১৯৮৩ সালের কথা

প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১১:৩৪

স্বৈরাচারী এরশাদ তখন ক্ষমতায়, প্রণীত হয় কুখ্যাত ‘মজিদ খান শিক্ষানীতি’। শিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণ এবং সাম্প্রদায়িকীকরণ করার প্রস্তাব দেয়া হয় সে নীতিতে। শিক্ষার বেতনের ৫০ ভাগ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হবে, এবং, রেজাল্ট খারাপ হলেও ৫০ শতাংশ বেতন দিলে উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেয়া হবে – এমন ধরনের ‘নীতি’ও সেখানে অন্তর্ভুক্ত ছিল।

১৪ ফেব্রুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ডাকে ছাত্র জমায়েত। মজিদ খানের কুখ্যাত শিক্ষানীতি প্রত্যাহার, বন্দী মুক্তি ও জনগণের মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবিতে এই জমায়েতের আহ্বান ছিল। আন্দোলনের বিপরীতে শাসকগোষ্ঠী তাদের লাঠিয়াল বাহিনীকে রাস্তায় ছেড়ে দিয়েছিল। ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারিতে ছাত্ররা পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী মিছিল বের করলে পুলিশ গুলি ছুঁড়ে এবং মিছিলের উপর চলন্ত ট্রাক তুলে দেয়া হয়, জাফর-জয়নাল-দিপালী সহ অনেকেই মারা যান। যদিও সরকারি প্রেসনোট বলেছিলে মৃতের সংখ্যা ১ জন, কিন্তু মোট ১১ জনের মৃত্যুর সংখ্যা পাওয়া যায়।

১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি শুধু জয়নালের লাশ পাওয়া গিয়েছিল। দিপালী সাহার লাশ গুম করে ফেলে। তার লাশ পাওয়া যায়নি। ১৫ ফেব্রুয়ারি কাঞ্চন চট্টগ্রাম শহরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। আরো অনেকে নিখোঁজ হন। তাদের জীবিত বা মৃত কোনও অবস্থায়ই পাওয়া যায়নি। সেই সাথে চলতে থাকে গণহারে গ্রেফতার। সরকারি হিসেবে গণগ্রেফতারের হিসেব ছিল ১ হাজারের অধিক। তীব্র আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচারী শাসকের শিক্ষানীতি বাতিল হয়।

সেই থেকে দিনটি পালিত হয়েছে ‘স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে। যার ফসল হিসেবে আমরা পেয়েছিলাম '৯০ এর স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সফলতা - স্বৈরাচারীর পতন। সে সময়গুলোতে ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল জাফর-দিপালী-জয়নালসহ নাম না জানা শহীদদের জন্য। শ্লোগানে, ফেস্টুনে, মিছিলে তাঁদের স্মরণ করা হতো।

সময় বদলায়, মানুষ বদলায়, ইতিহাস বদলায়। ১৪ ফেব্রুয়ারি 'স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস' এখন হয়ে গেছে 'ভালোবাসা দিবস'। আমাদের অত্যন্ত বলিষ্ঠ এই রাজনৈতিক ইতিহাসকে ধীরে ধীরে বিষাক্ত প্রক্রিয়ায় বদলানোর কাজের প্রধান উদ্যোক্তা লাল গোলাপ শফিক রেহমানকে ইতিহাস কোনদিন ক্ষমা করবে না।
তথ্য কৃতজ্ঞতা - হাসিব হক

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত