পাঠ্যক্রমে মার্শাল আর্ট অন্তর্ভূক্ত করার আহ্বান

প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২০, ১৭:২৭

সাহস ডেস্ক

বাংলাদেশে নগরায়নসহ দ্রুত সামাজিক নানা পরিবর্তন ঘটছে। সামাজিক বিভিন্নমুখী পরিবর্তন ও ক্রমবর্ধনশীল নগরায়নের হাত ধরে বেড়ে উঠছে নতুন নতুন সামাজিক সমস্যা যেমন- যৌন হয়রানি, মাদকাসক্তি, স্বাস্থ্যহীনতা, একাকিত্ব, হতাশা, কিশোর অপরাধসহ বিপথগামিতার নানা দিক। এই অস্থির প্রতিযোগিতায় কোমলমতি শিশু-কিশোরসহ তরুণদের সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠার অনুকূল পরিবেশ দিতে আমরা যদি ব্যর্থ হই তবে উপরোক্ত সমস্যার হার বাড়তেই থাকবে। খেলাধুলায় সামাজিক, মানসিক ও দৈহিক সুস্থতার বিকাশ ঘটে। বর্তমান বিশ্বে ইনডোর ক্রিড়া হিসেবে মার্শাল আর্ট বিশ্বব্যাপী চর্চা হচ্ছে। একটি স্বাস্থ্যোজ্জ্বল, শক্তিশালী বাংলাদেশ নির্মাণে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মার্শাল আর্ট চর্চার সুযোগ তৈরি করা জরুরী। আজ ১৩ অক্টোবর ২০২০, সকাল ১১টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), মার্শাল আর্ট ফাউন্ডেশন এবং গ্রীণফোর্সের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক মানববন্ধনে উক্ত দাবী জানানো হয়।

প্রোগ্রামের সভাপতি পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, মহানগরী ঢাকাসহ সারাদেশেই বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলাধূলাসহ নানা সামাজিকতার সুযোগসমূহ ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে। অথচ খেলাধুলা বা শরীরচর্চা একজন মানুষের সুস্থ্যভাবে বেড়ে উঠার অন্যতম আবশ্যিক অনুসঙ্গ। আমাদের দেশে এক সময় ঢাকা শহরে অনেক খোলা জায়গা ছিল যা খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু ধীরে ধীরে সে সকল খোলা জায়গা অপরিকল্পিতভাবে দালান কোঠা নির্মাণ ও বিভিন্নভাবে দখলের ফলে আজ প্রায় বিলীনের পথে। শুধু শহরাঞ্চল নয় এখন গ্রামেও খেলার মাঠের সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। এমতাবস্থায় অল্প জায়গায় ইনডোর ক্রীড়া হিসেবে মার্শাল আর্ট প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চালু করা দরকার।

মার্শাল আর্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আতিক মোরশেদ বলেন, আর্টের মার্শাল আর্টের বিভিন্ন স্টাইলসমূহ যেমন-কারাতে, তায়কোয়ানডো, উশু, জুড়ো, কিক বক্সিং, জুজুৎসু, বুত্থান প্রভৃতি স্টাইল বিশ্বব্যাপী চর্চা হচ্ছে। মার্শাল আর্টের একটি বিশেষত্ব হল স্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি এর মাধ্যমে কার্যকরী আত্মরক্ষার কৌশল শেখা যায় এবং অল্প জায়গায় অনেকে একসাথে অনুশীলন করা যায়। তাই উন্নত দেশসমূহ তাদের শিক্ষা কারিকুলামে মার্শাল আর্টকে একটি বিষয় হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করেছে। যার দীর্ঘমেয়াদী সুফল তারা পাচ্ছে। বাংলাদেশে কিছু বিশ^বিদ্যালয় এবং অভিজাত এলাকার স্কুলে এটি চালু থাকলেও প্রয়োজন সারাদেশের শিক্ষার্থীদেরকে চর্চার সুবিধা করে দেয়া।



অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সোতোকান কারাতে বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ও সাফ গেমসে কারাতের কোচ মো: জসিম উদ্দিন, সাফ গেমসে গোল্ড মেডেলিস্ট হুমায়রা আক্তার অন্তরা, সচেতন নগরবাসীর সভাপতি জি এম রুস্তম খান, নদী বাঁচাও আন্দোলনের সদস্য সচিব শাকিল রেহমান, যুগ্ম-প্রচার সম্পাদক মো: হাসিবুল হক পুনম, ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম মুজিবুর রহমান, গ্রীণফোর্সের সমন্বয়ক প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, আত্মরক্ষা, আত্মশৃঙ্খলা এবং ক্রীড়া মাধ্যম হিসেবে মার্শাল আর্ট অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করতে পারে। ক্রীড়া হিসেবে মার্শাল আর্ট ইভেন্টগুলো বাংলাদেশে সম্ভাবনাময়। এশিয়ার অলিম্পিক খ্যাত সাফ গেমসের মেডেল বিবেচনায় দেখা যায় মার্শাল আর্ট ইভেন্টগুলো থেকে অনেক মেডেল এসেছে। তাছাড়াও মার্শাল আর্টের বহুবিধ উপকারিতা রয়েছে। প্রতিটি মার্শাল আর্ট স্টাইলেই শ্রদ্ধার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে শিক্ষা দেয়া হয় এবং প্রশিক্ষণার্থীকে তা মেনে চলতে হয়। মার্শাল আর্টের ঘাম ঝরানো কঠোর প্রশিক্ষণ শিক্ষার্থীর সহ্যক্ষমতাকে অবিশ্বাস্যভাবে বাড়ায়। উচ্চ চাপের মাঝেও নিজেদেরকে মানিয়ে নিতে পারে এবং অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়। বিশেষ করে শিশুদের জন্য মার্শাল আর্ট খুবই উপকারী। শিশুদের সঠিক বেড়ে উঠা, শারীরিক ভারসাম্য ও নমনীয়তায় মার্শাল আর্ট ইতিবাচক ভ'মিকা রাখে। শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে কায়িক শ্রমনির্ভর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিশুদের নিয়মানুবর্তীতা ও শৃঙ্খলাবোধ গড়ে উঠে। এবং একজন মার্শাল আর্টের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিশু অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে বেড়ে উঠে যা তার ভবিষ্যত জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও সাফল্য অর্জনের পথে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, শাহজালাল ইউনির্ভাসিটিসহ ধানমন্ডি, গুলশান, বনানীর মতো অভিজাত এলাকার কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মার্শাল আর্ট চালু আছে। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও মানসিক বিকাশ বিবেচনায় এবং একটি স্বাস্থ্যোজ্জ্বল, শক্তিশালী বাংলাদেশ নির্মাণে মার্শাল আর্ট পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভূক্ত করে সরকারিভাবে সারাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এটি চর্চার সুযোগ তৈরি করা জরুরী।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত