এখনও সময় আছে লাগাম টেনে ধরার

প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০১৯, ১৭:৩৯

গত কয়েকদিন থেকে জৈনক নারীর স্বাধীন মতামতকে কেন্দ্র করে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শাহরীয়ার কবির এবং বাংলাদেশের প্রগতিশীল আন্দোলনের অন্যতম নেতা মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির কে নিয়ে ধর্মীয় ওয়াজের নামে বাজে বক্তব্য দিয়ে তাদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। যার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার আইনি পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়।

এই কাজটি এমন সময় করা হচ্ছে, যখন সারাদেশে ধর্মীয় শিক্ষার আড়ালে সেখানকার শিক্ষক, হুজুর কিংবা পুরোহিতদের দ্বারা নারী-শিশুর যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নিপীড়কদের প্রথমবারের মতো বিচারের মুখামুখি করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাষ্ট্রের চাইতে ক্ষমতাশালী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রবণতা অব্যাহত রাখতেই, প্রগতিশীলতার বিরুদ্ধে ধর্মীয় ওয়াজের নামে অপপ্রচার চালানোর পুরোনো ধারাটি আবারও সামনে উঠে এসেছে। সাম্প্রতিক ফেনির সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাযিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজের যৌন নিপীড়নের বিচার চাওয়ার পরিণতিতে নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যাসহ বিভিন্ন মাদরাসায় ছেলে শিশু ধর্ষণের প্রতিবাদ এবং ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার প্রশ্নে প্রতিষ্ঠানগুলোকে যৌন নিপীড়ক মুক্ত করার যে সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠেছে, তা ব্যর্থ করতে এবং প্রাতিষ্ঠানিক যৌন পীড়নের ধারা অব্যাহত রাখতেই “সাফা” ঘটনার জন্ম দেওয়া হয়েছে এবং ঘটনাটিও রীতিমত অশেভন, ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং মানবিক বিকাশের শর্ত পরিপন্থি।

কিন্তু এ ধরনের অপচেষ্টা রোধ করতে কোনো পদক্ষেপই নেওয়া হচ্ছে না। মাত্র কয়েকদিন আগে উগ্রপন্থি ওয়াজ এবং ওয়াজকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করলেও ধর্মকে রাষ্ট্র দ্বারা নিয়ন্ত্রণের অযুহাত তুলে তা রোধ করা হয়েছে।

রাষ্ট্র যদি উগ্রপন্থা নিয়ন্ত্রণ তথা বন্ধ করতে না পারে, তাহলে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব থাকে কি? এ ক্ষেত্রে আপোষনীতির বাইরে আইনের কঠোর প্রয়োগই একমাত্র বিকল্প। বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে, উগ্রপন্থা নিয়ন্ত্রণের বাহানায় রাষ্ট্র উগ্রপন্থীদের সকল দাবি-দাওয়াই মেনে নিচ্ছেন। কিন্তু ফলাফল কি? নিয়ন্ত্রণ হয়েছে? হয়নি, বরং তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। রাষ্ট্রের এই আপোষকামী চরিত্র দিন দিন রাষ্ট্রের দুর্বলতাকেই প্রতিষ্ঠা করছে।

এখনও সময় আছে লাগাম টেনে ধরার। সেক্ষেত্রে কঠোরতার বিকল্প নেই। যে আইন উগ্রপন্থীদের দাবিতে তৈরি করে, অহেতুক প্রগতিশীল-মুক্তচিন্তকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে, সেই আইনই যৌক্তিকভাবে উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে কাজে লাগানো যায়। কিন্তু সেটিও দৃশ্যমান নয়। নীতিগত কারণেই উগ্রপন্থীদের নিয়ন্ত্রণ এবং উগ্রপন্থা বন্ধ করা রাষ্ট্রের দায়। আর এটি না করতে পারলে রাষ্ট্রের দ্বৈত চরিত্রের উৎকট প্রসার-প্রকাশ ঠেকানো যাবে না।

মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্রের দ্বৈত চরিত্র রাষ্ট্রের বিপন্ন অস্তিত্বকেই প্রমাণ করে। আর বিপন্ন অস্তিত্ববোধ কখনই সংহত দেশাত্মবোধ সৃষ্টি করতে পারে না।

জীবনানন্দ জয়ন্ত
লেখক/আইনজীবী
সংগঠক- গণজাগরণ মঞ্চ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত