করে, যা ডিজিটাল ভাউচার তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় বলেও তথ্য প্রদান করে।

তিনি আরও বলেন, এ ছাড়াও তারা ফ্রিল্যান্সারডটকম নামের বিদেশি একটি ওয়েবসাইট হ্যাক করে বিপুল পরিমাণ বিটকয়েন হাতিয়ে নিয়েছে। এসব বিষয়ে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও বিস্তারিত জানা যাবে। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। মামলার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, চক্রের মূলহোতা মো. নাসিমুল ইসলাম বগুড়া পলিটেকনিক থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে হ্যাকার গ্রুপের সদস্য হন।

সাহস২৪.কম/এসটি/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত