বুশফায়ার থেকে বুলবুল; ভালো থাকো পৃথিবী

প্রকাশ | ১২ নভেম্বর ২০১৯, ১৩:০৮ | আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৯, ২০:৩৬

সংগৃহীত

সিডনিতে আছি ১৩ বছরের অধিক সময় ধরে। খবরে পাই, প্রতিবছর অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন জায়গায় বুশ ফায়ার হয়। বুশ ফায়ার অস্ট্রেলিয়ান নেটিভ গাছের বংশবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয়। কিছু গাছ আছে, যার ফল আগুনে পুড়ে ফেটে যায়। তার বীজ থেকে নতুন গাছের জন্ম। প্রকৃতির কি খেলা!

ইদানীং প্রকৃতির মধ্যে প্রচন্ডরকম অস্থিরতা দেখছি। এ বছর সিডনির আশে পাশে, ব্লু মাউন্টেইন, বাথহার্স্ট, গোলবার্নে প্রচন্ডরকম তুষারপাত হয়েছে। ক্যাঙ্গারুরা, জঙ্গল থেকে আতংকে ও দিশেহারা হয়ে বের হয়ে এসেছে। এরাতো কখনো বরফ দেখেনি, বরফ কিভাবে কমব্যাট করতে হয়, প্রকৃতির কাছে হাতেখড়ি এখনো এদের হয়নি। এভাবে চললে, ধারনা করছি আগামী কয়েক বছর পরে, শীতকালে পাঁচশ কি:মি: ড্রাইভ করে বরফ দেখতে স্নোয়ি মাউন্টেইন যাওয়া লাগবে না! হার্বার ব্রিজের উপর স্নো স্কিইং করা যাবে!!

এ বছর শীতকালে, দুই তিনদিন কথা নেই, বার্তা নেই ভয়ংকর শীলাবৃস্টি হলো লিভারপুল এলাকায়। হাজার হাজার গাড়ীর উইন্ড স্ক্রিন ভেঙ্গে শেষ। অনেক গাড়ী রিটেন অফ!

গত চার পাঁচদিনে ফেসবুক আর নিউজফিডের হেডলাইন আমাকে দিশেহারা করে দিচ্ছে।

বাংলাদেশে ‘বুলবুল’, কৃষক, জেলে থেকে প্রান্তিক লোকজনদের বিশাল বিপদের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। যার বেশীরভাগ খবরই আমরা সংবাদপত্রে পাইনি।

মিলিয়ন হেক্টর জঙ্গল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে নিউ সাউথ ওয়েলসে। দাবানলের লিকলিকে হিংস্র থাবা এখনো গ্রাস করে চলছে শত শত মাইল।

আজ, সিডনির এই বসন্তেও তাপমাত্রা হবে ৩৭ ডিগ্রি! টোটাল ফায়ার ব্যান। তার মানে, ঘরের বাইরে কোথাও আগুন জ্বালানো যাবে না; না বারবিকিউ, না সিগারেট। সামার তো এখনো শুরুই হয়নি!

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, সিডনিবাসিরা সাবধান! আজ সিডনির যেখানে সেখানে, যখন তখন দাবানল শুরু হতে পারে। ক্যাটাসট্রোফিক ফায়ার। মুহুর্তে ধ্বংস করে দিতে পারে আমাদের এই শখের বিলাসবহুল নগর। আমি আতংকিতই বোধ করছি।

ওদিকে গত কয়েকমাস মেইনল্যান্ডে চলছে, ড্রট বা খরা। হাজার হাজার গবাদি পশু, গরু-ছাগল-ভেড়া পানি না পেয়ে মরে যাচ্ছে। যে অস্ট্রেলিয়া গরুর জন্য বিখ্যাত, সেখানে র্যান্চ মালিকেরা, মনের কস্টে গরুর ফার্মগুলো থেকে ব্যবসা গুটায় নিচ্ছে।

অস্ট্রেলিয়া পানির মধ্যে অবস্থিত একটা মহাদেশ। অথচ এ দেশের বহু জায়গায়, বিশেষত মেইন ল্যান্ডে ডাব্বোর মতো এলাকায় খাবার পানির স্টক শুন্যতে নেমে এসেছে।

পৃথিবী আমাদের মা। মাকে আমরা ছিড়েকুরে খাচ্ছি। জঙ্গল কেটে উজাড় করছি, আনবিক বোমার রেস করছি, ইচ্ছামত কার্বন ডাই এমিশন করাচ্ছি। পলিথিন দিয়ে ভরে ফেলছি পৃথিবী।

পৃথিবী তো প্রতিবাদ করবেই। প্রকৃতির ভয়াল প্রতিআক্রমনে, একদিন আমরা সব ধ্বংস হয়ে যাব। সেদিন মনে হয় খুব দুরে নয়।

এখনই আমাদের সতর্ক হবার সময়। প্রকৃতিকে অত্যাচার করা বন্ধ করার এখনই শ্রেষ্ঠ সময়!!

 

লেখক: কবি, প্রবাসী ব্যবসায়ী

ছাইক্ষেত্র, অস্ট্রেলিয়া
১২ ই নভেম্বর’১৯