মরিলে কান্দিস না আমার দায়!

প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০১৯, ১৫:১৩

বাকের ভাই- এই ইউ! ওপেন ডোর!

দোকানদার- এত রাতে দোকান খোলা যাইবো না।

বাকের ভাই- হোয়াট? বদি শুনলা বেয়াদবটা কি বলল? শুনলা তুমি?

বদি- দাঁড়ান বাকের ভাই, ব্যাপারটা আমার উপর ছেড়ে দিন। এই যে ব্রাদার! আমাদের একটা কেক দরকার। রাত একটু বেশি হয়ে গিয়েছে কিন্তু ব্যাপার না। বাকের ভাইয়ের কাছে রাত দিন সব সমান। বুঝলেন ব্রাদার, একটা কেক আমাদের চাই চাই। বাকের ভাইয়ের বয়স বেড়েছে কিন্তু চেইন ঘোরানো কিন্তু ভুলেন নাই মনে রাখবেন।

বাকের ভাই- বদি পারলা না দোকান খোলাতে?

বদি- স্যরি বাকের ভাই, আজকাল মানুষের ভয়ডর কমে গেছে। দামই দিলো না। বলে, গেট লস্ট!

বাকের ভাই- এই ইউ! লাস্ট টাইম ওয়ারনিং! ভেরি ব্যাড হয়ে যাবে কেক না দিলে।

বদি- আহহ বাকের ভাই এভাবে কাজ হবে না, চেইন বের করেন।

মুনা- বদি ভাই একটু ভালো করে আবদার করলে কি হয় শুনি? কেন দোকানদারের সাথে এমন করছেন বলেনতো?

বাকের ভাই- মুনা তুমি আবার এর মধ্যে আসলে কেন? গো! গো! সিট রিক্সা!

মুনা- বাকের ভাই আমার সামনে ইংলিশ বলবেন না দয়া করে। যে জিনিস পারেন না তা বলতে যান কেন শুনি? এই যে দোকানদার ভাই একটু শুনুন। আজ আমাদের একটা বিশেষ দিন। একটা কেক লাগবে। জানি রাত অনেক হয়েছে যদি দিতে পারেন উপকার হয়, নাহয় থাক আমরা কেক ছাড়াই চলে যাবো।

দোকানদার- দাঁড়ান আপা। আসেন ভিতরে আসেন। আপনের মত ভালো কইরা কইলেই হইতো। এই দুই লোক আইসাই ভয় দেখান শুরু করছে। বলে চেইন দিয়া মারবে! তাদের ব্যবহার দেখি রিকশাআলাদের চেয়েও খারাপ।

বদি- বাকের ভাই! বাকের ভাই শুনলেন কি বলল? শুনলেন কি বলল বেয়াদবটা?

বাকের ভাই- বাদ দাও বদি। সময় খারাপ। আর মুনার সামনে নো ঝগড়া।

হিমু- হ্যালো রূপা?

রূপা- হুম বল। কেমন আছ হিমু?

হিমু- কিভাবে বুঝলে আমি?

রূপা- রাত এগারোটায় আমাদের ল্যান্ড ফোনে তুমি ছাড়া আর কেউ ফোন দেয় না।

হিমু- তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে রূপা। একটু পরে বারান্দায় এসে দাঁড়াবে? আমি আসতেছি।

রূপা- চুয়ান্ন দিন পরে ফোন দিয়ে বল আমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে? সত্যি তুমি আসবে?

হিমু- হ্যাঁ! আমি আসতেছি।

রূপা জানে হিমু আসবে না, তবুও সে আলমারি খুলে মায়ের জামদানীর ভাঁজ খুলল। সে জানে হিমু আসবে না, তবুও আয়নার সামনে বসে চুলের খোঁপা খুলল, কপালে টিপ দিলো। হাতে চুড়ি পরতে পরতেই বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো রুপা। সে জানে হিমু আসবে না, তবুও তার খুব আনন্দ লাগছে অপেক্ষা করতে। সে জানে হিমু আসবে না, তবুও সে হাসি মুখে গলির দিকে তাকিয়ে আছে। ঐতো অন্ধকার গলি দিয়ে কেউ একজন খুড়িয়ে খুড়িয়ে আসছে। সে জানে এটা হিমু নয় তবুও তার অপেক্ষা করতে ভালো লাগছে। গলির অন্ধকার থেকে লোকটা ল্যাম্পপোস্টের আলোতে আসছে। রূপার বুক ধুক ধুক করছে।

রূপার ধারনা ভুল করে আজ হিমু ঠিক এসে উপস্থিত হয়েছে রূপার বাড়ির সামনে।

রূপা- তোমার পায়ে কি হয়েছে?

হিমু- পেরেক ঢুকে কেটে গেছে।

রূপা- এই অন্ধকার রাতেও খালি পায়ে হাটতে হবে?

হিমু- রূপা চল রওনা দেয়া যাক। বাকের ভাই মুনা আপা বদি ভাই কেক নিয়ে অপেক্ষা করছে। ভুলে গেছো নাকি যাওয়ার কথা?

রূপা- ভুলি নাই। অনেকদিন তোমার খোঁজ নাই তাই ভেবে ছিলাম আজ আমাকে একাই যেতে হবে।

হিমু- চল রিকশা নেয়া যাক।

রূপা- রিকশা না, চল কিছুক্ষন হাটি। জরী শুভ্র কই?

হিমু- শুভ্রের চোখতো পুরাই গেছে, মনেহয় না আসবে।

রূপা- যার সাথে জরী আছে তার কি আর ভুবন দেখতে চোখ লাগে? দেখবে ঠিক তারা চলে আসবে।

বাকের ভাই- হিমু, দায়িত্বশীল ইংরেজি কি?

হিমু- রেসপন্সিবল বাকের ভাই।

বাকের ভাই- তোমাকেতো আমি রেসপন্সিবল বয় হিসেবেই জানতাম। তোমার দায়িত্ব ছিল মিসির সাহেব কে নিয়ে আসার আর তা তুমি ভুলে গেলে? ভেরি ডিসঅ্যাপয়েন্ট হিমু! ভেরি ডিসঅ্যাপয়েন্ট!

হিমু- বাকের ভাই আমার মন বলছিল, মিসির সাহেব আমার সাথে আসবেন না, তাই যাইনি উনাকে আনার জন্য।

বাকের ভাই- হিমু! তুমি ফুটপাতে বসা তোতার মত ভবিষ্যৎ দেখা বন্ধ করবা? একবার কি হইছে জানো? একলোক ফুটপাতে বসে তোতা দিয়ে ভবিষ্যৎ দেখতেছিলো। তো কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, মুনার সাথে আমার সম্পর্ক কোন দিকে যাচ্ছে দেখোতো! সে তোতা দিয়ে কাগজ টেনে বলল, অতিশীঘ্রই আপনার বিবাহ হবে মনের মানুষের সাথে!ল। বছর তিনেক পরে তার সাথে আমার আবার দেখা হয় তার তোতার তো গাল টিপে দিতে পারি নাই, তার গালটা হালকা টিপে দিয়েছিলাম! বুঝছো? এখন চল মিসির সাহেবকে নিয়ে আসি। বদি, তুমি রূপা আর মুনার সাথে থাকো।

মিসির সাহেব- কে? বাকের নাকি?

বাকের ভাই- দেখলা হিমু এই হচ্ছে রিয়েল পাওয়ার! দরজায় টোকা দিতেই মিসির সাহেব বুঝে গেলেন কে এসেছে!

মিসির সাহেব- বাকের, পাওয়ারের কিছু নাই। সিগারেটের কড়া গন্ধ আসছিল দরজার বাহির থেকে। আমার দরজার সামনে তুমি ছাড়া কেউ সিগারেট ধরাবে না। তাই অনুমান করলাম তুমি আর কিছু না। কি অবস্থা বল? হিমু কেমন আছো?

বাকের ভাই- মিসির সাহেব, আপনাকে নেয়ার জন্য এসেছি আমরা।

মিসির সাহেব- বাকের, আমার শরীরটা ভালো না। কয়দিন ধরেই ঠান্ডা কাশি শ্বাসকষ্ট। আর কাশি একবার শুরু হলে দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না। কাজের ছেলেটাকে বললাম, একটু ওষুধ নিয়ে আসতে। সে যে ওষুধের জন্য গেছে আর খোঁজ নাই।

বাকের ভাই- মিসির সাহেব তাহলেতো খুব বিপদের কথা। কাজের ছেলে মেয়ে সদাই করতে গিয়ে দেরি করা মানে ঘরের কোন জিনিস পত্র হাওয়া হয়ে যাওয়া। গতবার আপনার এই টেবিলের উপরে একটা টিভি দেখে ছিলাম সেটা নাই। দেখলেন ধরে ফেলেছি! আপনার কাজের ছেলে টিভি নিয়ে উধাও হয়েছে।

মিসির সাহেব- বাকের, টিভি নষ্ট। এক সপ্তাহ আগে লোক এসে ঠিক করতে নিয়ে গেছে দোকানে।

বাকের ভাই- ওহ! তাহলেতো ভেরি গুড মিসির সাহেব। আচ্ছা আপনি রেস্ট নেন আমরা আসি আজকে। নিজের প্রতি যত্ন নিয়েন। লুক আফটার।

হিমু- বাকের ভাই আমার মন বলছে কেন জানি ঠিক সময় মিসির সাহেব এসে পরবেন।

বাকের ভাই- হিমু তুমি আবার তোতার মত ভবিষ্যৎ বলতেছো? লোকটার বিছানা থেকে দাঁড়ানোর অবস্থা নাই আর উনি নাকি আসবেন এত দূরে! আচ্ছা ওইটা কে শুভ্র না? এর চশমা কই? চশমা ছাড়া এতো আরেক ঝামেলা শুরু করবে।

রূপা- জরী, তুমি শুভ্রের চশমা লুকাও নাইতো? বেচারা কেমন করে এদিক সেদিক ঘুরতেছে চশমা ছাড়া।

জরী- লুকাই নাই রূপা আপা। সে আসার সময় চশমা ভেঙ্গে ফেলেছে। যদিও আমার ব্যাগে আরেকটা চশমা আছে তবে সে থাকুক কিছুক্ষন চশমা ছাড়া। তার চোখ দুটা দেখি কিছুক্ষন। বুঝলেন রুপা আপা, শুভ্রের সবচেয়ে সুন্দর হলো তার চোখ দুইটা। অথছ কি মোটা চশমা দিয়ে না ঢাকা থাকে তার চোখ দুইটা!

বদি- বাকের ভাই! কে জানি আসতেছে! মিসির সাহেবের মত লাগছে না? আরে বাকের ভাই! মিসির সাহেবইতো! পেছনে কারা? ওহ মাই গড বাকের ভাই! মাজেদা খালাও দেখি এসেছে বাদলের সাথে। হিমু ভাই, বাদল কি বিবাহ করেছে নাকি? সাথে সুন্দর মেয়েটা কে?

স্রষ্টার অনুপস্থিতিতেই তার সৃষ্টিরা দল বেধে হাজির হবে নুহাশ পল্লীতে। নতুন দিনের সূর্য উঠার আর মাত্র কিছু ঘন্টা বাকি। ভোরের আলোতে আলোকিত হওয়া শুরু করবে চারপাশ। মিসির সাহেব বাকের ভাই হিমু রূপা জরী শুভ্র বদি ফুঁ দিবে মোমে। নিশ্চয়ই দূর থেকে তিনি তা দেখবেন আর চোখ মুছবেন আর সাথে দূরে কোথাও থেকে ভেসে আসবে, মরিলে কান্দিসনা আমার দায়!

নাহ কিছু মানুষের মৃত্যু নেই, তারা বেঁচে থাকেন তাদের সৃষ্টিতে! আপনিও বেঁচে আছেন বাকের ভাই হিমু মিসির আলি রূপা জরী শুভ্রতে! বেঁচে থাকবেন এই শহরের শত যুবক যুবতির বুকে হিমু বাকের ভাই মুনা রূপা জরী হয়ে!

শুভ জন্মদিন স্যার!

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

লেখকদের নামঃ