সংকট আর অবহেলায় চলছে রামগতি উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা

প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০১৮, ১০:৪৯

লক্ষ্মীপুর জেলার উপকূলীয় অঞ্চল ও মেঘনার ভাঙ্গন কবলিত ১টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত রামগতি উপজেলা। উপজেলার দরিদ্র জনগোষ্ঠির স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের একমাত্র প্রতিষ্ঠান হচ্ছে রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

উপজেলার প্রাণকেন্দ্র চর আলেকজান্ডারে অবস্থিত ৩১ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি চলছে ২০ শয্যা হাসপাতালের অবকাঠামোর মধ্যে। উপরে ফিটফাট দেখা গেলেও নানান সমস্যার মধ্য দিয়ে প্রতিদিন সেবা দিয়ে যাচ্ছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। 

ডাক্তার ও জনবল সংকটে দিন দিন ভেঙ্গে পড়তে চলছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কার্যক্রম। রামগতি উপজেলার ০৮টি ইউনিয়নে ৮ জন মেডিকেল অফিসারসহ রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৭ জন চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু এই বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য রয়েছে মাত্র ০৩ জন মেডিকেল অফিসার। হাসপাতালের শুরু থেকেই চালু হয়নি প্যাথলজি, এক্স-রে, ইসিজি, আলট্রাসনোগ্রাম সেবা। হাসপাতালের মোট জনবলের ৬৫% এরও বেশি পদ শূণ্য। একজন ডেন্টাল সার্জন থাকলেও তার দেখা মেলে না নিয়মিত। মাসে দু’একদিন এসে হাজিরা দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এবিষয়ে ডেন্টাল সার্জন ডা: সাইফুল ইসলাম এর সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি জানান, আমি অসুস্থ্য হওয়ায় এখন ছুটিতে আছি। এছাড়া রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আমাকে ডেন্টাল সার্জন পদে দায়িত্ব দিলেও নেই কোন বসার ব্যবস্থা, নেই ওটি রুম, নেই ডেন্টাল টেবিলসহ বিভিন্ন উপকরণ তাই। সপ্তাহে ২ দিন যাই।  

এছাড়াও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অর্থাৎ জুনিয়র কনসালটেন্ট মেডিসিন, সার্জারি এনেসথেসিয়া, গাইনী পদ এখন পর্যন্ত শূণ্য। দীর্ঘদিন যাবৎ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, এক্স-রে টেকনোলজিস্ট, অফিস সহকারী, হিসাবরক্ষক, ওয়ার্ড বয়, এমএলএসএস, পিয়ন, সুইপার খালি পদের বিপরীতে নেই কোন নিয়োগ।  

গত সেপ্টেম্বর মাসের ভর্তি রেজিস্টার থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে প্রায় ৬০০ জন রোগী, আউটডোরে চিকিৎসার জন্য এসেছে ৬ হাজার ৪’শ জন রোগী, নরমাল ডেলিভারি হয়েছে ১৪টি। ৫ বছরের নিচে প্রায় ২০-৩০ জন শিশুকে টিকা সেবা প্রদান করা হয়েছে। 

এদিকে দায়িত্বে অবহেলার মধ্য দিয়ে চলছে চর রমিজ ইউনিয়ন, চর বাদাম ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে মেডিকেল অফিসারের পাশাপাশি একজন করে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (ডিপ্লোমাধারী) রয়েছে। এরমধ্যে চরগাজী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে পদটি শূণ্য রয়েছে। চর রমিজ ইউনিয়ন ও চর বাদাম ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার থাকলেও দায়িত্বে অবহেলা করছেন বলে অভিযোগ দুই (ডিএমএফ) চিকিৎসক রাসেল আমিন বাবু ও সোহরাব হোসেন সুজনের বিরুদ্ধে।

সরেজমিনে চরগাজী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গেলে দেখা যায় চিকিৎসক ছাড়াই চলছে ঢিলেঢালা ভাবে চরগাজী ইউনিয়নের ৪২,৮৯০ জন সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবার কার্যক্রম। চররমিজ ও চর বাদাম ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে দেখা যায় আরেক চিত্র।

রোগীরা জানান, দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা ক্লিনিক নিয়ে ব্যস্ত, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে আসার সময় নেই তাদের। মাঝেমধ্যে আসেন কিন্তু তা রোগীদের সেবা দিতে নয়, আসেন হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে।

সাহস২৪.কম/রিয়াজ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত