বেগম জিয়ার বিরুদ্ধেও তো মানুষ হত্যার মামলা আছে

প্রকাশ : ২৩ মে ২০১৮, ১৩:৩৫

গুলি করে মেরে ফেলার আগে আপনি যদি নিশ্চিত হয়ে থাকেন যে এই লোকটি মাদক ব্যাবসায়ি, তাইলে তাকে মেরে ফেললেন কেন? নিশ্চিত হওয়ার জন্যেই তো আপনাকে প্রমাণ দেখতে হয়েছে। কেউ একজন বললো যে এই লোকটি মাদক ব্যাবসায়ি তার আপনি তাকে মেরে ফেলবেন সে তো নিশ্চয়ই আপনি করছেন না আরকি। তাইলে যেসব প্রমাণ দেখে আপনি নিশ্চিত হলে যে এই লোকটি মাদক ব্যাবসায়ি সেগুলিই আদালতে সামনে পেশ করেন। ল্যাঠা চুকে যায়। প্রমাণ থাকলে আদালত সাজা দেবে না কেন? গুলি করে মারার দরকার কি?

আর যদি বলেন যে না, লোকটিকে মাদক ব্যাবসায়ি প্রমান করার জন্যে পর্যাপ্ত প্রমাণ আপনার কাছে নাই তাইলে ওকে মারছেন কেন? একজন মানুষকে সন্দেহের বসে মেরে ফেলা তো অন্যায়। একজন লোকের বিরুদ্ধে নয়টা বা দশটা মামলা আছে বলছেন, মামাল থাকার মানে কি? মামলা মানে তো মামলাই। মামলা প্রমাণিত হতেও পারে নাও হতে পারে। বেগম জিয়ার বিরুদ্ধেও তো মানুষ হত্যার মামলা আছে।

আপনি যদি বলেন যে না, আমরা বিচার করতে পারছি না। আমাদের পুলিশ ঠিক নাই, আমাদের জজ ঠিক নাই, আমাদের প্রসিকিউটর ঠিক নাই, তাইলে ওদের কারো বিরুদ্ধে কেন ব্যাবস্থা নিচ্ছেন না।

এইসব কিছুর আগে, আপনি যদি মনে করেন যে না, মাদক নিয়ন্ত্রণ করা আপানদের পক্ষে সম্ভব না আর সেইজন্যেই সন্দেহভাজনদেরকে ধরে ধরে হত্যা করবেন, তাইলে তো সেই মুল কথাটাই বলতে হয়। দায়িত্ব যদি পালন করতে না পারেন তাইলে দায়িত্ব ছেড়ে দেন না কেন?

শোনেন, কেবল মাত্র সন্দেহের ভিত্তিতে একজন মানুষকে হত্যা করার অধিকার রাষ্ট্রের নাই। আপনারা যারা মাদকের ভয়াবহতা ইত্যাদি দেখিয়ে বলবেন যে মাদক ব্যাবসায়িদেরকে মেরে ফেলাই উচিৎ- তাদেরকে বলবো ড্রাগ ডিলারের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড আমাদের আইনে আছে। কিন্তু যে লোকটিকে মেরে ফেলা হচ্ছে সে যে ড্রাগ ডিলার সেকথা আদালত ছাড়া আর কেউ ঘোষণা করতে পারে না। শাস্তি নির্ধারণ করবে আদালত। বিচার হতে হবে।

আপনারা কেউ কেউ আবার বলবেন, ড্রাগ ডিলারের আবার বিচার কি? ঠিক আছে। কিন্তু লোকটা যে ড্রাগ ডিলার সেকথা কি করে বুঝবো? খবরের কাগজ দেখে? পুলিশের কথা শুনে? মাফ করবেন। আপনার ফেসবুকের পুরনো পোস্ট খুলে দখেন আপনি নিজেই কতবার পুলিশের ভাষ্য আর খবরের কাগজের রিপোর্টের নিন্দা করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

খবরের কাগজে তো আমি এমনও দেখেছি যে একজনকে পুলিশ বাড়ী থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে তিনদিন পরে গুলি করে মেরে বলেছে যে ক্রস ফায়ারে মরেছে। তাইলে?

শোনেন, সারা দুনিয়ার মানুষ শত বছরে অভিজ্ঞতায় আজকের বিচার পদ্ধতিতে পৌঁছেছে। তবু এটাতে নানাপ্রকার ত্রুটি আছে, শ্রেণী পক্ষপাতিত্ব তো আছেই। সেগুলি থেকে উত্তরণ প্রয়োজন আছে, কিন্তু পেছনে যাওয়ার দরকার নাই। কারণ পেছনের অবিচারের চেয়ে বর্তমান বিচার যে উত্তম সেটা আমরা নিশ্চিত। যে রাষ্ট্র আইনি কাঠামোর মধ্যে অপরাধীকে দমন করতে পারে না সেই রাষ্ট্র ব্যাবস্থা ভালো না। সেটা ঠিক করেন। কিন্তু কোন অবস্থাতেই নির্দোষ মানুষকে হত্যা করা যায় না। এটা অন্যায়।

যাকে মারছেন সে নির্দোষ না? এই কথা যদি বলেন তাইলে তো আর তর্ক নাই। উপরে যান, প্রথমে কি বলেছি পড়ুন। দোষীই যদি হবে তাইলে আদালতে প্রমান করেন। যতক্ষণ পর্যন্ত না সেটা পারছেন, তিনি তো নির্দোষই।

জামিন নিয়ে বেরিয়ে যায়? মাফ করবেন। কই? বেগম জিয়া তো জামিনে বের হতে পারছেন না। জেলখানা ভর্তি নানান মামলার আসামী। সবাই জামিন নিয়ে বের হয়ে যায়? এটা তো ফালতু বাত। ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবরা যাকে জামিন দেওয়ার তাকে তো জামিন দিবেনই। আপনার পুলিশ কি করে? চার্জ শিট দেয়না কেন? স্বাক্ষ প্রমাণ নিয়ে এসে ট্রায়াল করে না কেন? বিচার শেষ করে সাজা দেন। এইসব করবেন না, আপনার প্রসিকিউটররা নিয়ম করে আসামী পক্ষের কাছ থেকে টাকা নিবে। আর আপনারা দোষ দিবেন জজ সাহেবদের!

বিনা বিচারে মানুষ হত্যার পক্ষে কোন যুক্তি নাই। কোন যুক্তি নাই। কোন যুক্তি নাই। যুদ্ধ হলে এক কথা। কিন্তু সেখানেও মিলিটারিরা মিলিটারিকে মারবে। বেসামরিক লোককে বিনা বিচারে মারা হচ্ছে হত্যাকাণ্ড, খুন, মার্ডার। আত্মরক্ষা একটা ডিফেন্স হতে পারে, কিন্তু এটাও বিচারে প্রমাণ করতে হবে। এই কথাটা যদি মাথার মধ্যে আপনার না ঢুকে, তাইলে আপনি সভ্য মানুষ না। পিরিয়ড।

ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত