চিকিৎসক সংকটে লালমনিরহাট স্বাস্থ্যসেবা

প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১২:৪৪

আসাদুজ্জামান সাজু

চিকিৎসকসহ নানা সংকটে ভুগছে লালমনিরহাটের ৪ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ জেলার স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র ভরসা সদর হাসপাতালটি। সদর হাসপাতালেই ৩৯টি চিকিৎসক পদের ২৩টিই শূন্য রয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার দিয়ে চলছে জেলাবাসীর স্বাস্থ্যসেবা। অপারেশন বা জঠিল রোগে আক্রান্ত রোগীরা বাধ্য হয়ে বেসরকারি ক্লিনিকে সেবা নিচ্ছেন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৫টি উপজেলা ও দু’টি পৌরসভার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সদর হাসপাতালে আন্তঃবিভাগ ও বহির্বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ১০০ শয্যার এ হাসপাতালে চিকিৎসক পদ রয়েছে ৩৯টি। যার মধ্যে ২৩টি পদই শূন্য রয়েছে। কর্মরত রয়েছেন মাত্র ১৬ জন। যার মধ্যে ছুটি ও প্রশিক্ষণ মিলে হাসপাতালের বাইরে রয়েছেন ৪ জন। প্যাথলজি বিভাগের যাবতীয় যন্ত্রপাতি থাকলেও নেই প্যাথলজি কনসালটেন্ট। ফলে টেকনোলজিস্ট দিয়ে নিরূপণ করা হচ্ছে রোগীদের রোগ শনাক্তের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা। নেই সিনিয়র কনসালটেন্ট অ্যানেসথেসিয়া পদের চিকিৎসক। ফলে অপারেশন কক্ষটিও বন্ধই থাকছে প্রায় সময়।

সূত্র মতে, জেলাবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রথমে ৫০ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করা লালমনিরহাট সদর হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। বর্তমানে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করতে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে ২৫০ শয্যায় যাত্রা শুরু করবে হাসপাতালটি। শয্যার সংখ্যা ও নতুন নতুন অত্যাধুনিক ভবন নির্মাণ হলেও নেই হাসপাতালের প্রাণ চিকিৎসক। চিকিৎসক সংকটে দীর্ঘদিন ধরে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে সদর হাসপাতাল।

জানা গেছে, আন্তঃবিভাগে ১০০ শয্যা হলেও প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৪০ জনের মতো রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত বহির্বিভাগে গড়ে দৈনিক সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রোগী চিকিৎসা ও বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। মেডিকেল অফিসারের অভাবে মাত্র তিনজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) জরুরি বিভাগ থেকে বহির্বিভাগ পর্যন্ত সামলে নিচ্ছেন। প্রয়োজনে তারা জুনিয়ার কনসালটেন্টদের কাছ থেকে সহযোগিতা নিচ্ছেন। তবে সাধারণ রোগীদের কপালে স্যাকমো ছাড়া কিছুই জুটছে না। তবুও চিকিৎসাসেবা নিতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে সেবা নিচ্ছেন জেলাবাসী।

শরীর ব্যাথা ও জ্বর নিয়ে দীর্ঘ দেড়ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা শহরের তেলীপাড়ার বাসিন্দা ফজিলা বেওয়া (৫৫) বলেন, সকালে হাসপাতালে এসে ৫ টাকায় টিকিট নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। দেড়ঘণ্টা হলেও চিকিৎসকের দরজায় পৌঁছতে পারেননি। এর আগে দুইঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে চিকিৎসাপত্র ও ওষুধ নিয়ে কিছুটা সুস্থ্য হয়েছেন। তাই আবারও চিকিৎসকের দেখা পেতে সকাল থেকে লাইনে এক রকম যুদ্ধ করছেন তিনি।

সদর হাসপাতালে কর্মরত উপ-সহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আবির বিন আখতার কখনো জরুরি বিভাগে, কখন আন্তঃবিভাগে ছুটাছুটি করে রোগী সামলে নিচ্ছেন। তিনি বলেন, জনবল সংকটের কারণে রোগীদের চাপ সামলানো বেশ কষ্ট হচ্ছে। তবুও যতটুকু সম্ভব চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেশি।

লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক গোলাম মোহাম্মদ জনবল সংকট থাকলেও ওষুধের সংকট নেই উল্লেখ করে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। নতুন চিকিৎসক নিয়োগ সম্পন্ন হলে শূন্যতা পূরণ হবে। যারা কর্মরত রয়েছেন তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সাহস২৪.কম/রিয়াজ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত