ভাইকে বাঁচিয়ে রাখতে এক তরুণের অভিনব লড়াই

প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০১৯, ১৮:১০

আজকে সন্ধ্যায় আতিফ ফোন দিয়েছিল। ও কাঁদছিল, গলা কাঁপছিল, স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার ভয়।

আতিফ আমাদের প্রজন্মের একজন তারছেড়া তরুণ। জামালপুর সরিষাবাড়ির পাঠাগার আন্দোলনের সৈনিক সে। আতিফ শহীদ মিলনের ছোটভাই, শহীদ মিলন স্থানীয় আওয়ামীলীগ কর্মী। স্থানীয় জমিজমার জের ধরে প্রতিবেশী রাজাকার পরিবার শহীদ মিলনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। রাতের আধারে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় মিলনকে, পরেরদিন সকালে শহীদ মিলনের গলাকাটা লাশ দেখতে পায় গ্রামবাসী।

এই একটা মৃত্যুই পাল্টে দেয় একমাত্র ছোটভাই আতিফকে। শুরু হয় নতুন লড়াই। সরিষাবাড়ির জন্য মিলনের মৃত্যু একটা নতুন জাগরণের নাম।

বিচারহীনতার সংস্কৃতির এই যুগে আতিফরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল মিলন হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে। খরচ করেছে অনেক টাকাও। বিচার মেলে নি। কেস ঝুলে আছে এখনও, চার্জশিটই দাখিল হয়নি এখনও।

ভাই-কে বাঁচাতে পারে নি আতিফ। সদ্য এসএসসি পাশ করা একটা ছেলের কি সামর্থ্য এই দানবদের সাথে লড়া!

মিলনকে বাঁচিয়ে রাখার অভিনব এক উদ্যোগ নেয় আতিফ। নিজেদের ভাঙা ঘরের একটা অংশ আলাদা করে তৈরী করে "শহীদ মিলন স্মৃতি পাঠাগার"। একটা অজো পাড়াগাঁয়ে শিক্ষাবিমূখ একদল মানুষকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করার অনিশ্চিত লড়াইয়ে নামে আতিফ একাই।

আতিফ আজ অনেকটা সফল। আতিফের লড়াইয়ের গল্পটা ইতিমধ্যে ছড়িয়ে গেছে গোটা দেশে, প্রথম আলো, দেশ রূপান্তরের মত দুইটি শীর্ষ জাতীয় দৈনিক আতিফের লড়াইয়ের গল্প ছড়িয়ে দিয়েছে গোটা দেশে। সকাল বেলা সাইকেলের পেছনে বই বেঁধে গ্রামে বেড়িয়ে পড়া আতিফ এই মুহুর্তে আমি-সহ অনেকের অনুপ্রেরণার নাম। আমার গ্রামে পাঠাগার, পিন্টু তালুকদারের গ্রামে পাঠাগারের পেছনে ফুয়েল জোগাচ্ছে এই পিচ্চি ছেলেটা।

স্থানীয় পথভ্রষ্ট কিছু সাংবাদিক কিছুদিন হল আতিফের পেছনে লেগেছে। নানাভাবে আতিফের পাঠাগার আন্দোলনকে দমিয়ে দিতে চাচ্ছে। মিলনের নামের পাশে শহীদ বসাচ্ছে কার স্বীকৃতিতে, এই পাঠাগারের পেছনে আতিফের খারাপ উদ্দেশ্য আছে বলে ব্লাকমেইল করার চেষ্টা করছে। এমনকি শহীদ মিলনকে ইয়াবা ব্যবসায়ী বলতে পর্যন্ত তাদের বাঁধছে না।

অনেক বড় কাজ করিয়ে দেখালেও আতিফ বয়সে এখনও বাচ্চা। এইতো কয়েকদিন আগেই তার ইন্টারমিডিয়েট কমপ্লিট হল, জামালপুরের স্থানীয় কলেজে অনার্সে ভর্তি হল। এভাবে অসাধু উদ্দেশ্যে আতিফ এই মহতী উদ্যোগকে বাঁধা দিতে থাকলে ছেলেটা মনোবল হারাবে। আতিফরা লড়াইটা থামিয়ে দিলে আমাদেরও আর স্বপ্ন দেখানোর কেউ থাকবে।

আমাদের আতিফের পাশে দাড়ানো উচিত। মিলন বেঁচে নেই, কিন্তু আতিফকে ভাইহারা হতে দেয়া চলবে না। আতিফের এই লড়াইয়ে আমি আতিফের ভাই হয়ে পাশে আছি। সীমিত সামর্থ্যের সবটা দিয়ে আমি আতিফের লড়াইটা বাঁচিয়ে রাখব।

লেখক: মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও এক্টিভিস্ট

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত