আমরা যারা ছাত্রলীগ

প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০১৮, ১১:১৮

সাকিব হাসান সুইম

আমরা না দেখতে ঠিক আপনাদের মতোই, পত্রপত্রিকায় আমাদের ছবি আসে, নিউজ চ্যানেলগুলাতে আমাদের লাইভ দেখায় আর টকশো! সেতো আমাদের নিয়ে না থাকলে কেউ দেখেই না। স্পষ্টভাবে চেনাতে সেই ঐতিহ্যবাহী লাল গোল মার্ক করার কথা নাইবা বললাম। 

কি অসাধারণ জীবন আমাদের,সত্যিই অসাধারণ। 
একদম না, ভুল ভাবছেন। আমরাও খুব সাধারণ। 

বিশ্বাস করুন! আমাদের না আপনাদের মতোই পরিবার আছে, মা আছে, বাবা আছে , ছোট্ট ছোট্ট ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সব আছে। কেউ বিপদে পড়লে এগিয়ে যাই, কারও রক্ত লাগলে আবাসিক হলের ভাত-ডাল খাওয়া শরীরের মশা আর ছারপোকায় খাওয়ার পর অবশিষ্ট রক্তটাও ছেঁকে দিয়ে আসি। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে ভাবি, কোথাও অবিচার হলে প্রতিবাদ করি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে থাকি সর্বদা সোচ্চার। 

খুব অবাক হয়! যখন দেখি যাকে রক্ত দিয়েছিলাম সেই লোকটিই আমাকে রক্তাক্ত করতে ভার্চুয়ালী আগ্রহ প্রকাশ করছে, যে বোনটিকে উত্ত্যক্তকারীর হাত থেকে রক্ষা করেছিলাম সেই বোনটি আমার দ্বারা ধর্ষণের ভয়ের প্রপাগাণ্ডা ছড়াচ্ছে, যে ছোট ভাইটিকে অসৎপথ থেকে ফিরিয়ে এনেছিলাম সেই ভাইটি আজ আমাকে অসৎ বলে গালি দিচ্ছে।

এখনো কাউকে দোষ দিবো না। দোষটা আমাদেরই। আমরা তোমাদের ভালোবেসে, তোমাদের উপর বিশ্বাস করাটাই আমাদের দোষ। যে বিশ্বাসটা করেছিলাম তোমাদের আবেগ আর তাদের মিশন-১> কোটা আন্দোলনে, তাদের মিশন -২> নিরাপদ সড়ক চাই। তোমাদের আন্দোলন দুইটাতেই যতদিন অহিংস ছিলো আমরা তোমাদের সাথেই ছিলাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও যখন তোমরা যখন দাবী পূরণের সেই সময়টুকুও দিতে পারো নাই সব চেয়েছো একদিনে, আবার তাদের সব মিথ্যাচার আর গুজবে পা দিয়ে তোমরা সহিংস হয়ে গিয়েছিলে আমরা তখনো বুঝিয়েছি এখনও বুঝাচ্ছি।

আমরা ভেবেছিলাম, কয়েক যুগ পিছিয়ে থাকা নিম্ন আয়ের দেশটাকে আজ তার পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে যিনি উন্নত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে ২১ বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন সেই শেখের বেটি হাসিনার উপর তোমাদের আস্থা আছে। কিন্তু আমরা ভুল ছিলাম।

তোমরা সেই নিষিদ্ধ একটি ছাত্রসংগঠনের প্ররোচনায় পড়ে বারবার সম্মোহিত হচ্ছো। আজ প্রায় দশ বছরের কাছাকাছি সংগঠনটি তাদের পূর্বসূরীদের অস্ত্র মসজিদের মাইক ছেড়ে এই সরকারের দেওয়া ডিজিটাল মাইক (ভার্চ্যুয়াল মাধ্যম) অপব্যবহারের মাধ্যমে জন্ম দিয়েছে হাজারো জারজ সন্তান (সিক্রেট গ্রুপ, পেইজ, চ্যাট গ্রুপ....)। আর এই দশবছর আমরাতো তোমাদের সাথেই ছিলাম। 

চোখটা বন্ধ করে মিশন১> আর ২ এর মধ্যে মিলটা খুঁজুন। সেই একই পদ্ধতি 'গুজব।

-এ বি সিদ্দিকী মারা গেছে গুজব ছড়িয়ে ঢাবি উপাধ্যক্ষের বাসা আর দুই ছাত্র খুন এবং ৪ ছাত্রী রেইপ গুজব ছড়িয়ে ৩/এ পার্টি অফিসে হামলা।

-এশা নাটক রচনা করে গভীর রাতে ছাত্রছাত্রীদেরকে রাস্তায় নামানো আর ধানমন্ডিতে তোমাদের মধ্যে ঢুকে তোমাদেরকে উষ্কানি দিয়ে আমাদের দিকে আক্রমনাত্মক করে তোলা ঠিক যেনো কোটা আর সড়ক আন্দোলন মিলেমিশে একাকার। এখন টার্গেট ২০১৪ সালের ০৫ মে-এ হেফাজত আন্দোলনের মতো ইস্যু তৈরি। 

প্রশ্ন করতেই পারো আমরা কেনো রাজপথে ছিলাম না? হ্যাঁ, তোমাদের বন্ধু ছিলো দিয়া-করিম এজন্য রাজপথে তোমাদের পাশে না দাঁড়ালেও সাথেই ছিলাম। তোমাদের আন্দোলনের মিছিলে আমরা থাকলে যে গুলিটা তোমাদের মধ্যে থেকে আমাদের করেছিলো সেটা বাহির থেকে তোমাদের আমাদের উপর করতো। ভেবেছিলাম তোমাদের সব দাবী মেনে নিলেই তোমরা প্রধামন্ত্রীর উপর আস্থা রাখবে। কিন্তু তোমরা তাদের সেই মায়াজালেই ধরা দিলে। তারা পেয়ে গেলো তাদের বিষদলের পূর্বপরিকল্পিত প্রাপ্যতা। তোমরা আহত, আমরাও আহত। তোমাদের আক্রমনের ছবি, ভিডিও সাথে আমাদেরটাও। আর এগুলা সংগ্রহের দায়িত্বে তো একদল ডিজিটাল চোখ নিয়েতো আছেই বসে, খালি ক্লিক আর রেকর্ড। আর মুঠোফোন সাইকোদের কথা নাইবা বললাম। 

এখনো আমরা তাদেরই গুজবে আক্রান্ত হয়ে পরস্পরের মুখোমুখি। কেনো? শিবির অনুপ্রবেশ এর আগে তোমরা যা দেখিয়ে গেছো, সেখান থেকে আমরাও শিখেছি। সত্যিই অসাধারণ ছিলো। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তোমাদেরকে সব দাবি মেনে নেওয়ার পরও এখনো কারা রাজপথে নামতে চাই? এই দুইদিন তাদের মুখে একবাও নিরাপদ সড়কের স্লোগান শুনিনি। এরা কারা? এই তিনদিনে তাদের প্রচারণায় দিয়া-করিমকে ছিলো না। এরা ছিলো তোমাদের আর আমাদের রক্তাক্ত কন্টেন্ট ভাইরাল করা নিয়ে। যেনো তাদের সেই প্রত্যাশিত কন্টেন্ট ‘কয়েকটি লাশ’ বের করা যায়।

দিয়া-করিমের মতো আমাদেরও ভাইবোন আছে। আল্লাহ তাদের বেহেশত দান করুন। আমরাও নিরাপদ সড়ক চাই এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপর আস্থা আছে।

আচ্ছা মনে করুন, আপনাদের ভাষ্যমতে ০২ জন ছাত্র আর ০৪ জন ছাত্রীকে মেরে গুম করা হয়ছে, তাহলে তাদের অভিভাবক কেনো তাদের সন্তানের লাশ চাচ্ছে না? ধরুন তাদের অভিভাবকও গুম, তাহলে তাদের আত্মীয়স্বজন? মনে করেন তারাও গুম তাদের আত্মীয়..??? জানি এ প্রশ্নের উত্তর নাই কারন আপনারা এখন ব্যস্ত ‘ছাত্রদল শিবিরের তৈরি কন্টেন্ট’ আপনাদের আঘাতের ছবি ভিডিও ভাইরাল করা নিয়ে। নিজেদের বিবেককে জিজ্ঞেস করুন সব উত্তর পেয়ে যাবেন।

তোমরাইতো আগামীর বাংলাদেশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর আস্থা রাখুন।

জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু

লেখক: সাবেক সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় কমিটি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা কলেজ শাখা

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত