লাইব্রেরি: প্রাচীন যুগ থেকে বর্তমান

প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০১৬, ১৩:১৩

Library শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ Libre থেকে যার অর্থ বই। আর Library শব্দটির অর্থ হচ্ছে একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে বই, পুস্তক, জার্নাল পান্ডুলিপি, অডিও ভিজ্যুয়াল ডকুমেন্ট সমূহ বিধিবদ্ধভাবে বিন্যাসিত করা থাকে যাতে ব্যবহারকারী সহজে কাঙ্খিত তথ্য পেতে পারে। মানুষ যখন সভ্যতার ঊষার আলোকে উদ্ভাসিত হয় তখন থেকেই নিজেকে চিনতে ও জানতে প্রয়াস পায়। পরস্পরকে চেনার সক্সেগ সক্সেগ মানুষ তার পরিবেশকেও জানতে ও বুঝতে উৎসাহী হয়। মানুষের অনুসন্ধান স্পৃহা ক্রমে বেড়ে যায়। নব নব প্রাপ্তির আনন্দ নেশায় মানুষ উৎফুল্ল হয়ে উঠে। ক্রমে মানুষের জ্ঞান ভান্ডার হাজার হাজার তত্ত্বে ও তথ্যে ভরে উঠতে থাকে। এরূপ ক্রম লব্ধ জ্ঞান স্মৃতি শক্তিতে ধরে রাখা এ সময় অসম্ভব হয়ে উঠে। তখন মানুষ তার লব্ধ ও সংগৃহীত জ্ঞান স্থায়ী ভাবে ধরে রাখার মাধ্যম খুঁজতে থাকে। ফলে গাছের বাকল, প্যাপিরাস, শিলা, চামড়া প্রভৃতির ব্যবহার আরম্ভ হয়। মানুষ তার বিচিত্র অভিজ্ঞতা সাহিত্য দর্শন, বিজ্ঞান প্রভৃতির নানা তথ্যাদি এ সকল বস্তুতে বিস্তৃতভাবে লিখতে থাকে। এমন করে দর্শন ইতিহাস, বিজ্ঞান, শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রসার ও বিস্তার লাভ করে। ক্রমে বিস্তৃত জ্ঞান ভান্ডার পরবর্তী মানুষের ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা মানুষ এক সময় তীব্রভাবে অনুভব করে; এ অনুভব থেকেই একদা লাইব্রেরির উৎপত্তি ঘটে। যা বর্তমান সমাজেও অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

প্রাচীনকালে যে সকল সভ্যতাগুলো শিক্ষা সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, স্থাপত্য ইত্যাদি বিষয়ে উৎকর্ষ সাধন করেছিল তার সকল সভ্যতাতেই কিছু প্রাচীন সমৃদ্ধ লাইব্রেরি বিকশিত হয়েছিল। সে প্রচীনকাল থেকেই সভ্যতা গুলো দেখলে বোঝা যায় যে জাতির লাইব্রেরি যত উন্নত ছিল সেই জাতি তত উন্নত ছিল। নিন্মে কয়েকটি প্রাচীন লাইব্রেরি বর্ননা দেওয়া হল।

অসুরবানি পাল লাইব্রেরি
অসুরবানি পাল লাইব্রেরি প্রাচীন লাইব্রেরি গুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি ৬৬৯-৬২৬ ইপ তে প্রতিষ্ঠিত হয়। সম্রাট অসুরবানি পাল এই লাইব্রেরিকে সর্বশ্রেষ্ট লাইব্রেরিতে রূপান্তরিত করেন। তিনি যে কোন সংগ্রহকে অত্যান্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতেন এবং প্রায় ৩০০০০০ ক্লে ট্যাবলেট (Clay Tablet) সংগ্রহ করেছিলেন। ক্লে ট্যাবলেট (Clay Tablet) এমন ধরনের লিখন উপকরন যা মাটি দিয়ে তৈরি। মাটি যখন নরম অবস্থায় থাকতো তখন তাতে চিন্তা চেতনা লিখে আগুনে পুরিয়ে ক্লে ট্যাবলেট (Clay Tablet) তৈরি করা হত। সম্রাট অসুরবানি পাল ছিলেন এ্যাসিরিয় সম্রাট। প্রাচীনকালে তিনি বেবিলনিয়া সুমেরিয়া অঞ্চলের শাসক ছিলেন। তিনি তাঁর প্রচেষ্টায় এই অঞ্চলে অসুরবানি পাল লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেন। এই লাইব্রেরিতে বই-পুস্তক ছিলো না, তবে ক্লে ট্যাবলেট, প্যাপিরাস, পার্চমেন্ট, ভেলাম ও পাথরের বইয়ের সংগ্রহ ছিল। এই লাইব্রেরিতে পৌরানিক কাহিনী, ধর্মীয় কাহিনী, ইতিহাস, চিকিৎসা, জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত বিষয় বেশি ছিল। তাছাড়া অন্যান্য বিষয়েরও নিদর্শন ছিল।

অসুরবানিপাল লাইব্রেরিটিতে অধিকতর মূল্যবান ক্লে ট্যবলেট (Clay Tablet) গুলো অপর একটি চাকতির মলাট দিয়ে কলসিতে স্তরে স্তরে  সাজিয়ে রাখা হতো। এটি ছিল সু-শৃঙ্খল ও সুনিয়ন্ত্রিত একটি লাইব্রেরি। এখানে পেশাদার গ্রন্থাগারিক ও অন্যান্য কর্মচারী এ লাইব্রেরিটির দায়িত্ব পালন করতো। এই রাজকীয় লাইব্রেরিটি সরকারি ও বেসরকারি উভয় শ্রেণির বিদ্বান ব্যক্তিদের অবাধ মিলন মেলার কেন্দ্র ছিল। সকলেই এ লাইব্রেরিটি ব্যবহার করতে পারতো।

খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ ও সপ্তম শতকে যে সব যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল তাতেই প্রকৃতপক্ষে এ্যাসিরিয় সভ্যতা বিধ্বস্ত হয়েছিল এবং এই সমৃদ্ধ লাইব্রেরিটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু পোড়া মাটির চাকতি বা ক্লে ট্যাবলেট (Clay Tablet) গুলো খুবই শক্ত ছিল। তাই হাজার হাজার ক্লে ট্যাবলেট (Clay Tablet) উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে যা আজও ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে। 

আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি
প্রায় খ্রীষ্টপূর্ব ৩০৫ B.C তে আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরী বর্তমান মিশরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তখন মিশরের রাজধানী ছিল আলেকজান্দ্রিয়া। মূলতঃ সেখানে গ্রীকরা বাস করত এবং মিশর ছিল গ্রীক সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। রাজা প্রথম টলেমি (Ptolemy) একজন বিদ্যানুরাগী শাসক ছিলেন। যদিও অনেক পন্ডিত তাকে বিদ্যানুরাগীর পাশাপাশি অত্যাচারী শাসক হিসাবেও চিহ্নিত করেছেন। তখনকার সমসাময়িক বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী লাইব্রেরি মূলত তার একক প্রচেষ্টাতেই মিশরে গড়ে উঠেছিল। লাইব্রেরিটি অনেকগুলি ভবনের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছিল। যেমন হলঘর, পাঠকক্ষ, খাবার ঘর, মন্দির ইত্যাদি একসঙ্গে যুক্ত আকারে ছিল।    

আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি গড়ে উঠার পেছনে অবশ্য এথেন্স থেকে বিতাড়িত ব্যক্তি ডেমিট্রিউট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি লাইব্রেরিকে একটি Center for knowledge and learning হিসাবে গড়ে তুলেছিলেন। তখনকার যুগের পন্ডিত, কবি, সাহিত্যিকরা এ লাইব্রেরিতে গ্রন্থাগারিকের দায়িত্ব পালন করতেন যা ছিল আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির সংগ্রহ ছিল সিরাপিয়াম এক লক্ষ এবং পান্ডুলিপি সাত লক্ষ। সাধারণত এগুলো মিশরীয় হিব্রু ও ল্যাটিন ভাষায় লিপিবদ্ধ ছিল।

খৃস্টপূর্ব ২য় দশকে প্রচীন সভ্যতার অন্যতম কেন্দ্র স্থল মিশরের পতন শুরু হলে আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির অবনতি ঘটতে থাকে। খৃস্টপূব ৪র্থ শতকের শেষ দিকে আলেকজান্দ্রিয়ায় পৌত্তলিকতার প্রভাব হ্রাস পেতে থাকে। পুরোনো এবং নব্য খৃস্টানরা আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরিরকে নাস্তিকতা ও ব্যাভিচারের কেন্দ্র বলে মনে করে ঘৃণা করত। ক্রমে আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির গুরুত্ব হ্রাস পায়। পৃথিবীর বিস্ময় এই আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরিকে ৩৯০ খ্রীস্টাব্দে বিশপ থিওকেলাস ধ্বংস করেন। তাছাড়া ৪৭ অব্দে জুলিয়াস সিজারের মিশর জয় আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির পতনের অন্যতম কারন। আবার মুসলমানদের আলেকজান্দ্রিয়া দখলের ফলেও লাইব্রেরিটির প্রভূত ক্ষতি সাধিত হয়। এইভাবেই কালের বিবর্তনে আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি ধ্বংস হয়।

নালন্দা মহাবিহার লাইব্রেরি
নালন্দা বর্তমানে ভারতের বিহার রাজ্যের রাজধানী পাটনা জেলার অন্তর্গত একটি প্রচীন ঐতিহাসিক স্থান। ভারতের নবনির্মিত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় এখানেই অবস্থিত। বাংলার ভৌগোলিক সীমানার বাইরে অবস্থিত হলেও নালন্দা মহাবিহারের সঙ্গে এতদঞ্চলের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল।সাধারণভাবে প্রচলিত ইতিহাস নালন্দার প্রাচীনত্বকে বুদ্ধের সময় পর্যন্ত নিয়ে যায়। অবশ্য এখানে পরিচালিত প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখনন থেকে গুপ্ত যুগের আগেকার কোন নিদর্শন পাওয়া যায় নি। পাল রাজাদের (আট থেকে বারো শতক) সময়েই এটি বিভিন্ন কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। ধারণা করা হয় যে, গুপ্ত সম্রাটগণই নালন্দা মহাবিহারের নির্মাতা এবং সম্রাট প্রথম কুমারগুপ্তই সম্ভবত এক্ষেত্রে প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ফা-হিয়েন এর ভ্রমণ বিবরণীতে নালন্দায় বৌদ্ধ স্থাপনার কোন উল্লেখ না থাকায় এ বিষয়ে কিছুটা নিশ্চিত হওয়া যায়। সাত শতকের দিকে নালন্দা একটি শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে খ্যাতি লাভ করে। চৈনিক তীর্থযাত্রী হিউয়েন-সাং পড়াশোনার জন্য এখানে কয়েক বছর অতিবাহিত করেন। তাঁর সময় থেকেই নালন্দা বিশিষ্ট পুরোহিতগণের তত্ত্বাবধানে শিক্ষা ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছিল। হিউয়েন-সাং-এর ভ্রমণের ৩০ বছরের মধ্যে ই-ৎসিঙ (৬৭৫ থেকে ৬৮৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ১০ বছর এখানে শিক্ষাগ্রহণ করেন) সহ কমপক্ষে ১১ জন কোরীয় ও চৈনিক তীর্থযাত্রীসহ বিশিষ্টজনেরা নালন্দা ভ্রমণ করেন বলে জানা যায়। কনৌজের হর্ষবর্ধন (৬০৬-৬৪৭ খ্রি.) নালন্দা বিহারের একজন পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।

প্রাচীন কালে 7th Century B.C তে এই নালন্দা মহাবিহারেই গড়ে উঠেছিল নালন্দা মহাবিহার লাইব্রেরি। এই লাইব্রেরিতে সংগ্রহ সমূহের মধ্যে অধিকাংশই ছিল বৌদ্ধ ধর্ম সমন্ধীয় মূল বই ও সংশ্লিস্ট বইয়ের আলোচনা গ্রন্থ। এছাড়া অন্যান্য সংগ্রহশালার মধ্যে ছিল বেদ, দর্শন, সাহিত্য, চিকিৎসা বিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা সমন্ধীয় বই। উল্লেখিত সামগ্রীর বেশির ভাগ ছিল কাপড়ের বাঁধাই এবং তালপাতার উপর লেখা।

১৩ শতকের প্রথমাংশে (১২০৪-১২০৫) বখতিয়ার খলজির বাংলা অক্রমনের সময় নালন্দা মহাবিহার লাইব্রেরিটি ধংস প্রাপ্ত হয়। আবার কারো কারো মতে ১৩ শতাব্দিতে তুর্কী সৈন্য দ্বারা এই নালন্দা মহাবিহার লাইব্রেরিটি ধংস হয়। ১৮৬০ সালে ঐতিহাসিক আলেকজন্ডার কানিংহাম বড়গাঁ গ্রামের পাশ্ববর্তী স্থান হতে এই নালন্দা মহাবিহার লাইব্রেরির প্রত্নতত্ব আবিস্কারের মাধ্যমে এই লাইব্রেরির ইতিহাস মানুষের দৃষ্টিগোচরে আনেন।তার আগে এই নালন্দা মহাবিহার লাইব্রেরি সমন্ধে আমাদের তেমন কোন ধারনা ছিল না।

পারগামাম লাইব্রেরি
এশিয়া মাইনরের রাজধানী ‘পারগামাম’ নামক স্থানে রাজা প্রথম এট্টালাস গ্রন্থাগারটি খ্রীষ্টপূর্ব 241 B.C তে স্থাপন করেন। এট্টালাসের মৃত্যুর পর তার উত্তসূরী রাজা ২য় ইউমিনেস লাইব্রেরির প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেন। তিনি লাইব্রেরিটির জন্য নতুন একটি ভবন নির্মান করেন এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লোক পাঠিয়ে পান্ডুলিপি সংগ্রহ করেন। অচিরেই লাইব্রেরিটি সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিশেষ পৃষ্ঠপোষক হিসাবে জ্ঞান বিতরণের অন্যতম প্রতিষ্ঠান হিসাবে পরিণত হয়। পারগামাম লাইব্রেরির সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পান্ডুলিপি সংগ্রহ করা হত এবং নকল করার জন্য বিভিন্ন স্থানে সংগ্রাহক পাঠানো হত । রাজা ২য় ইউমিনেসের সংগ্রহশালার সংগ্রহ ছিল প্রায় ১,৬০,০০০ এর মত। সাধারণত পার্চমেন্ট ও ভেলাম এর তৈরি লাইব্রেরি উপকরন এই পারগামাম লাইব্রেরিতে বেশি ছিল। পারগামাম লাইব্রেরির সংগ্রহগুলো বিষয় ভিত্তিকভাবে বিন্যাসিত ছিল এবং প্রতিটি গ্রন্থের সূচী তৈরি করা হয়েছিল। ফলে ব্যবহারকারিরা সহজে প্রয়োজনীয় উপকরন খুঁজে পেত।

ইতিহসে উত্থান ও পতন অবাস্তব বা নতুন কোন ঘটনা নয়। খ্রিস্টপূর্ব ১৩৩ অব্দে রোমান সৈন্যবাহিনী পারগামাম জয় করেন এবং পারগামাম লাইব্রেরির সমস্ত উপকরন লুট করে নিয়ে যায় মিশরে। তারা পারগামাম লাইব্রেরির সেই সংগ্রহগুলো তারা মিসরের রানী ক্লিওপেট্রাকে উপহার হিসাবে দান করেন। যা রানী ক্লিওপেট্রা সিরায়িাম মন্দির সংলগ্ন লাইব্রেরিতে যুক্ত করেন। এই ভাবেই হারিয়ে যায় সেকালের বিখ্যাত পারগামাম লাইব্রেরি। 

কার্ডোভা লাইব্রেরি
দশম শতাব্দীতে স্পেনের কার্ডোভা নগরীতে কার্ডোভা লাইব্রেরী গড়ে ওঠে। শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে তখন স্পেনের মুসলমানরা ছিল সর্বাগ্রে। এই লাইব্রেরিটি গড়ে উঠতে কার্ডোভার ৩য় আবদুর রহমানের পুত্র স্পেনের দ্বিতীয় বাদশা হাকামের গুরুত্ব অপরিসীম। কার্ডোভা লাইব্রেরীতে যে বিশাল সংগ্রহশালা গড়ে উঠেছিল তার মধ্যে ধর্মীয় গ্রন্থাদি, গনিতশাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিৎসাশাস্ত্র, দর্শন, আইন ইত্যাদি বিষয়ের পুস্তকাদি। ঐতিহাসিকদের মতে সেখানে প্রায় চল্লিশ লাখের এক বিশাল সংগ্রহশালা গড়ে উঠেছিল। সে সময় এই লাইব্রেরি ব্যবহার করার জন্য মধ্য এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য থেকে লোক আসত। 

এই লাইব্রেরিতে প্রায় ১০০ জনের উপর কর্মচারী নকলনবিশ ছিলেন যাদের কাজ ছিল বিভিন্ন ভাষার বই আরবীতে অনুবাদ করা। সমসমাযিক বিশ্বে এই লাইব্রেরিটি ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ। মুলত এই প্রাচীন লাইব্রেরিটি ব্যবহার করেই মধ্যযুগের মুসলিম স্পেন শিক্ষা বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিতে প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেছিল। ৭৯৫ খ্রিস্টাব্দে বাদশা হাকামের মৃত্যুর পর হতে এই লাইব্রেরিটি জৌলুস হারাতে থাকে। ১০০২ খ্রিস্টাব্দে স্প্যানীয়দের অক্রমনে কার্ডোভা লাইব্রেরিটি ধংসপ্রাপ্ত হয়।

লাইব্রেরি অব কংগ্রেস
লাইব্রেরি অব কংগ্রেস পৃথিবীর সবচেয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ বৃহত্তম অধুনিক লাইব্রেরি যা আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত। ইহা ১৮০০ সালে আমেরিকার কংগ্রেস কর্তৃক কংগ্রেস ও  আইন প্রণেতাদের ব্যবহারের জন্য এই লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। মাত্র ৯৬৪টি বই ও ৯টি ম্যাপ নিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়। লাইব্রেরি অব কংগ্রেস মূলত: কংগ্রেস ও আইন প্রণেতাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত হলেও বর্তমানে এই লাইব্রেরি সর্ব সাধারনের তথ্য সেবা প্রদান করে থাকে। বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে এই লাইব্রেরির তথ্য সেবা গ্রহণ করতে পারে।

লাইব্রেরি অব কংগ্রেস আমেরিকার জাতীয় গ্রন্থাগার। ১৮৯৭ সালে নির্মিত লাইব্রেরির স্থায়ী ভবন ও ১৯৩৯ সালে অত্যাধুনিক ভবন দুটি সমস্ত লাইব্রেরি এলাকার ১৩.২/৩ একর জমির ৬ একর দখল করে আছে। লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের মোট আয়তন ৩৫ একর। সিনেটের অনুমোদন সাপেক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের লাইব্রেরিয়ান নিয়োগ দিয়ে থাকেন।

লাইব্রেরি অব কংগ্রেসে বর্তমানে ৩৪ মিলিয়ন খন্ড বই এবং পুস্তিকা সহ এই লাইব্রেরি মোট সংগ্রহ ১১০ মিলিয়ন আইটেমের বেশী। লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের অন্যান্য সংগ্রহ গুলোর মধ্যে পান্ডুলিপি, জার্নাল, ম্যাপস, বিভিন্ন চুক্তি, আলোকচিত্র, অডিও ভিজ্যুয়্যাল ম্যাটিরিয়াল বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে লাইব্রেরি অব কংগ্রেস প্রিন্টেড বই পুস্তকের সংগ্রহের উপর বেশী গুরুত্ব প্রদান করে না। যেহেতু লাইব্রেরি অব কংগ্রেস এখন একটি সম্পূর্ন ডিজিটাল লাইব্রেরি তাই বর্তমানে এই লাইব্রেরি ডিজিটাল সংগ্রহের উপর বেশী গুরুত্ব প্রদান করে থাকে। এই লাইব্রেরি ওয়েব সাইটটি  https://www.congress.gov/ ব্যবহার করে পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে এই লাইব্রেরিটি ব্যবহার করা যাবে। 

ব্রিটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরি 
১৯৭২ সালে বৃটিশ লাইব্রেরি এ্যাক্ট পাশ না হওয়া পর্যন্ত ইংল্যান্ডে কোন জাতীয় লাইব্রেরি ছিল না। তখন ব্রিটেনের জাতীয় লাইব্রেরি বলতে  ব্রিটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরিকে বোঝানো হত। ১৯৭২ সালে বৃটিশ লাইব্রেরি এ্যাক্ট পাশ হওয়ার  ফলে ব্রিটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরিকে ব্রিটেনের জাতীয় লাইব্রেরি হিসাবে ঘোষণা করা হয়।

১৭৫৩ সালে ব্রিটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হয়। স্যার হ্যানম স্নোয়ান নামের একজন চিকিৎসক তাঁর ব্যক্তিগত সকল সংগ্রহ ব্রিটেনে একটি জাতীয় লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার জন্য দিয়ে যান। মূলত তাঁর সংগ্রহ এবং রাজা ৭ম হেনরী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত র‌্যয়াল লাইব্রেরির সকল সংগ্রহ একত্রে করে ব্রিটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা হয়। লন্ডনের বিখ্যাত মন্টেও ভবনে সর্বপ্রথম ব্রিটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৫৭ সালে ব্লুমসবেরীতে এই লাইব্রেরিতে স্থানান্তরিত করা হয় যা এখনো এখানে মাথা উচু করে দাড়িয়ে রয়েছে।

বর্তমানে এই লাইব্রেরিতে প্রচীন আলেকজান্দ্রিয়া, পারগামাম, কর্ডোভা লাইব্রেরির বিভিন্ন সংগ্রহ, পান্ডুলিপি, ম্যাপস, জার্নাল, সংগীত, অডিও ভিজুয়্যাল সংগ্রহ গুলো রয়েছে। বর্তমানে এই লাইব্রেরিতে প্রায় লক্ষাধিক ইলেকট্রনিক প্রকাশনা রয়েছে। ফরম পূরণ করে যে কোন মানুষ এই লাইব্রেরি ব্যবহার করতে পারে। কোন বই এখানে ধার প্রদান করা হয় না কারন এটি একটি রেফারেন্স লাইব্রেরি। এটি পরিচালনার জন্য একটি বোর্ড অফ ট্রাস্টি ছিল যার বর্তমান নাম বোর্ড অফ ম্যানেজমেন্ট রাখা হয়েছে। যার প্রধান একজন ডিজি (মহাপরিচালক) যিনি প্রতিবছর ব্রিটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রদান করেন। এই লাইব্রেরির ওয়েব সাইটটি হল http://www.bl.uk/  

বিবলিওথেক ন্যাশনেইল ফ্রান্স
বিবলিওথেক ন্যাশনেইল ফ্রান্সের জতীয় লাইব্রেরি যা ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অবস্থিত। এই লাইব্রেরিটি লেলিন স্টেট লাইব্রেরি, লাইব্রেরি অব কংগ্রেস ও ব্রিটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরির চেয়ে বেশী প্রাচীন। ১৫০০ খ্রীস্টাব্দে একটি জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে এই লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৭৮৯ সালে ফরাসী বিপ্লবের যে চেতনা সৃষ্টি হয় তার ধারাবাহিকতায় ১৭৯৫ সালে এক বিশেষ কনভেনশনের মাধ্যমে এই লাইব্রেরিকে বিবলিওথেক ন্যাশনেইল ফ্রান্স ঘোষনা করা হয়। পরবর্তীতে নেপোলিয়নের ব্যক্তিগত সংগ্রহ এখানে যুক্ত হয় এবং লাইব্রেরিটির সংগ্রহ আরো সমৃদ্ধ হয়।

বিবলিওথেক ন্যাশনেইল ফ্রান্স একটি সরকারী সংগঠন হিসাবে ১৯৪৫ সাল হতে ফ্রান্স প্রজাতন্ত্রের শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছে। একজন পরিচালক এবং একজন প্রশাসকের অধীনে এই লাইব্রেরিটি পরিচালিত হয়ে আসছে। বিবলিওথেক ন্যাশনেইল ফ্রান্সের সকল বাজেট ফ্রান্স সরকার কর্তৃক পেয়ে থাকে। প্রতি বছর লাইব্রেরিটির বার্ষিক রিপোর্ট ফ্রান্সের শিক্ষা মন্ত্রী বরাবর প্রদান করা হয়।

বিবলিওথেক ন্যাশনেইল ফ্রান্স লাইবেরিতে ৪০ মিলিয়ন বই, ১,৮০.০০০ বিভিন্ন ভাষার পান্ডুলিপি,৪,০০০০০ এর অধিক ম্যাপস,৩৩০০০ এর উপর সংগীত ও অডিও ভিজুয়াল উপকরনের উপর সংগ্রহ রয়েছে। এটি মূলত একটি গবেষণা লাইব্রেরি যা সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। প্রতিদিন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯০০ থেকে ১৫০০  পর্যন্ত হয়ে থাকে। যে কোন ব্যবহারকারী এই লাইব্রেরিটি ব্যবহার করতে পারেন। অনলাইনের  মাধ্যমে এই পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে এই লাইব্রেরি ব্যবহার করা যায়।

লেলিন স্টেট লাইব্রেরি
লেলিন স্টেট লাইব্রেরি বিশ্ববিখ্যাত লাইব্রেরি গুলোর অন্যতম। এই লাইব্রেরির পূর্ব নাম রুমাইয়ানাসি লাইব্রেরি যা রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে অবস্থিত। ১৮০০ খ্রীস্টাব্দের প্রথম দিকে এই লাইব্রেরিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তী ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের পর এই লাইব্রেরিটিকে পূনরায় সংগঠিত করা হয়। ১৯৪০ সালে  লেলিন স্টেট লাইব্রেরিকে নতুন আধুনিক লাইব্রেরি বিল্ডিং এ স্থানান্তরিত করা হয়। এপর্যন্ত লাইব্রেরিটিকে আরো সম্প্রসারিত করা হয়েছে। এই লাইব্রেরিটি পরিচালনার জন্য আলাদা আলাদা বিভাগ রয়েছে যার প্রধানগণ সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত হয়ে থাকে।

লেলিন স্টেট লাইব্রেরির বর্তমানে প্রায় তিন কোটি বই, ১ কোটি পান্ডুলিপি ও অন্যান্য পাঠ্য সমগ্রী সংরক্ষিত রয়েছে। এছাড়া এখানে জার্নাল ও এনসাইক্লোপিডিয়া সংরক্ষিত রয়েছে। এ লাইব্রেরিতে প্রতিদিন ১৫৬ ভাষার বিভিন্ন দেশের সংবাদপত্র সংগ্রহ করে থাকে। বর্তমানে এ লাইব্রেরিটি একটি ডিজিটাল লাইব্রেরি। এ লাইব্রেরিটিতে বর্তমানে ই-বুক ও ই-জর্নাল সংগ্রহের উপর বেশী জোর দিয়ে থাকে। পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে  লেলিন স্টেট লাইব্রেরি অনলাইনে ব্যবহার করা যায়। লেলিন স্টেট লাইব্রেরি থেকে নিজস্ব কিছু প্রকাশনা প্রকাশিত হয়ে থাকে। এছাড়া প্রতি বছর সমস্ত রাশিয়ার প্রকাশনার কপি কপিরাইট আইন অনুযায়ী  লেলিন স্টেট লাইব্রেরি সংগ্রহ করে থাকে।

বাংলাদেশের বিখ্যাত লাইব্রেরি
বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার ও আর্কাইভস ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। যদিও শুরুর দিকে এই লাইব্রেরি ১০৩ এলিফ্যান্ট রোড, পরে ১০৬ সেন্ট্রাল রোড ধানমন্ডিতে অস্থায়ী ভাড়া বাড়িতে স্থনান্তরিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালের ২১ জানুয়ারি তৎকালীন শিক্ষা উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান ঢাকার শেরে-ই- বাংলা নগরে জাতীয় গ্রন্থাগারের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন এবং সেখানেই বর্তমান লাইব্রেরিটি অবস্থিত।
 
বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার
জাতীয় গ্রন্থাগার ও আর্কাইভস এর কার্যাবলী
১। সরকারি দলির পত্র সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও তত্ত্ববধান করা। 
২। পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা।
৩। সরকারি প্রকাশনা ও মুদ্রিত সামগ্রী, সংবাদপত্র, সাময়িকী ইত্যাদি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা।
৪। গবেষকদেও গবেষণা কাজে সহযোগিতা করা
৫। ঐতিহাসিক দলিল ও গুরুত্বপূর্ণ নথি ইত্যাদি বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা করা।
৬। জাতীয় আর্কাইভস অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর বাস্তাবায়ন।
৭। দেশে-বিদেশে গবেষকদের গবেষণা কর্মে পূর্ণ সহযোগিতা ও তথ্য সরবরাহ করা।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ই-লাইব্রেরি
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় লাইব্রেরি, একটি বিশেষ গ্রন্থাগার। ইহা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের রেফারেন্স সেবা প্রদানের জন্য প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৯১ সালে পার্লামেন্টারী সরকার ব্যবস্থা চালু হলে এই গ্রন্থাগারটির নাম হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় লাইব্রেরি। ১৯৯১ সালের আগে এ গ্রন্থাগারটির নাম ছিল রাষ্ট্রপতির সচিবালয় গ্রন্থাগার। গভর্ণর হাউজ (বঙ্গভবন) এর গ্রন্থাগারটি রাষ্ট্রপতির সচিবালয় গ্রন্থাগার হিসাবে রূপান্তরিত হয়। নাম যাই হোক না কেন এ গ্রন্থাগারটি সব সময় রাষ্ট্র/সরকার প্রধানের গ্রন্থাগার হিসাবে কাজ চালিয়ে আসছে। সরকারি দলিল যেমন-ঢাকা গেজেট ১৯৪৮ সাল হতে বাংলাদেশ গেজেট শুরু হতে বর্তমান পর্যন্ত সংরক্ষিত আছে। এছাড়া বাংলাদেশের প্রথম অলংকৃত ও হাতে লেখা সংবিধানের একটি খসড়াঁ সংখ্যা এখানে সংরক্ষিত আছে। ১৯৮৭ সালে রাষ্ট্রপতির সচিবলায়সহ এ গ্রন্থাগারটি আধুনিক সুবিধা সম্বলিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দ্বৈত কাঠামোর দ্বিতল ভবনে অবস্থিত। 

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় লাইব্রেরির সংগ্রহ
এই গ্রন্থাগারে বর্তমানে ৩১ হাজারের বেশী প্রকাশনা রয়েছে। এখানে লাইব্রেরির সকল প্রকাশনাসমূহ Dewey Decimal Classification নিয়ম অনুযায়ী বিন্যাসিত। এখানে ১৮ হাজারের বেশী বই অন লাইনে ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এখানে ৫ হাজারেরও বেশী বিভিন্ন ধরনের ই প্রকাশনাও রয়েছে। এই গ্রন্থগাওে কিছু আর্কাইভাল সংগ্রহ রয়েছে। এখানে রয়েছে বাংলাদেশের প্রথম হস্তলিখিত সংবিধানের খসড়াঁ এবং বিভিন্ন কমিশনের রিপোর্টসমূহ। এই লাইব্রেরি অনেক সংখ্যক পেপার, পত্রিকা ও জার্নাল ক্রয় করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস অনুবিভাগ এবং এ কার্যালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেও প্রতিদিন সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এখানে ব্যবহারকারীদের ইন্টারনেট ও কম্পিউটার সেবাও প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় লাইব্রেরির ওয়েব সাইট ঠিকানা http://lib.pmo.gov.bd এবং ফেসবুক ঠিকানা https://www.facebook.com/pmolibrarybd/ পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় লাইব্রেরি অনলাইনে ব্যবহার করা যায়।
মানব সভ্যতার ঊষালগ্নে থেকে কয়েকটি সমাজিক প্রতিষ্ঠান মানুষকে তার সমকাল এবং উত্তরকালে প্রভাবিত করেছে তার মধ্যে লাইব্রেরি স্মরণীয় ও উজ্জলতম। যুগে যুগে কোন ব্যক্তি একক প্রচেষ্টায় অথবা কোন গোত্রের যৌথ উদ্যেগে লাইব্রেরি গড়ে তুলেছিল তাদের চিন্তা চেতনাকে তার অগ্রজদের ব্যবহারের জন্য। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থাতে তা যা আজও বিদ্যমান। সময়ের বিবর্তনে অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু লাইব্রেরি আজও মানুষের চিন্তালব্ধ জ্ঞান ও চেতনাকে সংরক্ষন করে চলেছে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। অনেকে বলে থাকে তথ্য ও প্রযুক্তির বিকাশের ফলে লাইব্রেরির প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে গেছে। আমি বলি লাইব্রেরির প্রয়োজনীয়তা ও দায়বদ্ধতা আরো বেড়ে গেছে Because not everything on the internet is true. 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত