শুভ জন্মদিন শেখ কামাল

প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০১৯, ২৩:৪০

বিল্লাল হোসাইন রামিন

ক্রীড়া, সঙ্গীত, রাজনীতি, সংগঠন, মুক্তিযুদ্ধ, সেনাবাহিনী ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে মাত্র ২৬ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবনে যে মানুষটা রেখে গেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান আজ সেই মানুষটার ৭০ তম জন্মবার্ষিকী। বলছি বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামালের কথা। শেখ কামাল যদি এখন বেঁচে থাকতেন, তাহলে উনার বয়স হত ৭০। হাসিখুশি আনন্দের প্রতীক এই মানুষটি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের বুলেটের আঘাতের প্রথম শহীদ।

সেই দিন মোশতাকগংদের ভয়ানক কালোথাবায় তিনি শহীদ না হলে হয়ত ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশ থাকত বিশ্বের সব দেশ থেকে এগিয়ে। হয়ত তিনি আজ গান গেয়ে মঞ্চ কাঁপাতেন! অমর হয়ে থাকতেন তিনি তাঁর গানের সুরে। হয়ত তিনি হয়ে উঠতেন একজন বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ! অবাক হচ্ছেন? হবারই কথা কেননা ১৯৭৫ সালের পর থেকেই শেখ পরিবারকে বাংলার ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার নানা চেষ্ঠা করা হয়েছে যার বহু প্রমাণ নানা ক্ষেত্রে পাওয়া যায় সেখানে আপনার আমার পক্ষে শেখ কামাল কি ছিলেন, কেমন ছিলেন, কি ছিল তাঁর সপ্ন, সেটা জানার কথা না।

আজ বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যেভাবে স্থান করে নিয়েছে বিশ্বকাপে তাঁর চেয়ে ভাল অবস্থানে থাকত বাংলাদেশ ক্রিকেট এবং ফুটবল টিম উভয়ই। অবাক হচ্ছেন! অবাক হওয়ার কিছু নেই কারণ শেখ কামালের পক্ষে এটা অসম্ভব ছিলনা। ‘আবাহনী’ চার অক্ষরের এই শব্দটা এপার বাংলা, ওপার বাংলা তথা বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে বসবাসরত সব বাঙালিই একবার হলেও শুনেছেন যদি না শুনে থাকেন, তাহলে বিষয়টা বিশাল লজ্জার বটে। আবাহনী বাংলাদেশের একটি ফুটবল ক্লাবের নাম।

শুনেছি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার স্টেডিয়াম খা খা করলেও সে সময় আবাহনী বনাম মোহামেডান ক্লাবের খেলা হলে স্টেডিয়ামে জায়গা পাওয়া ছিল কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আর এই আবাহনী ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা হলেন শেখ কামাল। খেলাধুলায় বিপ্লব করে সমাজ পরিবর্তন করার চেষ্টা যিনি করেছিলেন। একটি ক্লাব কীভাবে পুরো দেশকে ক্রীড়াঙ্গনে নেতৃত্ব দিতে পারে তার উদাহরণ তাঁর রেখে যাওয়া এই আবাহনী ক্লাব।

লেখক হাসান শরীফ তার ‘পরের জন্মে মুক্তিযোদ্ধা হতে চাই’ শীর্ষক লেখায় শেখ কামাল সম্পর্কে লিখেছেন, ‘ছোটবেলা থেকেই শেখ কামাল ছিলেন প্রচন্ড ক্রীড়ানুরাগী। শাহীন স্কুলে পড়ার সময় স্কুল একাদশে নিয়মিত ক্রিকেট, ফুটবল, বাস্কেটবল খেলতেন। আজাদ বয়েজ ক্লাবের হয়ে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগে নিয়মিত খেলেছেন। দীর্ঘকায় শেখ কামালের সেই চমৎকার 'বোলিং' ছিলো চোখে পড়ার মতো। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শেখ কামাল শুধু খেলোয়াড় হিসাবে নয়, ক্রীড়া সংগঠক হিসাবেও আত্মপ্রকাশ করেন। ফুটবল খেলায় তিনি শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা উপমহাদেশেই পশ্চিমা স্টাইলে বিপ্লব এনেছিলেন। সেই ১৯৭৩ সালে আবাহনীর জন্য বিদেশী কোচ বিল হার্ট কে এনে ফুটবল প্রেমিকদের তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন! তখন ক্লাব তো দুরের কথা, এই উপমহাদেশে জাতীয় দলের কোনো বিদেশী কোচ ছিলোনা।

শুধু গান গাইলেও উনি বাংলাদেশের বড় তারকা হয়ে বেঁচে থাকতেন আমাদের মাঝে, তার একটা বড় উদাহরণ হচ্ছে। তিনি নিজ দায়িত্বে ‘স্পন্দন’ নামে স্বাধীন বাংলাদেশে একটি ব্যান্ডদল গঠন করেছিলেন। এ গানের দলের মাধ্যমে তিনি পল্লীগীতি আর আধুনিক নানা সঙ্গীত যন্ত্রের মধ্যে সমন্বয় করে দেশের সঙ্গীত জগতে বিপ্লব ঘটাতে চেয়েছিলেন। মাত্র ২৬ বছরের জীবনে শেখ কামাল ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন।

অন্যদের ভাল কাজে উৎসাহ দেওয়া শেখ কামালের অন্যতম ও স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য ছিল। জাতির পিতার সন্তান হয়েও তিনি সাধারণ মানুষের মতো জীবন-যাপন করতেন, একই শার্ট বারবার পরতেন, বিলাস-ব্যসন পরিত্যাগ করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নাটক ও গান নিয়ে মেতে থাকতেন। এরকম একজন দিলখোলা, প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা মানুষের জন্মদিনে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত