এই মৃত্যুর মিছিল একদিন থেমে যাবে

প্রকাশ : ০৩ এপ্রিল ২০২০, ১৯:৪৯

একদিন ঝড় থেমে যাবে পৃথিবী আবার শান্ত হবে" জীবনমুখী বাংলা গানের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী নচিকেতার গানের মতো আমরা আত্মবিশ্বাসী। গোটা পৃথিবী জুড়ে প্রতিদিন যে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে তা একদিন থেমে যাবে।

সুদূর চীনের উহান থেকে আজ সমগ্র পৃথিবীকে নাড়িয়ে দিয়েছে এই করোনা ভাইরাস। বিশ্বের ১৯৫টি দেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। গোটা স্পেনের মানুষ গৃহবন্দী। বিশ্ব বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র নিউইয়র্ক এখন নিরব,নিস্তব্ধ। ইতালি যেন মৃত্যুপুরী । করোনার ছোবলে গোটা ইউরোপ এখন বিপন্ন। ফ্রান্স,কানাডা,জার্মানির শহরগুলোর রাস্তায় মানুষ দেখা যায় না।

করোনা যেসকল বিশ্ব নন্দিত তারকারাদের জীবন কেড়ে নিয়েছে তাদের মধ্যে 'স্টার ওয়ারস' ফ্র্যাঞ্চাইজির অভিনেতা অ্যান্ড্রু জ্যাক, জাপানি কৌতুক অভিনেতা কেন শিমুরা, আমেরিকান অভিনেতা মার্ক ব্লাম, আমেরিকান কান্ট্রি সংগীতশিল্পী জো ডিফি, টনি অ্যাওয়ার্ডস ও এমি জয়ী চিত্রনাট্যকার টেরেন্স ম্যাকন্যালি, ক্যামেরুনের স্যাক্সোফোন কিংবদন্তি মানু দিবাঙ্গো। মার্কিন সংগীতশিল্পী ও গীতিকার ‌অ্যাডাম শেলিংগার,ভারতের শিখ ধর্মীয় সংগীতশিল্পী পদ্মশ্রী সম্মাননাপ্রাপ্ত নির্মল সিং ।

আইইডিসিআরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা পাওয়া গেছে ৬১ জন এবং মৃতের সংখ্যা ৬ জন,সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৬ জন এবং আইসোলেশনে ৮২ জন। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র গোটা ভারত লকডাউন। ভারতে মৃতের সংখ্যা ৭২জন। অপরদিকে বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রাজিল,ইরান,যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, তুরস্ক,সৌদি আরব এবং সুইডেনে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে।

ভাইরাসের বিরোদ্ধে আমাদের যে লড়াই তা বাঁচার লড়াই। এই লড়াইয়ে বাঁচাতে হবে নিজেকে। পরিবার , সমাজ, দেশকে এবং দেশের মানুষকে। এই লড়াই কোন যুদ্ধ ক্ষেত্রে অস্ত্র কিংবা গোলাবারুদ দিয়ে নয়। এটি জম্মু কাশ্মীরের মতো একটি দেশের সাথে আরেকটি দেশের ভূখণ্ড রক্ষার লড়াই নয়। এটি কোন বিচ্ছিন্নবাদী গোষ্ঠী কিংবা সন্ত্রাসী সংগঠন আল কায়েদা কিংবা আইএসআই বিরুদ্ধে নয়। এই লড়াই রক্তপাতহীন সচেতনতার লড়াই। আত্মসংযমের লড়াই। এই লড়াই ঘরে থাকার লড়াই । এই লড়াই সেচ্ছায় হোম কোয়ারান্টাইনের থাকার লড়াই। এই লড়াই সময়ের জন্য লড়াই। করোনাকে ভয় নয় জয় করতে হবে আমাদের। আসুন আমরা মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি এবং অপপ্রচার না ছড়িয়ে ,কোন ধরণের গুজব না রটিয়ে করোনা প্রতিরোধে সাহসে বুক বেঁধে দাঁড়াই ।

করোনা মোকাবেলায় সরকারী নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। ঘরে থাকতে হবে। সচেতন থাকতে হবে। নিরাপদে থাকতে হবে। সরকারী ত্রান পৌঁছে দিতে হবে উপার্জনহীন মানুষের বাড়ি বাড়ি। জনপ্রতিনিধিদের এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। কেউ যেন না খেয়ে না থাকে । দিনমজুর,কৃষক,শ্রমিক,মেহনতি মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে। সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে সেইসব প্রান্তিক কর্মহীন মানুষদের প্রতি। তাদের কাছে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিতে হবে। সরকারী নির্দেশনা অমান্য করে কেউ দেশকে তথা দেশের মানুষকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিবেন না। এই সংকট মুহূর্তে আসুন আমরা শপথ করি দেশের বৃহত্তম স্বার্থে এবং দেশের মানুষের বৃহত্তর কল্যাণের জন্যে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৩১ দফা নির্দেশনা মেনে চলি। সকলের সম্মিলিত ত্যাগ স্বীকারই পারে এই মহাবিপর্যয়ের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করতে। এই যুদ্ধে আমরা জিতবোই ।

মসজিদ, মন্দির,গীর্জা এবং প্যাগোডায় আবার ধর্মপ্রাণ মানুষেরা প্রার্থনার জন্য ছুটে যাবে। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় আবার খুলবে। আবার শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হবে প্রতিটি শিক্ষাঙ্গন । অফিস, আদালত আবার খুলবে । বন্ধ কলকারখানা আবার চালু হবে। গার্মেন্টস শ্রমিকরা আবার কর্মমূখর হবে । আবার তারা প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পাবে । আবার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের ভিড় বাড়বে। আবার শহরের বড় বড় শপিংমলে,খেলার মাঠে,পার্কে মানুষের আনাগোনা বাড়বে ।

 

আমরা আবার পহেলা বৈশাখ পালন করবো। পহেলা বৈশাখের বর্ণিল উৎসবে আবার মেতে উঠবে দেশ। পাহাড়ে আবার বিজু-সাংগ্রাই-বৈসাবি-বিষু উৎসব পালিত হবে। সমতলে আবার ওয়ানগালা এবং দেউলি উৎসবে মেতে উঠবে গারো এবং হাজং জনগোষ্ঠীর মানুষেরা।

পৃথিবীর কোন সংকটই দীর্ঘস্থায়ী নয়। আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াবো। জীবনের চলার পথ আবার স্বাভাবিক হবে, মসৃণ হবে। এই মৃত্যুর মিছিল একদিন থেমে যাবে।

লেখক: সুজন হাজং, গীতিকার ‌

 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

লেখকদের নামঃ