ভিটামিন-সি এর উপকারিতা এবং কেন খাবেন ?

প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২০, ১৩:৫০

বর্তমানে করোনার প্রাদুর্ভাবে ভিটামিন-সি নামটি আমাদের সবার কাছেই পরিচিত একটি নাম। অনেকেই নামটি আগে জানলেও হয়ত অতটা চিন্তা করেননি এই ছোট উপাদানটি নিয়ে, যতটা না এখন চিন্তা করছেন। কিন্তু কেউ না ভাবলেও আমাদের শরীরে এই ছোট উপাদানটির  রয়েছে  অনন্য ভূমিকা। আসুন আজকে জেনে নেই কি কাজ করে এই ভিটামিন সি।

আমাদের দেহে দুই ধরনের উপাদান এর প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে একটা হল অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। অর্থাৎ এই ধরনের উপাদান প্রতিদিন খেতে হবে । এর কারন হল, এটি শরীরে কোনভাবেই জমা হয়না। তারমানে আপনি এই ধরনের উপাদান যতই খান না কেন, শুধুমাত্র যতটুকু আপনার শরীরে প্রয়োজন হবে তততুকুই থাকবে। বাকিটা শরীর থেকে বের হয়ে যাবে।


ভিটামিন-সি বা এসকরবিক এসিড হল ঠিক এমনই একটি উপাদান। খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন (এফডিএ) এর নির্দেশিকা অনুযায়ী একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের প্রতিদিন সর্বনিম্ন ৯০ মিলিগ্রাম এবং নারীদের সর্বনিম্ন ৭৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি খাওয়া উচিত। আর একদিনে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ২০০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত খেতে পারবে। তবে এর বেশি খেলে ডায়রিয়া, বমি ভাব, মাথা ব্যথা অথবা বুকে জ্বালা-পোড়া হতে পারে। কিন্তু এই ২০০০ মিলিগ্রাম একদিনে শুধুমাত্র খাবার থেকে পাওয়া প্রায় অসম্ভব বলা যেতে পারে।

অনেকেই সারাদিনে এক টুকরা লেবু খেয়ে ভাবে যে, তার ভিটামিন-সি এর চাহিদা পূরণ হয়ে গেছে। তাহলে আপনাদের জন্য বলছি, ২০০ গ্রাম লেবুতে মাত্র ১০৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি থাকে। তাহলে এখন আপনিই চিন্তা করুন যে, একদিনে ১০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি খেতে হলে আপনাকে কতগুল লেবু খেতে হবে সারাদিনে ?


আমাদের দেশের মানুষের একটা ভ্রান্ত ধারনা আছে যে, টক জাতীয় খাবার সে তো মেয়েদের খাওয়ার জিনিস। এই কারনেই টক খাবার থেকে আমাদের দেশের ছেলেরা বহু দূরে থাকে। তারপর তারাই আবার চিন্তা করে যে, মেয়েদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কেন এত ভালো হয় ! জ্বি ভিটামিন সি তে পরিপূর্ণ এই টক খাবারই মেয়েদের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হবার প্রধান কারন।

এছাড়া ভিটামিন সি আমাদের শরীরের বাইরের এবং ভিতরের যেকোনো ক্ষত এবং প্রদাহ সারিয়ে তুলতে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এছাড়া আমাদের চুল, নখ, ত্বক এবং দাঁতের কোষগুলো সুরক্ষায়ও সহায়তা করে।

আমাদের দেহে বিভিন্ন কারনে ফ্রি রেডিক্যাল উৎপন্ন হয়। এগুলো ক্যান্সার সহ, হৃদপিণ্ডের বিভিন্ন অসুখের জন্য যেমন দায়ি তেমনি শরীরে দ্রুত বার্ধক্য নিয়ে আসে। ভিটামিন-সি এর এন্টি-অক্সিডেন্ট কার্যকলাপ এই  ফ্রি রেডিক্যাল গুলোকে নষ্ট করে এবং এই ধরনের সমস্যাগুলো থেকে আমাদেরকে দূরে রাখে। শুধু তাই নয়, কিডনির বিভিন্ন সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস সহ বিভিন্ন রোগের এক মহাঔষধ এই ভিটামিন সি। তাছাড়া রক্তে ইউরিক এসিড এর পরিমান কমিয়ে বাত বা গাউট জাতীয় সমস্যারও সমাধান হয় এর মাধ্যমে।

 

ভিটামিন সি সবচেয়ে বড় যেই কাজটি করে তা হল, আমাদের শরীরে আয়রন শোষণে সহায়তা করে। তারমানে হল, কারো যদি রক্ত শুন্যতা থাকে আর সে যদি শুধু আয়রন জাতীয় খাবারই খায়, কিন্তু সাথে কোন টক খাবার না খায় তবে আয়রন শোষণ সম্পূর্ণভাবে হবেনা। অর্থাৎ রক্তকণিকা উৎপাদন ও ব্যাহত হবে।

অতএব, কারো যদি সহজে কোন ক্ষত ভালো না হয়, শরীরে পানি চলে আসে, ত্বক খসখসে হয়ে যায়, নখ কালো এবং ভঙ্গুর হয়ে যায়, চুল রুক্ষ হয়ে যায় এবং মাড়ির থেকে রক্ত পরে তবে উপেক্ষা না করে দ্রুত একজন ডাক্তার এবং একজন পুষ্টিবিদের কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করুন।

সবশেষে বলতে চাই, ভিটামিন-সি জাতীয় খাবার যত পারুন বেশি করে খান, বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণায় দুঃশ্চিন্তা করে, কোনভাবেই কম খেয়ে শরীরের ক্ষতি করবেন না।

লেখকঃ পুষ্টিবিদ, 'মা' টেলি-হেলথ সেন্টার (মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়)

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত