আমার স্বপ্নিল দ্বিচক্রযানের কথকতা

প্রকাশ : ০৮ জুন ২০২৩, ১১:৫৬

ড. আখতারুজ্জামান

 স্মৃতিচারণ

আমরা যারা মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত গ্রাম্য পরিবার, প্রতিবেশ ও পরিবেশে বড়ো হয়েছি তাদের কাছে শৈশবে পা চালিত একখানা বাই সাইকেল চালানো শেখা ও নিজের  মতো করে একটা বাই সাইকেল ব্যবহার করা একটা স্বপ্নিল ব্যাপারই ছিলো বটে! বাই সাইকেলকে পরিশীলিত বাংলায় বলা হয় দ্বিচক্রযান। সাইকেল নামে এটা সমধিক পরিচিত।

আমাদের ছোটোবেলা ও যৌবনের প্রারম্ভে স্বল্পতম দূরত্বে চলাচলের অন্যতম যানই ছিলো এই সাইকেল। কর্দমাক্ত ও রিলিফ ম্যাপের রাস্তায় যানটি পরিচালনা করা যেতো বেশ নির্বিঘ্নে। তাই আমাদের ছেলেবেলায় অভিভাবকেরা সেটা নিজেদের তত্বাবধানে যতন করে রাখতেন যাতে করে আমাদের মতো 'নাবালক দস্যুদের' হাতে পড়ে সেটা বিকল না হয়।

আমার পাঠভ্যাস এবং দ্বিচক্রযানে হাতেখড়ি হয় মোটামুটি একই সময়ে। সময়টা বিগত শতাব্দীর ষাটের দশকের শেষভাগে। বাড়িতে সে সময় মাত্র দুইখানা সাইকেল ছিলো। 

একখানা বাবার; ব্রিটেনে প্রস্তুতকৃত পুরাতন র‍্যালি সাইকেল এবং সদ্য বিয়ে হওয়া মেজভায়ের বিয়েতে তাঁর শ্বশুরবাড়ি হতে ১৯৬৮ সালে যৌতুক হিসাবে প্রাপ্ত নিউ ব্র্যাণ্ডের আরেকখানি র‍্যালি সাইকেল। 

সে সময় চালাতে আরামদায়ক র‍্যালি সাইকেলের সবিশেষ কদর ছিলো। পরে দ্রুত র‍্যালি সাইকেলের জায়গা দখল করে ফেলে চায়না মেড ফিনিক্স বাই সাইকেল (phoenix bicycle)। রূপকথার অমরত্বের অধিকারি ফিনিক্স পাখির নামানুসারে এটার নামকরণ করা হয়ে থাকতে পারে বলে আমার অনুমান।

যাকে আমরা বলতাম ফনিক্স সাইকেল। সে সময় দেশে 'ব্যাকো বা বিকো' ও 'প্রিন্স' নামে অপেক্ষাকৃত কম দামের আরো দু'খানি সাইকেল বাজারে পাওয়া গেলেও সেসবের কোনো পাত্তা ছিলো না র‍্যালি ও ফনিক্স সাইকেলের কাছে। 

নিউ ব্র্যান্ডের এই সাইকেল দু'টিকে তখন আভিজাত্য ও ঐতিহ্যের সারথীও বলা হতো! এমনকি ভালো জামা কাপড় পিন্দে এ দু'টি ব্র্যান্ডের একখানা সাইকেল সাথে নিয়ে কেউ যত্রতত্র হৈ হৈ রৈ রৈ করে ঘুরাঘুরি করলেও তাকে নিশ্চিত করেই আমাদের সমাজে একজন মর্যাদাবান মানুষের সম্মান দেওয়া হতো।

ষাট এবং সত্তরের দশকে যৌতুকের একখানা নতুন  র‍্যালি বা ফনিক্স  সাইকেল প্রাপ্তি ছাড়া গ্রামের মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলের বিয়ে অনেকটাই অসম্ভব ছিলো। এটাকে আবার বংশীয় ঘরের মানুষজন যৌতুক বলতে রাজি নন! তারা বলতেন মেয়ের বাবা শখ করে নতুন নওশাকে বাইক-টি উপহার হিসাবে দিয়েছেন! এটা নির্জলা মিথ্যাচারের ছেলে ভুলানো সত্য সংস্করণ হলেও বুদ্ধিমানেরা ঠিকঠাক সেটা বুঝে ফেলতেন!

তবে দ্রুত গতি সম্পন্ন আরামদায়ক ফনিক্স সাইকেল দেখতেও র‍্যালি সাইকেল থেকেও বেশ চমৎকার ছিলো। সে সময়ে এরচেয়ে বাহারী সাইকেল আর ছিলো না। শৌখিন মানুষেরা নবতর সংযোজন হিসাবে সাইকেলের পেছনে সুন্দর ক্যারিয়ার, সামনে সিনথেটিকের ঝুড়ি, চাকার কেন্দ্রে রঙিন সোনালী আঁশের ফুলেল মালা, ত্রিকোণাকার ফ্রেমের মাঝে মোটা কাপড়ের মানানসই থলে, রাতে অন্ধকার রাস্তায় চলার জন্য ঘর্ষণে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সিস্টেমসহ হাতলের সামনে উজ্জ্বল আলোর ব্যবস্থা ইত্যাদি উপকরণ দিয়ে সুসজ্জ্বিত করণের ব্যবস্থা করতেন।

যতটা স্মৃতি হাতড়িয়ে মনে করতে পারি, তাতে ১৯৭৫ সালের দিকে একটা ফনিক্স সাইকেলের দাম ছিলো বোধকরি ৫ হাজার টাকার মতো। আট ক্লাসে পড়ার সময় জনৈকা মামাতো বোন হাওয়া বুবুর বিয়েতে যৌতুকের এই বাহন কেনার দরদাম নিয়ে সে  সময় বেশ কথা চালাচালি হয়েছিল বলে সেটার দামটা আমার নিউরনে কিঞ্চিৎ গেঁথে আছে বলে খানিকটা অনুমেয়। 

মেজভায়ের শ্বশুরবাড়ি হতে প্রাপ্ত ব্র্যান্ড নিউ র‍্যালি সাইকেল তাই সেটা ভাই কাউকে ধরতে দেন না। সোজা ঘর থেকে বের করে বাইরে গিয়ে আবার ধুয়ে মুছে সেটা ঘরেই শোভিত হতো। ওদিকে কুষ্টিয়া শহরসহ এখানে ওখানে যাবার জন্য বাবার একমাত্র বাহন ঐ পুরাতন র‍্যালি সাইকেল। 

ফলে কেউ কাউকে সহসা তার সাইকেলের ধারেও ঘেষতে দেয় না। বাড়িতে এই দু'টি সাইকেলের কোনো একটা যদি ঘরের বাইরে দৈবাৎ  উঠানে থাকে তাহলে সেটা নিয়ে বাম হাত দিয়ে সাইকেলের বাম হাতল ধরে ডান হাতটা সিটের উপরে রেখে হাফ প্যাডেল মেরে মেরে সাইকেল চালোনা শেখার একটু আধটু চেষ্টা করতাম। 

আমার সাইকেল রাইডিং'র ট্র্যাক ছিলো বাড়ির ভেতরের বিশাল ঐ খোলা উঠানখানি। আমাকে সাইকেল চালানো শেখানোর কোনো ওস্তাদ ছিলো না। আশপাশের সমবয়সী পোলাপানদের দেখেই তেমন তেমন করে নিজের মতো  প্রাকটিস করতাম মাত্র। 

এখনের মতো, সে সময় ছোটো সাইকেল ছিলো না এবং ছোটো সাইকেলের সাথে এখন বাড়তি যে দুটো চাকা লাগানো থাকে, আগে ওসবের বালাই ছিলো না। থাকলেও  আমাদের কর্ণকুহর অব্দি সে খবর আসেনি। ফলে সাইকেল চালানো প্রাকটিস করতে হতো ঐ বড়ো সাইকেলে দিয়েই। আর গ্রামের সবাই সেটাই করতো।

