রাজনৈতিক দলের কাছে প্রত্যাশা

প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৮:২৪

সাহস ডেস্ক

‘রাজনৈতিক দল হলো কিছু সুনির্দিষ্ট নীতি ও কর্মসূচীর ব্যাপারে ঐক্যমতের ভিত্তিতে সংগঠিত হওয়া একটি জনগোষ্ঠী যারা নির্বাচনে অংশগ্রহনের মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সরকার গঠন করে নিজেদের নীতি ও পরিকল্পনা অনুযায়ী সমাজ তথা দেশের বৃহত্তর কল্যাণ সাধন করতে চায়।’

এ থেকেই বুঝা যায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে মূলত তিন ধরনের রাজনৈতিক চর্চা ও কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে হয়।

প্রথমত, দলীয় রাজনীতি তথা দলের ভিতরের রাজনীতি। অর্থাৎ নিজেদের দলীয় নীতি আদর্শ ঠিক করা, বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচী পালন করা, প্রয়োজনীয় অঙ্গ সংগঠন তৈরি করা, নিজেদের কোর সমর্থকদের আস্থায় রাখা ইত্যাদি। এই রাজনীতি হলো একটা দলের মৌলিক ভিত্তি। এটার নিয়মিত ও যথাযথ চর্চার মাধ্যমে একটা দল কলেবরে বড় ও শক্তিশালী হয়।

দ্বিতীয়ত, ভোটের রাজনীতি। উদ্দেশ্যগত দিক থেকে এটাই মূল কাজ, যেহেতু রাজনৈতিক দলের আলটিমেট লক্ষ্য হলো নির্বাচনে জয়ের মাধ্যমে শাসন ক্ষমতায় যাওয়া। এটা প্রথমটা থেকে একটু ভিন্ন। কেননা ভোটের রাজনীতিতে শুধুমাত্র নিজেদের অঙ্গসংগঠন কিংবা কোর সমর্থকদের কথা ভাবলে চলবে না, বরং সমমনা ও বিরুদ্ধমনা সকলের কথা বিবেচনায় আনতে হবে। তাই এটার কর্মপদ্ধতিও সম্পূর্নরুপে ভোটারদের চাহিদা অনুযায়ী হবে। অঞ্চলভিত্তিক আলাদা আলাদাও হতে পারে। এই রাজনীতি করতে গিয়ে ক্ষেত্রবিশেষে দলীয় কিছু নীতির ব্যাপারেও হয়তো কিছুটা ছাড় দেয়া যেতে পারে যেন জনগণের বৃহত্তর অংশ আস্থায় আসে এবং দলের ভোটব্যাংক সমৃদ্ধ হয়। এই রাজনীতি ঠিকভাবে করতে না পারলে রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ হয়ে থাকবে, চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে না।

তৃতীয় রাজনীতি হলো উন্নয়নের রাজনীতি। কোন রাজনৈতিক দল জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে পার্লামেন্টে যেতে পারলে এই রাজনীতিই দলের অন্যতম প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়ায়। যদি তারা সরকার গঠন করতে পারে তাহলে দেশের জন্য উন্নয়নমূলক কাজ করবে, জনবান্ধব কর্মসূচী বাস্তবায়ন করবে। যদি সরকার গঠন না করতে পারে তাহলে প্রতিনিধিত্বমূলক অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাতীয় স্বার্থে এবং জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যাপারে সরকারকে সহায়তা করবে, সরকারের কাজের গঠনমূলক সমালোচনা করবে, সরকার ভুল করলে জনগণকে নিয়ে তা প্রতিহত করার চেষ্টা করবে। অর্থাৎ সরকার গঠন করে এবং না করেও এই রাজনীতির অংশীদার হওয়া সম্ভব। আর এই রাজনীতি করতে গিয়ে অনেক সময় দেশের স্বার্থে নিজেদের দলীয় লোকদের পছন্দের বাইরেও কাজ করতে হবে। এই রাজনীতি ঠিকভাবে করতে পারলে নতুন সমর্থকগোষ্ঠী তৈরি হবে, দলের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়বে। না পারলে জনগণ ভোটের সময় মুখ ফিরিয়ে নিবে।

এই তিন ধরনের রাজনীতির প্রতিটি একে অন্যের পরিপূরক। একটি রাজনৈতিক দলের কাগজে কলমে নীতি খুব ভাল থাকতে পারে কিন্ত তা যদি জনগণকে, জনগণের ভাষায় বুঝানো না যায় তাহলে ভোটের রাজনীতিতে মার খেয়ে যেতে হবে। আবার একবার নির্বাচিত হবার পর উন্নয়নের রাজনীতি ঠিকভাবে করতে না পারলে পরবর্তী নির্বাচনেই মানুষজন মুখ ফিরিয়ে নিবে। এমনকি শুধু উন্নয়ন করেও দীর্ঘমেয়াদে সফল হওয়া সম্ভব হবে না যদি নিজেদের দলীয় রাজনীতি ঠিক না থাকে। কারণ, দল ঠিক না থাকলে উন্নয়নের রাজনীতির সুফল দল ঘরে তুলতে পারবে, অন্য কেউ ভোগ করবে। অর্থাৎ একটা রাজনৈতিক দল যত ভালভাবে এই তিন ধরনের রাজনীতির মাঝে সমন্বয় করতে পারবে তারা রাজনৈতিক দল হিসেবে তত শক্তিশালী হবে, উন্নতি করবে, বারবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসবে।

এই তিন ধরনের রাজনীতির মাঝে সমন্বয় কতটা ভালো হতে পারে তা বর্তমানে ভারতের রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) কে দেখলে বুঝা যায়। ডানপন্থী এবং ক্ষেত্রবিশেষে উগ্রপন্থী কিছু আচরণ বিবেচনায় নিয়েও বলা যায়, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় একটি পরিপূর্ণ রাজনৈতিক দলের আদর্শ উদাহরণ হলো বর্তমান বিজেপি দল, যদিও দলটির বয়স মাত্র ৩৭ বছর।

ভারতের প্রেক্ষাপট এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিশাল পার্থক্য আছে। বিজেপির বড় সুবিধা হলো তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দেশবিরোধী কিংবা স্বাধীনতাবিরোধী কোন রাজনৈতিক দল নেই যা বাংলাদেশ আছে। তাছাড়া জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে ধরনের ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করতে হচ্ছে সেটাও ভারতে নেই। এতোসব সামলে নিয়েও বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে একটা সুদৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে পেরেছে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে আমরা গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছি, দেশের গন্ডি পেরিয়ে শেখ হাসিনা এখন বিশ্ব নেতৃত্বের কাতারে দাঁড়িয়েছেন। তারপরও মাঝে মাঝে উন্নয়নের রাজনীতি, দলীয় রাজনীতি এবং ভোটের রাজনীতিতে সমন্বয়ের ব্যাঘাত ঘটছে।

বঙ্গবন্ধু কন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনা যে গতিতে নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন সেই গতিতে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এগিয়ে যেতে পারছে না। সাম্প্রতিক কিছু সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এর প্রমাণ। আর কয়েকমাস পর পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন। সেই নির্বাচনে সর্বোচ্চ সফলতা আনতে হলে দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে তিনধরনের রাজনীতির মাঝে সমন্বয় করতে হবে। কাজ শুরু করার এখনই সময়। ভুল  থেকে শিক্ষা নিয়ে আত্মশুদ্ধির পথে হাঁটতে হবে, ছেড়া সুতোগুলো জুড়ে দিয়ে একসুরে বাজতে হবে। এতো কথা বলার একটাই কারণ। বাংলাদেশের স্বার্থেই শেখ হাসিনার সরকার দরকার, আওয়ামী লীগকে দরকার। এই অপ্তবাক্য মাথায় নিয়েই দল হিসেবে আওয়ামী লীগ কাজ করে যাবে, একজন আওয়ামী সমর্থক হিসেবে এটাই প্রত্যাশা।
লেখক: আব্দুল্লাহ আল সাদি সিয়াম
সহ-সভাপতি 
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ,
জামালপুর জেলা শাখা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত