ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মানি না- ঝুমন দাসের ভাই

প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২১, ১৭:০৫

ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করার অভিযোগ তুলে হেফাজত নেতা মামুনুল হকের সমালোচনায় ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয় সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার ঝুমন দাসের নামে। আজকে ১৩৯ দিন কারাবন্দী থেকেও আলোর দিশা পাচ্ছে না ঝুমন দাসের পরিবার। এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের 'ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মানিনা' নামের একটি গ্রুপে প্রকাশ হওয়া কারাবন্দি ঝুমন দাসের বড় ভাই নুপুর দাসের একটি লেখা অনুমতিক্রমে হুবহু বিন্যাস ও বানানসহ সাহস২৪ এ তুলে ধরা হলো।

‘ঝুমন কথা লিখা শিখেছে ফেসবুকের কল্যানেই। একাডেমিক শিক্ষা তার ফাইভ পাশ। স্কুলে সে বরাবরই প্রথম ছিল। বাবা মারা যান ২০০৭ সালে। ঝুমনের আর পড়াশোনা করা হয়নি। সংসারের দায়িত্ব নেয়া শুরু করে সে। রাখাল হিসেবে মাঠে শুরু হয় তার গরু ছড়ানো (চড়ানো)। বেশ ভাল রাখাল। দুবছর একই কাজ করে সে। ২০০৯ সালে চলে আসে সিলেটে।

লোকনাথ ভেরাইটিজ স্টোর নামে একটা দোকানে কাজ করত সে। সেবার আমি এইচ. এস. সি পরীক্ষার্থী। ঈদের ছুটিতে আমি বাড়িতে গেলে ঝুমনের সাথে আমার বেশ মজার গল্প হয়। সে আমাকে সিলেটের গল্প বলে। কথা বলে অনেক কিছু নিয়ে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কে? ইন্দোনেশিয়ার রাজধানীর নাম কি? ইত্যাদি। কোন কিছুর উত্তরই আমি পারিনি দেখে সে বলেছিল, তুমি বাজে ছাত্র। কলেজে ফার্স্ট কিভাবে হলে। সেই থেকে ঝুমনকে আমি বেশ সমীহ করি।

ঝুমন প্রতিদিন খবরের কাগজ পড়ত। তার ছিল ফ্লেক্সিলোডের দোকান। 

২০১১ সালে ঝুমন মোবাইল কিনে। টাচ মোবাইল।

তখন থেকেই ফেইসবুক চালায় সে। তখন আমি অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। আমার মোবাইল তখন নোকিয়া ৩৬০০। এরপর আমার চাকরির বিজ্ঞপ্তি খুজে দেয়া। কোনটায় কি কি পোষ্ট নিবে, কি কি রিকোয়ারমেন্ট। ঝুমনই খুজে (খুঁজে) দিত।

একুশে বইমেলা ২০১৬ তে তার সাথে ঢাকা যাই আমি প্রথম। ঝুমন এর আগেও যে সিলেট থেকে ঢাকায় এসেছে তা আমি টের পেয়ে গেলাম- যখন দেখলাম সে আগে আগেই বলে দিচ্ছে সব রাস্তা ঘাট, কোন বাসে কই কই যাওয়া যায় ইত্যাদি।

ঝুমন আর আমি মিলে বেশ কয়টা বই কিনি।

মহাত্মা গান্ধীর আত্মকথা। ন্যালসন ম্যান্ডেলার এ লং ওয়াক টু ফ্রিডম। আনিসুল হকের মা।

বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং আহমদ ছফার যদ্যপি আমার গুরু।

ঝুমন ফেসবুকে শুদ্ধ বাংলায় প্রায়ই লিখালিখি করত। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সে লিখত। তার আইডি অনেকবার নষ্ট হয়েছে। আবার ঠিক করেছে নিজেই। ২০১৮ সালে বিয়ে করার পর সে ব্যাবসা দিয়েছিল সুনামগঞ্জে।

থাকত (থাকতো) শহরের ষোলগড়ে। কোভিড ১৯ এর কারনে ব্যাবসা আর ঠিকিয়ে (টিকিয়ে) রাখতে পারে নি।

তবুও ২০২০ সাল পর্যন্ত ঠিকে (টিকে) ছিল। তার ইচ্ছা ছিল সফল উদ্যোক্তা হওয়ার। প্রায়ই বলত আমি হব সব চেয়ে বড় ব্যবসায়ী। কিন্তু ২০২১ সালের প্রথম থেকেই আর পারছিল না শহরে পরিবার নিয়ে থাকতে।

২০২১ এর শুরু থেকেই গ্রামে চলে এসেছিল। বলেছিল আবার হয়েছি কৃষক।

কথা বললেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮... এই সিস্টেমের গ্যারাকল থেকে কিভাবে বেরুবে সে।

ঝুমনও একদিন লিখেছিল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মানি না।।।।'

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত