ফেসবুককে সম্পূর্ণ বদলে ফেলছেন জাকারবার্গ

প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০১৯, ১৮:৪৪

সাহস ডেস্ক

বিগত ১৫ বছর ধরে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা জাকারবার্গ বিশ্ববাসীকে উদ্বুদ্ধ আসছেন তথ্য শেয়ারের ব্যাপারে আরও বেশি উন্মুক্ত হতে। তবে সদ্য লেখা তার এক ব্লগপোস্টে দেখা গেছে, সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছেন জাকারবার্গ। ভবিষ্যতের অনলাইন বাস্তবতা চিন্তা করে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার সুরক্ষার দিকটিকে প্রাধান্য দিয়ে ফেসবুককে এবার সম্পূর্ণ নতুন করে নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। গ্রাহক তথ্যের গোপনীয়তা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ফেসবুকের ব্যর্থতার সাম্প্রতিক বেশকিছু নজির প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে জাকারবার্গ এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। গ্রাহকের বিনিময়কৃত তথ্য স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ না করা, একই অ্যাপস ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন অ্যাপসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার ব্যবস্থা করা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রশ্নে অসহিষ্ণু দেশের আধেয় স্মৃতিতে না রাখার মতো নানা পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে এই গোপনীয়তা নিশ্চিত করা হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন অবস্থান নিতে পারলে ফেসবুককে যে কোনও ঘটনায় দায়ী করা কঠিন হবে। কবে ফেসবুকে এই বদল আসবে তা নির্দিষ্ট করে জানাননি জাকারবার্গ। তকে কয়েকবছরের মধ্যেই তার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হবে বলে আভাস দিয়েছেন তিনি।

হার্ভাড শিক্ষার্থী মার্ক জাকারবার্গের হাত ধরে ২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক।  একটা সময় হয়ে ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়েবসাইট। বর্তমানে কোটি কোটি গ্রাহক ফেসবুক ব্যবহার করছেন। গ্রাহকরা এতে বিনামূল্যে সদস্য হন এবং বন্ধু সংযোজন, বার্তা প্রেরণের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত হন।  ব্যক্তিগত তথ্য আদান প্রদানের মাধ্যমে একজন ব্যবহারকারী শহর, কর্মস্থল, বিদ্যালয় এবং অঞ্চল-ভিক্তিক নেটওয়ার্কেও যুক্ত হতে পারেন।  তৈরির শুরু থেকেই জাকারবার্গ চেয়েছেন গ্রাহকরা যত বেশি একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে পারেন, যোগাযোগ করতে পারেন। সম্প্রতি ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে বেশ কয়েকটি কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ে ফেসবুক। সর্বশেষ ২০১৮ সালে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে যে, একটি রাজনৈতিক সংগঠনের কাছে ৫ কোটি ফেসবুক গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য চলে যায়।

বুধবার লেখা ব্লগপোস্টে ফেসবুককে ‘প্রাইভেসি-ফোকাসড প্ল্যাটফর্ম’ হিসেবে গড়ে তোলার কথা জানিয়ে জাকারবার্গ লেখেন, ‘আমি টের পাচ্ছি অনেকেই মনে করছে না ফেসবুক এ ধরণের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কেন্দ্রিক প্লাটফর্ম তৈরি করতে পারবে বা তারা তৈরি করতে চায়। খোলামেলাভাবে বললে কারণ হলো বর্তমানে গোপনীয়তা সুরক্ষায় আমাদের সুনাম নেই।…তবে বারবার আমরা দেখিয়েছি যে ব্যক্তিগত মেসেজ বা কন্টেন্ট আদান-প্রদানসহ মানুষের সত্যিকার চাহিদা অনুযায়ী সেবা তৈরির সামর্থ্য আমাদের রয়েছে’।

একই অ্যাপস ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন অ্যাপসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার ব্যবস্থা করা প্রসঙ্গে জাকারবার্গ লিখেছেন, ‘মানুষ অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য সেবা বেছে নিতে চায়। আজ যদি আপনি মানুষকে ফেসবুকে মেসেজ দিতে চান তাহলে আপনাকে মেসেনজার ব্যবহার করতে হয়, ইন্সটাগ্রামে ব্যবহার করতে হয় ডিরেক্ট আর হোয়াটসঅ্যাপে ব্যবহার করতে হয় হোয়াটসঅ্যাপ। আমরা মানুষকে এমন সুযোগ দিতে চাই যে এসব নেটওয়ার্কের যেকোনও একটি বেছে নিয়ে তিনি তার বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করতে পারবে।’

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে ফেসবুকের পরিকল্পনা হলো যেকোনও একটি সেবা বা এসএমএস দিয়ে ব্যবহারকারীদের জন্য পরিচিতদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারা সম্ভব করা। তবে জাকারবার্গ বলেছেন, এই সেবা পছন্দ করে নেওয়ার সুযোগ রাখা হবে। ব্যবহারকারীরা চাইলে তাদের অ্যাকাউন্ট আলাদা রাখতে পারবে।

চলতি বছরের শুরুতে নিউ ইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে জানায়, ফেসবুক তাদের মেসেজ আদান-প্রদানের প্লাটফর্ম, হোয়াটসঅ্যাপ, ইন্সটাগ্রাম ও মেসেনজারকে একীভূত করে ফেলার পরিকল্পনা করছে। নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায় এই তিনটি সেবার অ্যাপগুলো আলাদা  থাকবে তবে তাদের নেপথ্যে অবকাঠামোগুলো হবে একই ধরণের। ওই রিপোর্ট প্রকাশের পর ফেসবুকের সমালোচনা শুরু হয়। অনেকেই প্রশ্ন তোলেন প্রতিষ্ঠানটি কোন ক্ষমতা বলে এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ওই সময়ে হাওয়াই এর সিনেটর ব্রায়ান স্ক্যাটজ টুইট বার্তায় বলেন, ‘ এটা ইনক্রিপশনের (কোনও বার্তাকে কোডে পরিণত করা) জন্য ভালো কিন্তু প্রতিযোগিতা ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তার জন্য খারাপ।’

এই পরিকল্পনার সুবিধা বর্ণনায় বুধবার ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা সুবিধাকেই সামনে আনেন।  জাকারবার্গ বলেন, অনেকেই এসএমস আদান-প্রদানে অ্যান্ড্রয়েডে মেসেনজার অ্যাপ ব্যবহার করছে। এসব এসএমএস এর লেখা এনক্রিপ্ট করা সম্ভব না কারণ এসএমএস প্রোটোকল এনক্রিপ্ট করা হয় না। মেসেজিং সেবাগুলোকে যদি একীভূত করা হয়, ‘তাহলে ব্যবহারকারীরা মেসেনজার থেকে যে কারোরও ফোন নাম্বারের হোয়াটসঅ্যাপে এনক্রিপ্টেড মেসেজ পাঠাতে পারবে’। জাকারবার্গ বলেন, ‘আমার বিশ্বাস ব্যক্তিগত যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে এনক্রিপ্টেড মেসেজ পাঠানো বাস্তবায়ন করার কাজ করাই যথার্থ’।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ফেসবুক হয়তো বিতর্কের ঘটনা থেকে নিজের দায় এড়াতে চাইছে। বিবিসির উত্তর আমেরিকা অঞ্চলের প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিবেদক ডেভ লি বলেন, ফেসবুক যদি আরও গোপনীয়তা অবলম্বন করে তাহলে যেকোনও ঘটনায় তাকে দায়ী করা কঠিন হবে।

তবে নিজের ব্লগপোস্টে ব্যক্তিগত মেসেজ আদান-প্রদান, অদৃশ্য কন্টেন্ট ও ছোট গ্রুপ চ্যাট-এর সফলতার দিকে ইঙ্গিত করেছেন জাকারবার্গ। বলেন, অনলাইন যোগাযোগের ক্ষেত্রে এগুলোই দ্রুত বর্ধনশীল ক্ষেত্র। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যায় হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজ। সম্প্রতি এটি দিনে ৫০ কোটি মানুষের ব্যবহারের রেকর্ড গড়েছে।

কোনও কন্টেন্ট স্থায়ী হয়ে না থাকায় ব্যবহারকারীরা যে কারোর সাথে যোগাযোগে স্বাচ্ছন্দ পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে। জাকারবার্গ বলেন, ‘মানুষ নিজেদের মধ্যে স্বাচ্ছন্দ পাবে আর মনে করবে না যে তাদের শেয়ার করা কন্টেন্ট পরে আবার ফিরে এসে তাদের কষ্ট দেবে। সেকারণে আমরা মেসেজগুলো তাদের প্রয়োজনীয় বার্তা পৌঁছে দেওয়ার পর তাদের আর রেখে দিতে চাই না।’ উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ফেসবুক ব্যবহারকারীকে অপশন দিতে পারে যে তার দেওয়া মেসেজগুলো পাঠানোর এক বছর, এক মাস বা কয়েক সেকেন্ডের মাথায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুছে যাবে। এর মাধ্যমে মেসেজ আদান-প্রদান সংক্রান্ত তথ্য দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করে রাখাও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত