তুরস্কের বিপ অ্যাপের গোপনীয়তায় শীর্ষে বাংলাদেশ

প্রকাশ : ০৮ মে ২০২১, ১৭:৫৩

বিবিসি বাংলা

তুরস্কে তৈরি একটি ভিডিও কলিং ও মেসেজিং অ্যাপ 'বিপ' ব্যবহার করে পৃথিবীর যেসব দেশে কল আদান-প্রদান হয়, তাদের মধ্যে সবার উপরে রয়েছে বাংলাদেশ, এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিষ্ঠানটির তরফ থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

গোপনীয়তা রক্ষা করা যায় বলে, এ বছরের গোড়ার দিকে বিপ নামের এই অ্যাপটি ডাউনলোডের হিড়িক পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশে। এমনকি এক পর্যায়ে ডাউনলোডের সংখ্যার দিক দিয়ে এটি জনপ্রিয় ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারকেও ছাড়িয়ে র‍্যাংকিং তালিকায় এক নম্বরে উঠে আসে। এখন দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশেই বিপ-এর কল আদান-প্রদান সবচেয়ে বেশি।

ঢাকায় বিপ-এর নিযুক্ত জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান বেঞ্চমার্ক পিআর-এর কর্মকর্তা সারা শারমিন জানাচ্ছেন, বাংলাদেশে বিপ-এর জনপ্রিয়তা বিদেশে অ্যাপটির বাজারে সর্বাধিক।

গোপনীয়তা রক্ষা করে মেসেজের আদান প্রদান ও সাথে সাথে তথ্য অনুবাদের যেসব ফিচার এই অ্যাপ-এ আছে, সেটা অ্যাপটিকে বাংলাদেশি ভোক্তাদের কাছে খুবই জনপ্রিয় করে তুলেছে বলে জানাচ্ছে বিপ।

শনিবার (৮ মে) বেঞ্চমার্ক পিআরের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিপ-এর প্রধান নির্বাহী বুরাক আকিঞ্চিকে উদ্ধৃত করে বলা হয়: "বাংলাদেশি ব্যবহারকারীরা বিপ-কে প্রথম দিন থেকেই স্বাগত জানিয়েছে। ২০২১ সালের প্রথম চার মাসে বাংলাদেশে বিপ ডাউনলোড হয়েছে ২৫ লাখের ওপর।"

তিনি বলেছেন, "বাংলাদেশে বিপ-এর এই বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে তারা ভোক্তাদের অভিজ্ঞতা আরও সহজ ও উন্নত করতে নতুন উদ্ভাবনার ক্ষেত্রে আরও বিনিয়োগ করবে।"

বিপ জানাচ্ছে তাদের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে বিপ ব্যবহারকারীরা ১০ জন পর্যন্ত মানুষের সাথে গ্রুপ কল ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছেন এবং কলের সংখ্যার হিসাবেও বিশ্বের আর সব দেশের মধ্যে বাংলাদেশই "চ্যাম্পিয়ন"।

অ্যাপটি সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হয় সোমবার এবং বাংলাদেশের মধ্যে বিপ-এর ব্যবহার সবচেয়ে বেশি ঢাকা শহরে।

বিপ-এর প্রধান নির্বাহী বুরাক আকিঞ্চি

যে কারণে বিপ-এর এত জনপ্রিয়তা:
বিপ-এ গোপনীয়তা রক্ষা করে চ্যাট-এর সুযোগ বাংলাদেশিরা খুবই পছন্দ করেন বলে বিপ-এর তথ্যে উঠে এসেছে। এই অ্যাপে চ্যাটের ইতিহাস কেউ চাইলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পুরো মুছে ফেলতে পারেন, যে ফিচারটা মানুষ পছন্দ করছেন বলে তারা বলছেন। তারা বলছেন এটা ভোক্তাদের জন্য নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে খুবই স্বস্তির।

কোন চ্যাটের কোন তথ্য বিপ ব্যাক-আপ করে রাখে না বলে দাবি করে। তারা আরও দাবি করে যে, কোন তৃতীয় পক্ষের সাথে তারা ভোক্তার কোন তথ্য আদান প্রদান করে না। তুরস্কের উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন ডেটা কেন্দ্রে ভোক্তাদের তথ্য সুরক্ষিত থাকে।

বিপ-এর ভাষা অনুবাদের সক্ষমতা এই অ্যাপ-এর জনপ্রিয়তার আরও একটি বড় কারণ বলে তারা মনে করছে। বিপ বাংলাসহ ১০৬টি ভাষায় শব্দ এবং বাক্যের তাৎক্ষণিক অনুবাদ করতে পারে।

বিভিন্ন তথ্যের গোপনীয়তা নিয়ে জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবহারকারীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হওয়ার প্রেক্ষাপটে তুরস্কের এই অ্যাপ অনেকে দেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করে।

বাংলাদেশেও এই অ্যাপ আলোড়ন সৃষ্টি করে এ বছরের গোড়ার দিক থেকে।

বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রিয়তার একেবারে উপরের দিকে থাকা ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক লাইট-এর মতো অ্যাপগুলোকে পেছনে ফেলে তালিকার এক নম্বরে উঠে যায় তুরস্কের মেসেজিং অ্যাপ বিপ।

হোয়াটসঅ্যাপ-এর ব্যবহারকারীদের কিছু তথ্য তাদেরই সহযোগী কোম্পানির সঙ্গে শেয়ার করার সিদ্ধান্ত নিয়ে যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছিলেন, তখন বিপ অ্যাপের গোপনীয়তা রক্ষার প্রতিশ্রুতি এই অ্যাপকে দ্রুত জনপ্রিয় করে তোলে বলে মোবাইল ডেটা বিশ্লেষকরা জানান।

বিপ অ্যাপ-এর তরফ থেকে যে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয় তাতে বলা হয়, তাদের অ্যাপ এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপটেড, অর্থাৎ তাদের অ্যাপের মাধ্যমে ভয়েস কল এবং মেসেজ আদান-প্রদান গোপন থাকবে এবং এটি কেউ হ্যাক করতে পারবে না।

এই অ্যাপ অনেকটা হোয়াটসঅ্যাপ-সহ অন্যান্য ভিডিও কলিং ও মেসেজিং অ্যাপের মতো করেই কাজ করে।

আইওএস চালিত আইফোন এবং অ্যান্ড্রয়েড চালিত মোবাইল ফোনে এই অ্যাপ ডাউনলোড করা যায়। এছাড়া ডেস্কটপেও ব্যবহার করা যায় এই অ্যাপ।

তুরস্কের গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায় যে মোবাইল ফোন কোম্পানি টার্কসেল এই বিপ অ্যাপ উদ্ভাবন করে ২০১৩ সালে। বিশ্বের ১৯২টি দেশে এই অ্যাপ ব্যবহার করা হচ্ছে।

ব্যবহারকারীদের বেশিরভাগই গোড়ার দিকে ছিল ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। গত বছর পর্যন্ত বিপ অ্যাপ সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হয় জার্মানিতে। এছাড়া, ফ্রান্স এবং ইউক্রেনেও বহু মানুষ বিপ অ্যাপ ডাউনলোড করে বলে গণমাধ্যমকে জানান তুরস্কের কর্মকর্তারা।

বর্তমানে ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যে বিপ অ্যাপ-এর চাহিদা বাড়ছে বলে জানুয়ারি মাসে জানান টার্কসেল-এর কর্মকর্তারা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত