ভয়াল ২১ আগস্ট ও ভারতবিরোধী অপপ্রচার!

প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৫:২৩

হাসান ইবনে হামিদ

২০০১-২০০৬ সাল, বিএনপি-জামাত শাসনামলে সরকারী মদদে গোটা দেশে জঙ্গিবাদের চাষাবাদ করা হয়েছিলো। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছিলো, গোটা দেশ বুঝি জঙ্গিদের দখলে! সারাদেশে বোমা হামলা এবং গোপালগঞ্জে পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশের আয়োজন করে তৎকালীন বিরোধী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সেই দিনটিতেই বাংলাদেশের রাজনীতির কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সূচনা হয় বেগম খালেদা জিয়ার হাত ধরে। একবিংশ শতাব্দীর ঊষালগ্নে গোটা বিশ্ব যখন প্রগতির পথে নিজেদেরকে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করছে, বাংলাদেশকে তখন টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো মধ্যযুগীয় বর্বরতায়। ২১ আগস্ট কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের উপর হামলার দৃষ্টিকোণ থেকে শুধু বিবেচনা করলেই চলবে না, সর্বোপরি এটি ছিলো মানবতার উপর এক বিরাট আঘাত। ২১ আগস্টের পড়ন্ত বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ-এর নিথর লাশগুলো ছিলো ভুলণ্ঠিত মানবতার স্মারক। বীভৎসতাই যেন ছিল ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক সৌন্দর্য। আর সেই সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ তারা ঘটিয়েছে হত্যাকে উৎসব হিসেবে পালনের মধ্য দিয়ে। কিন্তু এই বীভৎস ঘটনার পর পরেই তা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার একটা অদম্য ইচ্ছে তাদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের রেশ কাটতে না কাটতেই সরকারের পক্ষ থেকে এই গ্রেনেড হামলার দায় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনার উপর চাপানো হয়। শুধু তাই না, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ কে উদ্দেশ্য করে নানা বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন করে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকার।

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনায় শুরু থেকেই হোতাদের আড়াল করতে তদন্তের গতি ভিন্ন খাতে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। তদন্তের নামে বিভিন্ন সময় নানা ‘আষাঢ়ে গল্প’ হাজির করে প্রথম থেকেই বিষয়টিকে বিতর্কিত করার কাজ শুরু হয় সিআইডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও একটি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে। প্রথমেই সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় শেখ হাসিনা নিজে ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলেন! তার ঠিক একদিন পরেই শুরু হয় বিএনপি’র গতানুগতিক ভারত বিরোধী রাজনীতির প্রচারণা। শৈবাল পার্থ নামের একজনকে গ্রেফতার করে ভারতের গোয়েন্দা বাহিনীর একজন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় তৎকালীন প্রশাসন। তারপর আসে জজ মিয়া নাটকসহ আরও অনেক কিছু।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তৎকালীন বিএনপি জামাত জোট সরকার সর্বপ্রথম ফাঁসিয়েছিল শৈবাল সাহা পার্থ নামে একজন নিরীহ হিন্দু ছেলেকে। ওই গ্রেনেড হামলার ঘটনার তদন্ত ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের হার্ডনেট সাইবার ক্যাফে থেকে শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দিয়ে একটি দৈনিকে ই-মেইল পাঠানোর ঘটনার নাটক সাজিয়ে ২৫ আগস্ট বোনের বাসা থেকে ঐ সাইবার ক্যাফেতে ডেকে এনে একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা শৈবাল সাহা পার্থকে আটক করে। ৪ দিন অজ্ঞাত স্থানে আটকে নির্যাতনের পর ২৯ আগস্ট সিআইডি ইন্সপেক্টর তাকে আদালতে পাঠিয়ে পর্যায়ক্রমে ১৪ দিন রিমান্ডে মালিবাগ সিআইডি অফিসে নিয়ে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য বর্বর নির্যাতন চালায়। ২৪ ঘন্টা চোখ কালো কাপড়ে বেঁধে বৈদ্যুতিক শক দেওয়ার পাশাপাশি লাঠিপেটাসহ সকল নির্যাতন চালানো হয়। টানা ১৮ দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে থাকাকালে সারাক্ষণ চলেছে অভিনব কায়দায় নির্যাতন আর সাজানো স্বীকারোক্তি আদায়ের চাপ। পার্থর মা ছেলের মুক্তির জন্য মন্দিরে নিজের রক্ত দিয়ে পূজা দেন। পার্থ যেহেতু ভারতে লেখাপড়া করেছেন তাই তাকে ভারতের চর হিসেবে প্রমাণেরও চেষ্টা করেছিল বিএনপি জামাত জোট সরকার। দীর্ঘ ৭ মাস কারাভোগের পর হাইকোর্টের নির্দেশে ২০০৫ সালের ২৩ মার্চ কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।

পুরো ঘটনার ধারা বর্ণণা আজকের এই লেখায় তুলে ধরছি, পার্থ নামক এক নিরীহ ছেলেকে নির্যাতন এবং অহেতুক ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে জড়িয়ে বক্তব্যের কোন সত্যতা যে এই হামলার সাথে পাওয়া যায়নি তা নিচের লেখা পড়লেই সবার কাছে পরিষ্কার হবে। বিএনপি সরকার কিভাবে অহেতুক ভারত বিরোধী রাজনীতিকে তখন উস্কে দিয়ে নিজেদের অপরাধ ঢাকতে চেয়েছিলো তার সত্যতা যাচাই করার দায়িত্ব জনগণের। 

ভয়াল ও রক্তাক্ত ২১ আগস্ট
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে হত্যার লক্ষ্যে রাষ্ট্রযন্ত্রের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে চালানো হয় বর্বর গ্রেনেড হামলা। সৌভাগ্যক্রমে শেখ হাসিনা বেঁচে গেলেও তৎক্ষণাৎ মৃত্যুর মিছিলে যোগ দেয় ২৪টি তাজা প্রাণ। 

মামলার চার্জশিট 
দেশ বিদেশে এই নারকীয় হামলার তীব্র প্রতিক্রিয়া হলেও ঘটনার তদন্তে গড়িমসি করে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। ২০০৭ সালের পর নতুন করে এ মামলা তদন্তের উদ্যোগ নেয় তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ২০১১ সালের ৩ জুলাই সিআইডি ৩০ জনকে আসামি করে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করে।.

চার্জশিটভুক্ত উল্লেখযোগ্য আসামি 
চার্জশিটে উল্লেখিত আসামিরা হলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোহাম্মদ কায়কোবাদ, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে সাইফুল ইসলাম ডিউক, এনএসআইয়ের সাবেক দুই মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবদুর রহিম ও মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার, ডিজিএফআইয়ের মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (বরখাস্ত) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, পুলিশের সাবেক তিন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদা বকশ চৌধুরী, সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি খান সাঈদ হাসান ও সাবেক এসপি মো. ওবায়দুর রহমান, জোট সরকারের আমলে মামলার তিন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, এএসপি মুন্সী আতিকুর রহমান ও এএসপি আবদুর রশিদ, হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ এবং হুজি-বির ১০ নেতা।.

শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টা চক্রান্তের ছক
হত্যা ষড়যন্ত্রের ছক-১, (হাওয়া ভবন হত্যা পরিকল্পনার মিটিং, ১৪ আগস্ট ২০০৪) 

বেশ কয়েকটি বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালের ১৪ আগস্ট হাওয়া ভবনে আলোচনায় বসে চক্রান্তকারীরা। শেখ হাসিনাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করা হয় সেদিনের মিটিংয়ে। মামলার চার্জশিটে উঠে এসেছে হাওয়া ভবনের সেই কথোপকথন।
তারেক জিয়া- দেশের পরিস্থিতি দিনের পর দিন খারাপের দিকে যাচ্ছিলো এবং রাজনৈতিকভাবে শেখ হাসিনার প্রভাব ও জনসমর্থন তুঙ্গে থাকায় দ্রুত পদক্ষেপ কী নেয়া যায় সে ব্যাপারে সকলের মতামত চান।
তৎকালীন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী জামায়াতে ইসলাম নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মোজাহিদ- আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাকে ইসলামবিরোধী আখ্যা দিয়ে তাকে হত্যার কথা উল্লেখ করেন।
তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর- দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে দুটি পদ্ধতির উল্লেখ করেন। হয় রাজনৈতিকভাবে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে মোকাবেলা করা অথবা তাকে হত্যা করার ব্যাপারে মত দেন তিনি। কোন পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে এই ব্যাপারে মতামত চান এবং শেখ হাসিনার চিরবিদায়ের পক্ষে বাবর মতামত দেন। তার কাছে গ্রেনেড আছে এবং হত্যায় এগুলো ব্যবহার করা যাবে বলেও উল্লেখ করেন।
জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যাকারী মেজর নূর- তিন ধরনের পরামর্শ দেয়। রাস্তায় চলাকালীন বা বাসায় অথবা জনসভায় আক্রমণ করে তাঁকে শেষ করে দেয়া। শেষের পদ্ধতিটিই সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তাঁকে জনসভায় হামলা চালিয়ে হত্যার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
তৎকালীন ভূমি উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু- সকল ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী। হরকাতুল জিহাদ ও জামায়াতে ইসলামের জঙ্গিদের পুরোপুরি সহায়তা দেন পিন্টু ও তার ভাই।
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী- হত্যা পরিকল্পনার সাথে একমত পোষণ করে আর্থিক সহায়তা দেবার প্রতিশ্রুতি দেন। সর্বসম্মতিক্রমে ২১ আগস্টের সমাবেশকে টার্গেট করা হয় এবং ঐদিনই শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। 

হত্যা ষড়যন্ত্রের ছক-২, (হাওয়া ভবন দ্বিতীয় মিটিং, ১৫ আগস্ট ২০০৪ সাল)
তার পরদিন ১৫ আগস্ট একই জায়গায় আবার বৈঠকে বসে তারা। কিলিং মিশন কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে তা নিয়ে আলোচনা হয় সেদিন। এবং হরকাতুল জিহাদ ও জামায়াতে ইসলামের জঙ্গিদের উপর হত্যার এই দায়িত্ব দেয়া হয়।
হত্যা ষড়যন্ত্রের ছক-৩ (লুৎফুজ্জামান বাবরের সরকারি বাসভবনে হত্যা ষড়যন্ত্রের ছক) 
এর পরে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় বেইলি রোডে, লুৎফুজ্জামান বাবরের সরকারি বাসভবনে। সেই দিনই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয় এবং বৈঠকেই প্রাথমিক খরচ মেটাতে হুজি নেতাদেরকে ৫০ হাজার টাকা হস্তান্তর করা হয়। মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন ভূমি উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধূরী, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত খুনিদের একজন, জামায়াতের এক শীর্ষ নেতা, জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জেহাদের আল ইসলামীর দুই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, জঙ্গি সংগঠন আল মারকাজুল ইসলামীর এক নেতা এবং হাওয়া ভবনের শীর্ষ এক ব্যক্তি সেই মিটিংয়ে ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয় চার্জশিটে এবং গ্রেনেডগুলোও দেখানো হয়।

হত্যা ষড়যন্ত্র ছক-৪ (আব্দুস সালাম পিন্টুর বাসায় মিটিং, ১৮ আগস্ট ২০০৪) 
১৮ আগস্ট ২টি কালো জিপ নিয়ে আব্দুস সালাম পিন্টুর বাসায় যান বাবর। তার নির্দেশে বিএনপি নেতা ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ৫৩ নং ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুর রহমান আরিফ ১ ডজন গ্রেনেড আনেন। উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই তাজউদ্দীন, হরকাতুল জিহাদ নেতা আবু তাহের জান্দাল ও কাজলের কাছে ১৫টি গ্রেনেড দেন।

হত্যা ষড়যন্ত্র ছক-৫ (মেরুল বাড্ডার বাসায় মিটিং) 
আসামি আহসানউল্লাহ কাজলের মেরুল বাড্ডার বাসায় ২১ আগস্টে হামলা চালাতে কারা অংশ নিবে সে বিষয়ে বৈঠক ও পরিকল্পনার কথাও লিপিবদ্ধ হয়েছে চার্জশিটে।

হত্যা ষড়যন্ত্র ছক-৬ (দারুল আরকান অফিস মিটিং, ২১ আগস্ট, ২০০৪)
আগেরদিন মুফতি আহসানুল্লাহ কাজল ও আবু জান্দাল ২০ আগস্ট ঘটনাস্থল ও আশেপাশের এলাকা রেকি করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২১ আগস্ট সকাল ১০টার মধ্যে হামলার জন্য নির্বাচিত জঙ্গিরা মুফতি হান্নানের বাসায় জড়ো হয়, সেখানে যোগ দেয় আবু সাইদ জাফর, কথিত সামরিক শাখার ডেপুটি চিফ কমান্ডার জাহাংগির বদর, মহানগর আমীর আবু তাহেরসহ আরও বেশ কয়েকজন। তাদের ব্রিফিং দিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয় সেই সমাবেশস্থলে। এরপর ২১ আগষ্ট ৫ টা ২২ মিনিটে শুরু হয় সেই লোমহর্ষক লীল নকশার বাস্তবায়ন। বেশ কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে হামলায় অংশ নেয় হামলাকারীরা। হামলাকারীদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর ১৫ জন কর্মী ছিল।

পাকিস্তান ও বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার সাথে জড়িত কর্তাব্যক্তিদের ষড়যন্ত্র
পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা সাবেক বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনা হত্যার জন্য শক্তিশালী আর্জেস গ্রেনেড সাপ্লাই দেয়। এই প্রক্রিয়ার সাথে সরাসরি জড়িত হয়। এনএসআইয়ের সাবেক দুই মহাপরিচালক, ডিজিএফআইয়ের হর্তা-কর্তা ও পুলিশের সাবেক তিন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) সরাসরি এই হত্যা ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত হয় যাদের নাম চার্জশিটে উল্লেখিত।
বেগম খালেদা জিয়ার ভূমিকা- সাবেক ডিজিএফআই প্রধান মেজর জেনারেল সাদিক হাসান রুমি পুরো ঘটনা বেগম খালেদা জিয়াকে অবহিত করেন এবং ঘটনা তদন্তের অনুমতি চান। বেগম খালেদা জিয়া তদন্তের অনুমতি না দিয়ে মেজর জেনারেল রুমিকে তাঁর পদ থেকে বরখাস্ত করেন।
বিচারের নামে জজ মিয়া নাটক- বিশ্ব সম্প্রদায়ের চাপের মুখে ২০০৫ সালের ৯ জানুয়ারি নোয়াখালির সেনবাগ থেকে জজ মিয়াকে গ্রেফতার করে গ্রেনেড হামলায় মামলার অপরাধী হিসেবে দেখানো হয়। পরে জজ মিয়ার দরিদ্র পরিবারের আজীবন ভরণপোষণের দায়িত্ব নেয়ার লোভ দেখিয়ে এবং দুই ভায়রা রানা ও শফিকুল ইসলামকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে বাধ্য করা হয়।

পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার বদলে যারা ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে টেনে এনে তেরঙ্গা-লালসবুজ সম্পর্কে ছেদ টানতে চেয়েছিলেন তাদের আশায় গুড়ে বালি! এসব অপপ্রচারে ‘গণভবন থেকে জনপথ রোড’ এর দূরত্ব কমেনি পরবর্তীতে বেড়েছে বৈকি! মনে রাখতে হবে, ধর্মের ঢোল আপনি বাজে। সত্য চিরদিনের জন্য চাপা থাকে না। ইতিহাস কখনো কাউকে ক্ষমা করে না। ইতিহাসের অমোঘ নিয়মে আজ সেই সত্য উদ্ভাসিত হয়েছে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর সেই বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট নৃশংস গ্রেনেড হামলা মামলায় ১৯ জনের মৃত্যদণ্ড এবং ১৯ জনের যাবজ্জীবন সেই সঙ্গে ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থ জরিমানার রায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি নির্দোষ নিরপরাধ শৈবাল সাহা পার্থ এবং জজ মিয়ারাও কলঙ্কমুক্ত হলো।

লেখক: রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত