জাম দূর করে শারীরিক রোগব্যাধি

প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০১৯, ১৩:৫৯

সাহস ডেস্ক

জামকে কেউ বস্ন্যাকবেরি বলেন। আসলে জাম আর বস্ন্যাকবেরি এক ফল নয়। জামের ইংরেজি নাম বস্ন্যাকপাম। যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের জন্য জাম ফলটি বেশ উপকারি। গবেষণা দেখা গেছে এই ফল স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে। ফলটিতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা ফ্রির‌্যাডিক্যালস তৈরিতে বাধা দেয়। এই ফ্রি র‌্যাডিক্যালস ক্যান্সারের জন্য দায়ী। জাম রক্তের শর্করা ও কোলস্টেরলের মাত্রা কমায়। 

গবেষণায় দেখা গেছে, অন্য যেকোনো ফল যেখানে ২ শতাংশ ডায়াবেটিস ঝুঁকি কমায়, কালো জাম সেখানে ২৬ শতাংশ ঝুঁকি কমায়। তবে ফলের জুস ফলের মতো সমান কার্যকর নয়। ফল খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে কি না বা ফল খাওয়ার সাথে এর সম্পর্ক আছে কি না তা পরীক্ষা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকেরা। এ গবেষণায় দেখা গেছে, ৬.৫ শতাংশ লোকের ডায়াবেটিস ভালো হয়েছে। 

গরমের ফল জাম। যদিও এটা খেতে সামান্য কষভাব রয়েছে, তবে জামের গুণাগুণ অনেক বেশি। শুধু এর নরম মাংসল অংশটাই নয়, এর বীজটাও কাজে লাগে। কীভাবে এর প্রয়োগ করবেন চলুন জেনে নিই। 

আমরা হয়তো অনেকেই জানি না, জামের বীজ ভীষণ উপকারী। জামের বীজের মধ্যে রয়েছে জাম্বলিন নামক গ্লুকোসাইট। গ্লুকোসাইট স্টার্চকে শর্করাতে রূপান্তরের হাত থেকে বাঁচায়। এতে মধুমেহ নিয়ন্ত্রিত হয়। 

কাঁচা জামের পেস্ট পেটের জন্য উপকারী। এতে পেটের রোগ সেরে যায়। খিদে কম হলে বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে এই আচার পানির মধ্যে সমপরিমাণে মিশিয়ে সকাল-সন্ধ্যা খাবেন। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে। খিদেও বাড়বে। 

বর্তমানে কিছু কিছু দেশে জাম দিয়ে বিশেষ ওষুধ তৈরি করা হচ্ছে, যা ব্যবহারে চুল পাকা বন্ধ হবে। 

গলার সমস্যার ক্ষেত্রে জাম ফলদায়ক। জাম গাছের ছাল পিষে পেস্ট তৈরি করুন। সেটি পানিতে মিশিয়ে মাউথ ওয়াশ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এতে গলা পরিষ্কার হবে, মুখের দুর্গন্ধ দূর হবে, মাঢ়িতে কোনো সমস্যা থাকলে সেটিও কমে যাবে।

আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে, বিশেষ করে জামের বীজ ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। জামে প্রচুর আঁশ রয়েছে যা হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। জাম রক্ত পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। শরীরে দূষিত কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা কমিয়ে দেহের প্রতিটি প্রান্তে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়। নিয়মিত জাম সেবন বার্ধক্য প্রতিরোধে সহায়ক। জামে স্যালিসাইলেট নামক এক ধরনের উপকরণ আছে, যা ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে। ডায়াবেটিসের রোগিরা প্রতিদিন ৮-১০টি জাম খেতে পারেন। ২৫০ গ্রাম জাম ৫০০ মিলিলিটার পানিতে গরম না হওয়া পর্যন্ত করুন। তারপর ঠান্ডা হলে পানিতে গুলে ছেঁচে প্রতিদিন তিনবার খান। 

এছাড়া এক বা দুই চামচ জামের বীজের গুঁড়ার সঙ্গে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে সন্ধ্যায় খেলে উপকার পাবেন। যাদের গ্যাষ্ট্রিক বা পেট ফাঁপে তারা ১০ মিলিলিটার জামের ভিনেগার পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেলে আরাম পাবেন। 

লিভারের সমস্যাজনিত রোগ প্রতিদিন দুই চা চামচ জামের ভিনেগার খেলে লিভারের সমস্যা কমে যায়, কিছু সতর্কতা খালি পেটে জাম খাবেন না এবং জাম খাওয়ার পর দুধ খাবেন না। যাদের শরীরে পানি জমে গেছে, বা কিছুদিন আগে সন্তান প্রসব করেছেন বা ঘনঘন বমি করছেন_ এমন সময় জাম খাবেন না। জাম খাওয়ার পর যদি অস্বস্তি অনুভব করেন তাহলে আটার সাথে কিছুটা লবণ মিশিয়ে খেলে আরাম পাবেন। শুকনো আদা বা আমলকিও খেতে পারেন। বেশি পাকা জাম খেলে হাইপার অ্যাসিডিটিও হতে পারে, এ অবস্থায় এক-দুই চা চামচ জিরার গুঁড়া কিছুটা লবণ দিয়ে খেলে উপকার পাবেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত