গৌতম বুদ্ধের ত্রিস্মৃতি বিজড়িত বুদ্ধপূর্ণিমা

প্রকাশ : ১৪ মে ২০২২, ২০:৩৭

সাহস ডেস্ক

বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বুদ্ধপূর্ণিমা। খ্রীষ্টপূর্ব ৬২৩ অব্দের এ দিনে গৌতম বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেন, খ্রীষ্টপূর্ব ৫৮৮ এর এ দিনে সাধনায় সিদ্ধি লাভ করেন বুদ্ধ, ৫৪৩ খ্রীষ্টপূর্বাদ্ধে তিনি মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। বুদ্ধের জন্ম হয়েছিল নেপালের লুম্বিনী কাননে শালবৃক্ষতলে। বুদ্ধপূর্ণিমা হল বুদ্ধের ত্রিস্মৃতি বিজড়িত। এ তিথিতে বুদ্ধ জন্ম, বোধি ও মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। বুদ্ধপূর্ণিমার এ তিথিতে মাতৃদেবী মহামায়া বাবার বাড়িতে যাওয়ার জন্য রাজা শুদ্ধধনের কাছে অভিপ্রায় ব্যক্ত করলে রাজা কালবিলম্ব না করে রাজন্যবর্গ সহ রাজ কর্মচারীদের মহামায়ার বাবার বাড়িতে যাওয়ার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন। দেবদহ ও কপিলাবস্তু নগরী অপরুপ সাজে সজ্জিত করা হল। রানীকে বহনকারী রথ যাত্রা করে যখন নেপালের লুম্বিনী কাননে পৌঁছে তখন প্রসব বেদনা শুরু হয়। লুম্বিনী কাননে শালবৃক্ষতলে বোধিসত্ত ভূমিষ্ঠ হলেন।

বুদ্ধপূর্ণিমার দিন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করে বুদ্ধের আরাধনা করেন। ভক্তরা এদিন মন্দিরে প্রদীপ প্রজ্বলন করে, ফুলের মালা দিয়ে মন্দির সাজিয়ে বুদ্ধের উপাসনা করে। এদিন বুদ্ধ পূজার পাশাপাশি পঞ্চশীল, অষ্টশীলা, সূত্র পাঠ, সুত্রশ্রবন ও সমবেত প্রার্থনা করা হয়। বৌদ্ধ ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পঞ্চশীল তত্ত্ব। এই তত্ত্ব মেনে চললে জীবনে দুঃখদূর্দশা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে বুদ্ধ শিখিয়ে গেছেন। পঞ্চশীল তত্ত্ব হলো - ১. জীবমাত্র হিংসা থেকে বিরত থাকা, ২. চুরি করা থেকে বিরত থাকা, ৩. ব্যাভিচারী না হওয়া, ৪. মিথ্যা কথা না বলা, ৫. মাদকদ্রব্য সেবন না করা। গৌতম বুদ্ধ বলেন, “সুখ তারা কখনোই উপভোগ করেন না যারা নিজের জিনিস নিয়ে খুশি থাকতে পারে না। বুদ্ধের মতে যারা নিজের জিনিস নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন, তারাই পৃথিবীতে সুখী।” মহামতি বুদ্ধ বলেছেন ----“সুখে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় হল, জীবনের প্রতিটি জিনিসে ভালো কিছু খুঁজে নেওয়া, সবকিছু থেকে পজিটিভ কিছু খুঁজে বের করাই হল আসল উদ্দেশ্য। নিজেকে তৈরি করো সবকিছুর মধ্য থেকে ভালোকে খুঁজে নিতে।”

বৌদ্ধ ধর্মে মানুষের হৃদয়বৃত্তিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। মানুষের মধ্যে যে জ্ঞান শক্তি, ইচ্ছা শক্তি ও কল্যাণ শক্তি রয়েছে তা জাগ্রত করাই বৌদ্ধ ধর্মের প্রধান লক্ষ্য। বুদ্ধ চতুরার্য সত্য জ্ঞান লাভ করে জাগতিক দুঃখের অন্তসাধন করতে সব সময় সচেষ্ট থাকতে বলেছেন। সত্য জ্ঞান লাভের ক্ষেত্রে বুদ্ধ বলেছেন----“সত্ত্ব গণের বিশুদ্ধির নিমিত্তে, শোক ও বিলাপের বিনাশের জন্য, দুঃখ ও দৌমনস্য দূর করার জন্য সত্যপ্রাপ্তি ও নির্বাণ সাক্ষাৎকারের নিমিত্তে চারি স্মৃতিপ্রস্থান একমাত্র মার্গ।"

মহামানব বৌদ্ধ মৈত্রী- করুণা- মুদিতা- উপেক্ষা এই চারটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে জীবনযাপন করতে বলেছেন। জাতি ধর্ম বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে সত্ত্বদের সমান গুরুত্ব ছিল তার নিকট। ধর্ম পদে বুদ্ধ বলেছেন----- “বৈরীতার দ্বারা বৈরিতা, শত্রুতার দ্বারা শত্রু তা কখনো প্রশমিত হয় না। অবৈরীতা ও মৈত্রীর দ্বারাই শত্রুতার উপশম হয়।” মহামতি বুদ্ধের বাণী জগতের অনিত্য জ্ঞান উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। মানুষে মানুষে মৈত্রী ও প্রেমের সেতুবন্ধন তৈরি করে। বুদ্ধপূর্ণিমায় আসুন সকলে মিলে সব ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে শামিল হই। যুদ্ধ বন্ধ হোক, ফিরে আসুক শান্তির পৃথিবী। মানবিক পৃথিবীর উদয় হোক। পৃথিবীটা হোক মানুষ ও মানবতার, অহিংসা ও ভালবাসার।

লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক, সুনামগঞ্জ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত