খোকা এবং বাদল: দুই বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুতে দুই রকম গণ-সম্মানের ফারাক কেন!

প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০১৯, ১৩:৪৩

কয়েকদিন আগে এক বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা মারা গিয়েছেন। আজ মারা গেছেন আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা মঈনুদ্দিন খান বাদল।

দুজনই বাম রাজনীতি দিয়ে রাজনীতি শুরু করেছেন।
খোকা বামপন্থী আদর্শ পরিবর্তন করে বিএনপির সাথে মিশে গিয়েছিলেন। বাদল আদর্শের আপোষ করে আওয়ামী লীগের সাথে জোটবদ্ধ ছিলেন।

খোকার বিরুদ্ধে কয়েকশো কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ আছে। ৯ টি মামলার দুইটিতে ১২ বছরের জেল হয়েছিল। (রাজনৈতিক শত্রুতায়ও হতে পারে)।

বাদলের শত্রুও জানে তার কোন কোটি টাকা কেন, লাখ টাকাও নাই।
উনি এমপিদের জন্য ট্যাক্স ফি গাড়িও নেন নি ১২ বছর সাংসদ থেকেও! গত মেয়াদে বিমান মন্ত্রনালয়ে দূর্নীতির প্রতিবাদে উনি সংসদীয় কমিটি থেকে পদত্যাগের হুমকিও দিয়েছিলেন। বিমানের মন্ত্রী বাতিল হলো, বিমানের প্রধানের চাকুরী গেল।
এই বছরই বিমান লোকসান কাটিয়ে লাভের মুখ দেখলো ৩০ বছরে।

খোকা মুক্তিযুদ্ধে অবরুদ্ধ ঢাকা শহরে আক্রমণ চালিয়েছিলেন। বাদল চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার দখল করেছিলেন আর্মির সাথে সম্মুখ যুদ্ধে। উনাদের মুক্ত করা কালুরঘাট বেতার থেকেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন এম এ হান্নান, জিয়াউর রহমান প্রমুখেরা।

খোকা ব্যাক্তিগতভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাইলেও দলীয়ভাবে জামায়াতের নেতাদের সাথে অনেক প্রোগ্রাম করেছেন। কিংবা করতে বাধ্য হয়েছেন।
বাদল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ৩০ বছর ধরে সোচ্চার ছিলেন। কোন প্রোগ্রামে যুদ্ধাপরাধীদের দলের কেউ থাকলে সেই টকশো কিংবা অনুষ্ঠানে যেতেন না।

খোকা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর ক্ষমতা না ছাড়লে লীগের নেতাকর্মীদের দা-কাস্তে দিয়ে মেরে মোকাবেলা করতে বলেছিলেন।
অন্য প্রেক্ষিতে পেট্রোল হামলার শিকার বাদল বলেছিলেন- জামাত শিবির দেখলে উনি গুলি করার অনুমতি দিতেন।

খোকা প্রথম জীবনে সেক্যুলার পলিটিক্স করলেও, ডানপন্থী শিবিরের পলিটিক্স করতে গিয়ে হজ্ব করেছেন আল্লাহ-খোদার নাম নিতেন।
বাদল সারাজীবন সেক্যুলার পলিটিক্স করলেও, শেষজীবনে অসুস্থ হয়ে ধার্মিক হয়েছিলেন ব্যাক্তিগতভাবে, কোরআন হাদিসের উদ্ধৃতি দিতেন, হজ্ব করেছেন।

খোকা শেষজীবনে পাসপোর্ট ফেরত না পেয়ে লীগ সরকারের প্রতি ক্ষোভ নিয়েই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করলেন। বাদল কালুরঘাট সেতুর অনুমোদন না পেয়ে, শেষ বয়সে পদত্যাগের হুমকি দিয়ে, নিজের লীগ মিত্রদের প্রতি ক্ষোভ নিয়েই মারা গেলেন।
দু'জনই মরলেন ভিনদেশের হসপিটালে।

এই ছিল তাদের মিল আর অমিলের খতিয়ান।
এতক্ষণ পড়েছেন?
এবার দেশের শীর্ষ ৫ টা বাংলা আর অনলাইন পত্রিকার কমেন্ট বক্সে যান।
দেখেন এদেশের লোকজন কিভাবে ৯৯% কমেন্টে খোকাকে সালাম জানাচ্ছে; একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। বলছেন-ভুল ত্রুটি থাকবে। একজন মুক্তিযোদ্ধাই তার শ্রেষ্ঠ পরিচয় সম্মান দেয়ার জন্য।
আর বাদলকে গালাগালি করছে। তার মৃত্যুতে উল্লাস করছে।
তার বেলায় মুক্তিযোদ্ধার সম্মান থিওরি কেন অচল?

৫টা পোর্টালের নিচের কমেন্টবক্সে এই দুই বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুসংবাদ নিয়ে পাবলিক রিএকশন দেখেন।

তারপর আন্দাজ করেন, আমাদের জানাশোনা রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদ আর তাদের উপর ক্ষেপে গিয়ে আহ্লাদে কোলে নেয়া হবু ফ্যাসিবাদের জন-পরিমিতি চিত্রটা কেমন? তার পাবলিক ডিসকোর্স কেমন! 

 

লেখক: অনুবাদক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট।

 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

লেখকদের নামঃ