ইতিহাস কাউকেই ক্ষমা করে না

প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৮:৫৬

ঐক্যফ্রন্ট নেতা ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী জামাত প্রসঙ্গে বলেছেন, পিতার দায় পুত্রের উপর বর্তায় না। ৭১'এর ভূমিকার জন্য জামাতকে ক্ষমা চাওয়ার জন্যও উপদেশ খয়রাত করেছেন তিনি। জামাত অবশ্য তাঁর এই উপদেশ থোরাই আমলে নিয়েছে। জামাত এখন পর্যন্ত তাঁর উপদেশ কানে তুলেনি।

ড. কামাল হোসেন সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন তাঁরা নির্বাচিত হলে সংবিধান অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলবেন। এখন প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক তিন কোন সংবিধান মেনে চলবেন? যে সংবিধান তিনি রচনা করেছিলেন সেইটি, নাকি সামরিক জান্তা জিয়া কতৃক ধর্ষিত সামরিক ফরমানে রচিত সংবিধান?

সামরিক জান্তারা বাংলাদেশের সংবিধানকে বলাৎকার করেছে, দেশের রাজনীতিকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখে। সেই ধর্ষিত সংবিধানের ক্ষত এখনও দেশ বয়ে বেড়াচ্ছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসেও কিছু স্পর্শকাতর বিষয় সংবিধান থেকে সরাতে পারেনি। তারমধ্যে একটি হলো সংবিধানের মুখবন্ধ থেকে 'বিসমিল্লাহ হির রাহমানুর রাহিম' ও 'রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম' প্রথমটি সংবিধানে বেয়নেটের খোঁচায় সংবিধানে যোগ করেছিলেন জান্তা জিয়া দ্বিতীয়টি করেছিলেন জান্তা এরশাদ।

ড. কামাল হোসেন এখন জান্তা জিয়ার দল ও জামাতের সাথে মিত্রতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন দেশের বৃহত্তের স্বার্থের কথা বলে। ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হবার প্রাক্কালে ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেন দুজনই জামাত এই জোটে থাকবে না বলে আশ্বস্ত করেছিলেন। এখন বোঝা যাচ্ছে তাঁরা দুজনই জাতিকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছিলেন। 

জান্তা জিয়ার দল বিএনপি ড. কামাল হোসেন প্রতিষ্ঠিত দল গণফোরামের আগেই, জামাতের সাথে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য সিট ভাগাভাগিতে গেছে, ড. কামাল হোসেনকে অন্ধকারে রেখে। গণফোরামের সাথে এখনও বিএনপির নির্বাচনী সমঝোতা হয়নি। ড. কামাল হোসেন নিজ দল গণফোরামের লক্ষ্য ও আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়ে জামাত - বিএনপির সাথে নীতিহীন ঐক্যে শামিল হয়েছেন। তিনি ও তাঁর দলের নেতা সুব্রত চৌধুরী বলেছেন, তাঁরা জামাত দেখতে পাচ্ছেন না। জামাত সব নাকি আওয়ামী লীগের মাঝে। তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে জামাতের সাথে জান্তা জিয়ার দলের যে রাজনৈতিক বোঝাপড়া হয়েছে, সেটি ড. কামাল হোসেন ও ডাঃ জাফরুল্লাহ গং আমলে নেননি কেন?

ড. কামাল হোসেনের মেয়ের জামাই ডেভিড বার্গম্যন জামাত - শিবিরের পক্ষে কলম ধরেছিলেন। এখন আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে ড. কামাল হোসেন গং যুদ্ধপরাধী চক্র জামাত - শিবিরকে নানান কথা বলে বিএনপির পেটে ঢুকিয়ে দিয়ে, ঐক্যফ্রন্টের আড়ালে দেশের রাজনীতি ও সংসদে হালাল করতে চাইছেন।

ইতিহাস অবশ্যই আওয়ামী লীগের অপশাসনের বিরুদ্ধাচারণের আড়ালে জামাত - শিবিরকে দেশের রাজনীতি ও সংসদে হালাল করার প্রচেষ্টায় ড. কামাল হোসেন ও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী গংদের ঘৃন্য প্রচেষ্টাকে মনে রাখবে। ইতিহাস কাউকেই ক্ষমা করে না - ড. কামাল হোসেন ও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী গংদেরও ক্ষমা করবে না যুদ্ধপরাধীদের হালাল করার প্রচেষ্টার জন্য।

লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা ও অনলাইন এক্টিভিস্ট

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

লেখকদের নামঃ