আমরা যেভাবে সাইকেল চালানো শিখতাম সেটাকে বলে হাফ প্যাডেল মারা। বাড়ির ভেতরে চুরি করে যখন হাফ প্যাডেলে সাইকেল চড়া রপ্ত করে ফেলি তখন সেই দক্ষতা ও ক্যারিশমা দেখে বাবা ও মেজোভাই সজ্ঞানে খানিকটা দয়া পরবশ হয়ে তাঁদের স্ব স্ব সাইকেল আমাকে সাইকেল চালোনা শিখতে দিতে রাজি হয়েছিলেন। 

এবার বাবা ভায়ের সদয় অনুমোদন পেয়ে কোনো এক গ্রীষ্মের তাপদাহের শুভদিনে ঘর থেকে বাইরের রাস্তায় বাবার সাইকেলখানি নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। 

আমাদের বাড়ির পশ্চিম পাশেই এশিয়ার বৃহত্তম সেচ নালা জি.কে প্রজেক্টের ক্যানেলের দু'পাশের কাঁচা রাস্তা। প্রথমদিন বাড়ির বাইরে যেয়ে সাইকেলের হাফ প্যাডেল থেকে ফুল প্যাডেল মারার জন্য যেই না সিটের উপরে উঠতে গেছি ওমনি বাড়ির পুকুরের ডানপাশে সারি সারি লাগানো ছোটো খেজুর গাছের মধ্যে ঝপাৎ করে সাইকেল সহ হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাই। 

খেজুরের ধারালো কাঁটায় স্বীয় তনুর স্থান বিশেষ রক্তাক্তে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়; কিন্তু ঝোপালো গাছ বিধায় সাইকেল অক্ষত থাকে। রক্তাক্ত শরীর নিয়েই জি. কে ক্যানেলের পাড় ধরে সেদিন বিকেলেই সিটের উপরে উঠে সাইকেল চড়া শেখার পূর্ণাঙ্গ কোর্সের সফল সমাপ্তি টানতে সক্ষম হই।  

আনন্দের আতিশায্যে বিষাক্ত খেজুর কাঁটার বিষও সেদিন আমাকে দুর্বল করতে পারিনি। সেই রাতটা বিশেষ বিজয়ের মহানন্দে অনেকটা বিনিদ্রই কেটেছিলো বটে! 

এখানে বলে রাখা আবশ্যক সে সময়  আমাদের মতো বাপে তাড়ানো মায়ে খেদানো স্কুল পালানো বান্দরমার্কা চান বদনদের অনেকেই সাইকেল চালানো শিখতে গিয়ে হাড়গোড় ভেঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার রেকর্ডও কিন্তু নেহায়েত কম করতো না।

এরপর সাইকেল চড়া শেখা তো শেষ হলো কিন্তু সাইকেলের উপরের সিটে উঠে সাইকেল চালাতে পারি বটে, তবে সমস্যা হলো বড়ো সাইকেলের উপরে উঠে সাইকেলের প্যাডেলের নিচ পর্যন্ত পা পৌঁছায় না। প্যাডেল যখন উপরে উঠে আসে তখন এক পা দিয়ে জোরে ধাক্কা দিয়ে আরেক পায়ের কাছে প্যাডেল আসার জন্য অপেক্ষা করি। মনটা বড্ড খারাপ এটা ভেবে যে, কবে বড়ো হবো আর ফুল প্যাডেল সাইকেল হাঁকায়ে এগাঁও সেগাঁও ইতিউতি করে ডাট দিয়ে বেড়াবো !

এখন বিভিন্ন সাইজের সাইকেলের পর্যাপ্ততা হেতু সে সব হাফ প্যাডেলে সাইকেল চালানোর দৃশ্য আজ আর খুব একটা চোখে পড়ে না। তদুপরি, মুদ্রামানের অবমূল্যায়ের সাথে সাইকেলের দাম এখন অতিমাত্রায় কম।

আমি ছোটোবেলায় একটু বেশিই বাটুল কিসিমের ছিলাম তাই ফুল প্যাডেল সাইকেল চালনায় পূর্ণ সক্ষমতা অর্জন করতে সপ্তম শ্রেণি পড়াকাল অব্দি আমাকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল। 
 
ক্লাস সিক্স থেকে কুষ্টিয়া শহরের মিলপাড়াস্থ মোহিনী মোহন বিদ্যাপীঠে আমার পাঠভ্যাস চলে। শহরতলী লালন মাজারের দক্ষিণাবর্তী মামু বাড়ি ছেঁউড়িয়া থেকে স্কুল অব্দি ধীর গতিতে হেঁটে গেলেও বিদ্যাপীঠ অব্দি পৌঁছুতে সময় লাগতো মিনিট বিশেকের মতো। অগ্রজ অনুজ একগাদা ছাত্ররা দলবেঁধে তখন পাঠশালায় যেতাম, রাজা উজির নাজির মারার খোশগল্প করতে করতে। তাই হাঁটার কষ্ট মালুম করতে পারতাম না। 

এবার স্কুল পরিবর্তন করে ভর্তি হই, কুষ্টিয়া জেলা স্কুলে; সেখানে আসা যাওয়ায় পদব্রজে সময় লাগতো পাক্কা দুই ঘন্টা। কিন্তু সমস্যা হলো একজন সঙ্গীও তখন ছিলো না। আবার সে সময় সাইকেল কিনে দেওয়ার জন্য বাড়িতে তাগাদা দিয়েও কোনো কাজ হয় না। বড়ো কষ্টে জীবন নষ্টের মতো অবস্থা! 

পড়ালেখায় মন বসাতে পারিনা! শারীরিক কসরতে ক্রমাগত শরীর দুর্বল হতে থাকে। ওদিকে নতুন স্কুলে অধিকতর ভালো ভালো ছাত্রদের পাশে  ছেড়ে আসা স্কুলের ফার্স্ট বয় দ্রুত মূল্যহীন হয়ে পড়তে শুরু করে। মহাসংকটে চোখে সরষে ফুল দেখতে শুরু করি!

এভাবে মাস ছয়েক চলার পরে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালোরাতে বিয়ে হওয়া আমার একমাত্র চাচা তখন পৃথক অন্নে বসবাস করলেও আমার স্কুলে যাওয়ার সুবিধার্থে চাচা তাঁর শ্বশুর বাড়ি থেকে যৌতুক হিসাবে প্রাপ্ত চায়না ফনিক্স সাইকেলখানি আমাকে দিয়ে দেন। তাতে চাচী একটু গোসসা হয়ে ক'দিন গোমড়ামুখো থাকলেও চাচার গ্রীন সিগন্যাল পেয়ে আমি সেটা নিয়ে ভোঁদৌড় দিয়ে ছুটে চলি কুষ্টিয়া পানে। 

একথা সত্য সেদিন যদি চাচার ঐ সহযোগিতা না পেতাম তাহলে আমার পক্ষে আজ আমার আমি হয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারতাম কিনা, সেটা এক অনন্তর জিজ্ঞাসা বটে! তাই উচ্চ শিক্ষার সোপানে ওঠার প্রথম ধাপ অতিক্রমে আমার একমাত্র চাচা সেদিন যে আন্তরিক সহযোগিতা করেছিলেন, তার সে ঋণ কখনো শোধ হওয়ার নয়।

চাচা এখনো বেঁচে আছেন তবে ২০১৭ সাল থেকে তিনি বাকশক্তি রহিত অবস্থায় আছেন। তারপরেও গ্রামে গেলে আমাদের প্রতি তাঁর অন্তরের আকুতিকে বেশ করে বুঝতে পারি। চাচার জন্য কায়মনে দোয়া করি। 

১৯৭৯ সাল। কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্র। 

তখনও চাচার দ্বিচক্রযান আমার কেয়ারে। এরই মাঝে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে মাঠকর্মী হিসাবে কর্মরত আমার মেজোভাই তাঁর অফিস থেকে বাংলাদেশি ব্র্যান্ডের একখানা প্রিন্স সাইকেল পান। ভায়ের কাছে তখনো নতুন দেশি মডেলের প্রিন্স সাইকেল অপেক্ষা সেই শ্বশুরালয়ের র‍্যালি সাইকেলের কদর বেশি ছিলো। তাই মেজোভাই সেটা তখন আমাকে দিয়ে দিলে সসম্মানে ফেরত দিয়েছিলাম চাচার শ্বশুরবাড়ি থেকে প্রাপ্ত ফনিক্স সাইকেল। 

এখানে একটা বিষয় বলা আবশ্যক আমাদের সময়, যতটা মনে করতে পারি, প্রতিটি সাইকেলের জন্য প্রতি বছর ৩ বা ৫ টাকা হারে ইউনিয়ন পরিষদ হতে একটা ট্যাক্স টোকেন নিয়ে সাইকেল চাকার স্পাইকে লাগিয়ে রাখা হতো। 

মাঝে মাঝে ইউনিয়ন পরিষদের নির্ধারিত বিজ্ঞ বিচারকগণ জনবহুল রাস্তায় "মোবাইল কোর্ট" বসিয়ে সেই ট্যাক্স টোকেন আদায় করতেন। মেজোভায়ের অফিস থেকে প্রাপ্ত বাই সাইকেলের পেছনের মাডগার্ডের (আমরা বলতাম মাঠঘাট) ওপরে একখানা এ্যালুমিনিয়ামের পাতে পরিবার পরিকল্পনা (প: প:) দপ্তরের লোগো সাঁটানো ছিলো। 

সেটা দেখিয়ে মোবাইল কোর্টকে বলিষ্ঠভাবে বলতাম, "লাইসেন্স কিসের? দেখছেন না এটা সরকারি সাইকেল!" কোর্টের বিজ্ঞ বিচারকেরা, বুঝে না বুঝে সেটা পরখ করে বিনা বাক্যব্যয়ে আমাকে ছেড়ে দিতেন। কারণ আমার জানামতে প: প: দপ্তরের লোগো বোঝার মতো দক্ষতা তখন ঐসব মোবাইল কোর্টের "বিজ্ঞ বিচারকদের" ছিলো না। ফলে আমি যা বলতাম সেটাই সঠিক বলে তারা মেনে নিতেন।

সেই বাহাদুরি বছর দুয়েক বেশ করেছি। আমি রাস্তায় শুধু অপেক্ষা করতাম, কখন সাইকেলের মোবাইল কোর্ট বসে! কী সব পাগলামিতে পরিপূর্ণ ছিলো আমাদের সে সময়ের জীবানাচার! ভাবতেই অট্টহাসি হাসতে ইচ্ছে করে।

কলেজ জীবন শেষ করে ১৯৮১'র শেষ প্রহরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে আমার জীবন থেকে দ্বিচক্রযানের ইতি ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে অনেক দূরে দূরে ক্লাস করতে যেতে হতো। বাড়ি হতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইকেল নিয়ে যাবার অনুমতি থাকলে সেটা অতটা পথ বহন করবার মতো হাল আমলের মতো বাস, ট্রেন বা ট্রাকের  সুবিধা ছিলো না।

আমার জীবনের সাথে নিবিড় মমতায় জড়িয়ে থাকা সেই স্মৃতিময় চারখানা  দ্বিচক্রযানের শেষ পরিণতি কী হয়েছিলো সে ইতিহাস আর আমার পক্ষে সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। তবে এখন মনে হয় প্রতিটা বাই সাইকেলই এ্যানটিক হিসাবে সংরক্ষণ করলে সেগুলো আমাদের পারিবারিক ইতিহাসের এক অমূল্য স্বাক্ষর বহন করতো কাল থেকে কালান্তরে!

  • লেখক: ড. আখতারুজ্জামান। আপাদমস্ত একজন সুচিন্তক, লেখক ও গবেষক।

 

(লেখালেখি ও উপস্থাপনায় যথেষ্ট বিশ্লেষণী ক্ষমতা রাখেন তিনি। সরকারের কৃষি বিভাগের একজন উচ্চ পদস্ত কর্মকর্তা ছিলেন, বর্তমানে তিনি অবসর জীবনযাপন করছেন। যশোহর শহরে লেখকের অবস্থান। কৃষি ও প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণ নিয়ে তার লেখা বই পাঠকমহলে সমাদৃত।)

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

লেখকদের নামঃ