বন্যা: এবার ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই সিলেটবাসীর

প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২২, ১৬:১৯

সাহস ডেস্ক

সিলেটে ধীরগতিতে নামছে বন্যার পানি। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে মানুষ বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে। কিন্তু বাড়ি ফিরে তাদেরকে হতাশায় পড়তে হচ্ছে। কারোর ভিটা শূন্য। বসত ঘরের চিহ্ন পর্যন্ত নেই। খেতের ফসল আর খামারের মাছ তো আগেই ভেসে গেছে। গোয়ালের গরু এবং গুদামের ধান সবই বানের পানি কেড়ে নিয়েছে। বন্যার মাঝে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে জয়ী হয়ে বাড়ি ফিরে এখন তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু হয়েছে।

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের আবদুল কাদির। ছয় সদস্যের পরিবারের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন ছিল শ’খানেক হাঁস। ভয়াবহ বন্যায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠেছিলেন। পানি কমায় বাড়ি ফিরে দেখেন কাঁচা বসতঘরটি মাটিতে মিশে গেছে। হাঁস ভেসে গেছে। আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে আসা আবদুল কাদিরের মাথা গোঁজার ঠাঁই, আসবাবপত্র, আয়ের একমাত্র উৎস হাঁস খুঁইয়ে এখন সর্বহারা।

নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে গিয়ে বললেন, ‘এমন বেঁচে থাকার চেয়ে বন্যার পানিতে ডুবে মারা যাওয়াটাই ভালো ছিল। এখন তো না পারবো বাঁচতে, না পারবো মরতে। নতুন করে জীবন শুরু করারও কোনো উপায় নেই।’ আবদুল কাদিরের মতো সিলেটের হাজার হাজার মানুষের একই অবস্থা। এক মাসের ব্যবধানে দুই দফা বন্যায় এলাকার বেশিরভাগের বাড়িঘর হয়তো ভেসে গেছে, নয়তো ভেঙে পড়েছে। যেগুলো এখনো দাঁড়িয়ে আছে সেগুলোর অবস্থাও খুবই খারাপ। যে কোনো সময় ভেঙে পড়ে পারে।

সিলেটের হাওর এলাকার লোকজনের বেশিরভাগই কৃষির উপর নির্ভরশীল। কেউ কৃষিকাজ করে, কেউ মৎস্য চাষ আর কারো জীবন চলে গরু-ছাগল-হাঁস লালন পালন করে। কিন্তু এবার বন্যায় তাদের সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে। বন্যায় ভেসে গেছে বীজতলা ও সদ্য তোলা বোরো ধান। আকস্মিক বন্যার কারণে বেশিরভাগ কৃষক ঘরে সংরক্ষিত ধান নিরাপদে সরিয়ে নিতে পারেননি। ফলে বন্যার পানিতে ধান নষ্ট হয়ে গেছে। মাছ ও হাঁস ভেসে গেছে বন্যায় প্লাবিত হওয়ার পরই। বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে অনেকের গবাদি পশুও মারা গেছে।

সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বন্যায় সিলেট সিটি করপোরেশনের একাংশ এবং জেলার ১৩টি উপজেলা ও পাঁচ পৌরসভা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এতে চার লাখ ১৬ হাজার ৮১৯ পরিবারের ২১ লাখ ৮৭ হাজার ২৩২ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২২ হাজার ৪৫০ ঘরবাড়ি। ২৮ হাজার ৯৪৫ হেক্টর জমির ফসলহানি হয়েছে। তবে ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ এর দ্বিগুণ হবে বলে ধারণা সাধারণ মানুষের।

এখন পর্যন্ত বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ হিসেবে কেবলমাত্র খাবার ও নগদ টাকা সরকারিভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। রবিবার পর্যন্ত বরাদ্দকৃত ত্রাণ ও নগদ টাকার পুরোটাই বিতরণ হয়ে গেছে। তবে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি। সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান জানিয়েছেন, বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার পর পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে। সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত