সংক্রমণ বেশি হলে মৃত্যুও বেশি হবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

অমিক্রন মাইল্ড হতে পারে, কিন্তু তার সংক্রমণের ক্ষমতা অনেক বেশি। সংক্রমণ যখন বেশি হবে তখন মৃত্যুও বেশি হবে। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকদের সঙ্গে আজ মঙ্গলবার এক বৈঠকে একথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক।

মানুষের অতি আত্মবিশ্বাসের কারণে দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সংক্রমণ বৃদ্ধির আরেকটি কারণ বৈশ্বিক। সারাবিশ্বে বৃদ্ধি পাচ্ছে, বাংলাদেশেও। এ রকম একটা পরিস্থিতির কারণে দেশে ১ থেকে ৩২ শতাংশে উঠেছে সংক্রমণের হার। এটা খুবই আশঙ্কাজনক।

তবে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় সরকারি হাসপাতালগুলো প্রস্তুত আছে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, রাজধানীতে সরকারি যে হাসপাতাল আছে, সেগুলোর ২৫ শতাংশ শয্যা ভরে গেছে। এভাবে সংক্রমণ বাড়তে থাকলে ধীরে ধীরে বেডের চাহিদা বাড়বে।

তিনি বলেন, সরকারি প্রায় প্রতিটি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের লাইন লাগানো আছে। পরীক্ষার ব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে। প্রায় সাড়ে ৮০০ কেন্দ্রে পরীক্ষা হচ্ছে। অ্যান্টিজেন পরীক্ষা আমরা বেসরকারি খাতে দিয়ে দিয়েছি। করোনা চিকিৎসায় ঢাকা শহরে আমাদের ৪ হাজার বেড আছে। এর মধ্যে ১ হাজারের বেশি অকুপাইড হয়ে গেছে। বেসরকারি হাসপাতালে বেডের চাহিদা বাড়বে। অমিক্রন মোকাবিলায় ইতোমধ্যে আমরা বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছি। কোনো চেষ্টাই সফল হবে না যদি জনগণ না এগিয়ে আসে।

সংক্রমণ বাড়লে সেই হারে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে না জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, এর কারণ হচ্ছে টিকা নেওয়া। আমরা ৩১ কোটি টিকা পাব।

অনেক মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, যার ফলে হসপিটালাইজেশন কম হবে। আমাদের টার্গেটেড আরো ৩ কোটি লোক বাকি আছে। ট্রান্সপোর্ট, ইন্ডাস্ট্রি, কনস্ট্রাকশন সেক্টর বাকি আছে। তারা এগিয়ে আসেনি নেওয়ার জন্য। তাদের কীভাবে টিকা দেওয়া যায় সে বিষয়ে আমরা বৈঠক করেছি।

হাসপাতালে রোগী যারা আসছেন তাদের ৮৫ শতাংশই টিকা নেননি জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, যারা মারা যাচ্ছেন তাদের ৮৫ শতাংশই টিকা নেননি।

ইচ্ছে মতো চলাফেরা করলে আমাদেই ক্ষতি হবে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, বাসার বাইরে মানুষ সেই ভাবে মাস্ক পরে না। স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। অমিক্রন মাইল্ড হওয়ায় কথা চিন্তা করে আমরা যদি ইচ্ছে মতো চলাফেরা করি তাহলে আমাদের ক্ষতি হবে। আমাদের দেশ অনেক ভালো অবস্থায় আছে। আমাদের সবগুলো সূচকই ভালো আছে। আমরা যদি ফেল করি তাহলে সূচকগুলো ভালো থাকবে না।

আগে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকরা যেভাবে এগিয়ে এসেছিল, এবারও সেভাবে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, আশা করি এবারও আপনারা আগেরবারের মতো করবেন। আমি সব জায়গায়ই আপনাদের কথা বলি।

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন অমিক্রন মোকাবিলায় বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, গতবার ২ থেকে ৩ হাজার বেড আপনারা প্রস্তুত করেছিলেন। এবারও আশা করি, প্রস্তুত করবেন যদি প্রয়োজন হয়।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট আমরা মোকাবিলা করেছিলাম তখন আমাদের অনেক কিছুর স্বল্পতা ছিল। সেভাবে ভ্যাক্সিনেশন কার্যক্রম শুরু হয়নি। ডাক্তার-নার্স হাসপাতালে যারা আছেন তাদের অভিজ্ঞতা কম ছিল। দ্বিতীয় ওয়েব মোকাবিলার পর আমাদের আস্থা জন্মেছে, আমরা মোকাবিলা করতে পারি। আমাদের জনবল শুধু প্রশিক্ষিত হয়নি, হাসপাতালগুলো অনেক সুসজ্জিত হয়েছে। আমরা খুবই আনন্দিত ছিলাম এবং আশা করেছিলাম, করোনা বাংলাদেশ থেকে বিদায় নেবে। মৃত্যুর হার শূন্যের কোটায় নেমে এসেছিল।

কেনো জানি আমরা সচেতন হতে পারি না এমন আক্ষেপ প্রকাশ করে জাহিদ মালেক বলেন, আমরা ব্যাপক হারে, বেপরোয়াভাবে মাস্ক না পরে ঘোরাফেরা করেছি। আপনারা দেখেছেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজারে লাখ লাখ মানুষ বেড়াতে গেছে। বিয়ে-শাদি হয়েছে দেশে, হাজার হাজার মানুষকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে, কেউ মাস্ক পরেনি।

অমিক্রনের উপসর্গ মৃদু ভেবে অবহেলা করার সুযোগ নেই উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো বলেন, রোগী সংখ্যায় যদি অনেক বেশি হয় তাহলে আল্টিমেটলি মৃত্যু বাড়বে।