স্ত্রী পরকীয়ায় জড়ালে স্বামীর করণীয়

প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০১৯, ১৭:৩০

যৌনতা মানুষের একটি শরীরবৃত্তীয় চাহিদা। স্বামী-স্ত্রীর যৌনজীবনে ঘাটতি হলে অপর ব্যক্তির প্রতি আসক্তি তৈরি হতে পারে। তবে মনোদৈহিক ও সামাজিক- দুই কারণেই মানুষ পরকীয়ায় জড়ায়। যাদের মধ্যে ডিআরডিফোর জিনের উপস্থিতি বেশি তাদেরও পরকীয়া বা বাড়তি সম্পর্কে জড়ানোর প্রবণতা বেশী দেখা যায়। অনেক সময় মানসিক সমস্যার কারণেও মানুষ পরকীয়ায় জড়াতে পারে। তবে বর্তমান সময়ে অনেকে শখ করেও পরকীয়ায় জড়ানোর প্রবণতা দেখা যায়।

বেশিরভাগ পুরুষ নিজের পেশা নিয়ে এতোটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে স্ত্রীকে সময় দিতে পারেন না। বাসায় ফেরার পর অবশ্যই স্ত্রীকে আলাদা করে সময় দিতে হবে। সারাদিন আপনাকে বলার জন্য স্ত্রী যে কথাগুলো মনে জমিয়ে রেখেছে সেগুলো মন দিয়ে শুনুন। স্ত্রীর পছন্দ এবং মতামতকে গুরুত্ব দিন। স্ত্রী যদি তার মনের কথা আপনাকে বলার সাহস কিংবা আগ্রহ না পায়, কিংবা আপনি যদি স্ত্রীর পছন্দ এবং মতামতকে গুরুত্ব না দেন, তবে সেটা সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করবে। কখনোই স্ত্রীর সতীত্ব নিয়ে মন্তব্য করা উচিৎ নয়।

স্ত্রীকে শুধু মনে মনে ভালোবাসলেই হবে না। আপনার ভালোবাসা স্ত্রীর কাছে নান্দনিকভাবে উপস্থাপন করুন।ভালোবাসাকে স্ত্রীর সাথে শুধুই যৌনতায় পরিণত করবেন না। বাসায় ফেরার সময় প্রায়ই স্ত্রীর জন্য উপহার নিয়ে যান। উপহার দামী হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। স্ত্রীর জন্য উপহার হতে পারে একটি চকলেটও। যৌনতার বাহিরেও যে স্ত্রীর প্রয়োজনীয়তা আপনার জীবনে রয়েছে সেটা তাকে বুঝতে দিন। স্ত্রীর সাথে ঝগড়া কিংবা বকাঝকা পরিহার করুন। স্ত্রী বাসায় যেসকল কাজ করেন আপনার উচিৎ তাকে সেসকল কাজে সহযোগিতা করা। এতে সম্পর্কের দূরত্ব হ্রাস পাবে।

আপনি যদি বুঝতে পারেন যে স্ত্রীর তৃতীয় কারো প্রতি আসক্তি বা ভালোলাগা তৈরি হয়েছে তবে কী করবেন? কেবল সন্দেহের বশে স্ত্রীর সাথে দূরত্ব তৈরি করবেন না। প্রথমে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করুন তৃতীয় কারো সাথে স্ত্রীর যোগাযোগ আছে কিনা। কারো সাথে যোগাযোগ থাকলেই যে সেটা পরকীয়া তাও কিন্তু নয়। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই স্ত্রীর সাথে খোলামেলা আলোচনা করুন। যার প্রতি স্ত্রী পরকীয়ায় আসক্ত হচ্ছে- তার মাঝে এমন কি আছে যা আপনার মাঝে অনুপস্থিত সেটা বোঝার চেষ্টা করুন। আপনি আপনার মাঝে থাকা সমস্যা কিংবা ঘাটতিকে সমাধান করবেন- এটা আলোচনার মাধ্যমে স্ত্রীকে বোঝানোর চেষ্টা করুন। সবচেয়ে বড় কথা- আপনার স্ত্রীর মাঝে এতোটুকো আস্থা তৈরি হওয়া জরুরি যে, তাকে আপনার থেকে বেশি কেউ ভালোবাসে না।

প্রেমিকা যেমন প্রেমিকের কাছে মূল্যায়ন পায় তেমনি স্ত্রীও তার স্বামীর কাছ থেকে মূল্যায়নের অধিকার রাখে।বাস্তবতা হলো- অধিকাংশ স্ত্রী সেরকম মূল্যায়ন এবং মর্যাদা পায় না। এমনকি প্রেমিককে বিয়ে করেও স্ত্রী মূল্যায়ন বা মর্যাদা পায় না। শুধুমাত্র স্ত্রীকে পরকীয়া থেকে বাঁচাতে নয়, সুন্দর, সুখের দাম্পত্য জীবনের জন্য স্ত্রীর চাওয়া পাওয়াকে মূল্যায়ন করা উচিৎ।

যৌনতার ক্ষেত্রে পুরুষ বরাবরই আত্মকেন্দ্রিক। যৌনতায় পুরুষ শুধু নিজের সুখের দিকটাকেই গুরুত্ব দিয়ে থাকে। স্ত্রীর চাহিদাপূরণ কিংবা স্ত্রী ভালোলাগার প্রতি পুরুষকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যৌনআচরণের ক্ষেত্রে স্ত্রীর কোনটা ভালো লাগে, আর অপছন্দ সেটা পুরুষের জন্য অবশ্যই পালনীয়।

স্ত্রীর পুরনো সম্পর্ক বা পছন্দের কাউকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করা উচিত নয়। স্ত্রীর পুরোনো প্রেমিক কিংবা পছন্দের মানুষের চেয়ে আপনি বেশি ধনী কিংবা যোগ্যতা সম্পন্ন এটা তার কাছে উপস্থাপন বা প্রমাণ করাটা জরুরি নয়। যদি এমনটা করেন তবে আপনার স্ত্রীর কাছে আপনার অবস্থান নিচে নেমে আসবে।

এরপরও যদি স্ত্রী পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে তবে কি করবেন সে সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে। আপনি স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক রাখতে পারেন অথবা আলাদা হয়েও যেতে পারেন। কিন্তু খেয়াল রাখতে আলাদা হয়ে গেলেও স্ত্রীর তৃতীয় সম্পর্কের কথা প্রকাশ কিংবা তার চরিত্রে কালিমা লেপন করা যাবে না। যদি আপনি এমনটা করেন তবে আর কোনো নারী কিংবা সমাজের মানুষও আপনাকে পছন্দ কিংবা বিশ্বাস করবে না।

স্ত্রী কর্তৃক বিশ্বাস ভঙ্গের শিকার হয়ে হতাশ হলে চলবে না। এরকম ক্ষেত্রে শুধু নিজের ভালোটা না ভেবে নিজেদের ভালোটা ভাবতে হবে। এমনওতো হতে পারে- আপনার স্ত্রী কোনো প্রতারণার শিকার। যে ব্যক্তির সাথে আপনার স্ত্রী সম্পর্কে জড়িয়েছে হয়তো তার হাতে আপনার স্ত্রীর জীবনও যেতে পারে। তাই মাথা ঠান্ডা রেখে ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিন। আত্মঘাতী কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাবে না। কেনো না, আপনার জীবন শুধু আপনার একার নয়। স্ত্রীর পরকীয়ার জেরে জীবন দেওয়ার জন্য আপনি জন্মগ্রহণ করেননি। পরিবার, সমাজ এবং দেশের প্রতি আপনার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কাছে স্ত্রীর দেওয়া দুঃখ কিছুই না।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত