শিক্ষা, আদর্শ ও নীতির আলো পৌঁছায়নি: প্রিয়তি

প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০১৯, ১৩:৫৭

আমি কখনো মুর্খদের পালটা গালি দেই না কারণ মুর্খ হওয়ার দোষ তাদের না। তাদের দুর্ভাগ্য তাদের কাছে শিক্ষা, আদর্শ ও নীতির আলো পৌঁছায়নি। আজ আমাকে যারা গালি ও হুমকি দিয়ে ভাসিয়ে ফেলছেন, একটা কথা জেনে রাখুন আমি ঐগুলোকে বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা করিনা।

শফি হুজুররা যেমন রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারক না হয়েও, উনাদের নিজস্ব মতামত জানিয়ে হাজার হাজার অন্ধ অনুসারীদের অন্ধের যুগে ঠেলে দিতে চাইছেন এবং প্রভাবিত করতে পারেন। তেমনি আমিও আমার নিজস্ব প্রতিবাদ জানিয়েছি, আমার অধিকার। যেকোনো ধর্ম ও ধর্ম প্রচরনায় আমার কোন দিনেও কোন আপত্তি বা বিরুপ ভাবনা ছিল না, নেই এবং থাকবেও না। কিন্তু এই ধর্মকে ভুলভাবে ব্যাবহার করে যদি আমাদের নারীদের পিছিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়, আমি তখন আমার আওয়াজ তুলতে মোটেও পিছু পা হবো না। 

অন্যায়ের প্রতিবাদ করে এসছি সেই ছোট বেলা থেকেই। আমার বয়স যখন দশ/এগারো, আমার মা কিছু তাবলীগ মহিলার পাল্লায় পরে আমাকে এক মাউলানার সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, যার বয়স ৩২/৩৩ ছিল, তিনি তখন এক বেসরকারি ইসলামী কলেজের লেকচারার। আমার হাতে-পা এ ধরেছিলেন তাকে যেন বিয়ে করি কারণ এক আলেমকে বিয়ে করলে নাকি সাত পুরুষ পর্যন্ত বেহেশতে যাবে। অর্থাৎ আমাকে দিয়ে বেহেশতে যাওয়ার টিকেট খুব সহজে কনফার্ম করা। এতো সোজা বেহেশতে যাওয়া? তার জন্য এক মেয়েকেই বলি দিতে হবে সবসময়? আমি ছোট, আমার বাঁধার তেমন প্রাধান্য দিচ্ছিলকি। আর তাই এটিকে বাঁধা দেয়ার জন্য আমার ভয়ানক এক পন্থার পথ বেঁছে নিতে হয়েছিল। কি সেইটা ছিল, তা আমি সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজের দায়বদ্ধতা থেকে প্রমোট করতে চাচ্ছি না। তবে এরপর আমার মায়ের মাথা থেকে সেই ভূত নামে। মায়ের উপলব্ধির জায়গাটি দৃঢ় হয়, তিনি তার ভুল বুঝতে পারেন। 

তখন যদি আমি প্রতিবাদ না করতাম, তাহলে আজ আমার ঠিকানা অন্য কোথাও হতো। এলাকার বখাটে ছেলেদের উৎপাত আর ঐ বয়সেই আত্মীয়-স্বজনদের বিয়ের প্রস্তাবের ধুম, সব মিলিয়ে আমাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় দেশের বাইরে। আজ আমি ভাগ্যবতী বলে, পরিবারের সামর্থ্য ছিল বলে দেশের বাইরে পাঠাতে সক্ষম হয়েছিল। ভেবে দেখতে পারেন দেশে হাজার হাজার মেয়েরা কতোটা অসহায় এই জায়গাটিতে! 

বাংলাদেশে এমন একটি সংস্থা/অর্গাইনাইজেসন/ফাউন্ডেসন থাকা দরকার, যেখানে কোন অপ্রাপ্ত বয়সের মেয়ে তার নিজ পরিবারে নিরাপদ মনে না করলে আশ্রয় পেতে পারে এবং সাথে শিক্ষা ও কর্মসংস্থান জোগানোর পর্যাপ্ত ট্রেইনিং, যাতে ওরা করে স্বনির্ভর হতে পারে।

লেখক: মিস আর্থ ইন্টারন্যাশনাল ও বৈমানিক

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত